এমনই ছবি দেখা যাচ্ছে শহরের পথে। বুধবার, গড়পারে। —নিজস্ব চিত্র।
মহানগরীর মুখ ঢেকেছে নিবার্চনের হোর্ডিং-ব্যানার-পোস্টারে। এবং তাতে পিছিয়ে নেই কোনও দলই।
শাসক দলের দাপটে বিরোধী দলগুলি হোর্ডিং-ব্যানার টাঙানোর জায়গা তেমন না পেলেও, একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই তা দখলে প্রতিযোগিতায় নেমেছে সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস। ফলে শহরের চেহারা অনেক জায়গাতেই কদর্য হয়েছে।
উত্তরের গড়পারে কলকাতা পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি হাইমাস্ট বাতিস্তম্ভের নীচের অংশটি ঘিরে যেভাবে সব ক’টি রাজনৈতিক দলের ব্যানার-পোস্টার লাগানোর লড়াই চলছে, তাতে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। এক প্রবীণের মন্তব্য, ‘‘এই ভাবে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করার অধিকার কোনও রাজনৈতিক দলের নেই। আইন করে এ সব বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’
কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সূর্য সেন স্ট্রিটের হদিস করা মুশকিল। লোহার দণ্ডের উপরে রাস্তার নাম ও দিক নির্দেশের বোর্ডের পাশেই ত্রিফলা। তাতেই ঝুলছে মুখ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থী স্বপ্না দাসের ছবি দেওয়া বিশাল হোর্ডিং। ঢাকা পড়েছে রাস্তার হদিস দেওয়া বোর্ড। এ বিষয়ে স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তেমন হলে হোর্ডিং সরিয়ে দেওয়া হবে।’’
এ বার পুরভোটে তৃণমূলের স্লোগান ‘দূষণমুক্ত সুন্দর শহর’। বুধবার বিভিন্ন দিকে ঘুরে দেখা গেল শহরের মুখ সব থেকে বেশি ঢেকেছে তৃণমূল কংগ্রেসের হোর্ডিং, ব্যানারেই। রাস্তার দু’পাশ দলীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়ার লড়াইয়েও এগিয়ে তারাই। পিছিয়ে নেই বিরোধী দলগুলিও। বাড়ির কার্নিশ যদি তৃণমূলের পতাকার দখলে থাকে, তবে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলিতে ঝুলছে বিজেপি কিংবা লাল পতাকা।
দৃশ্যদূষণে বাম, তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের এমন সহাবস্থান নজর কেড়েছে শহরবাসীর। বাদ যায়নি সরকারি ভবনও। বিধি ভেঙে শিয়ালদহে পূর্ব রেলের বি আর সিংহ হাসপাতালের গায়েও ঝুলছে শাসক দলের প্রার্থীর প্রচারের হোর্ডিং।
কলেজ স্ট্রিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মনোবীণা দত্তের প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে শহর নোংরা করার অধিকার কি কারও আছে?’’ তাঁর সহপাঠী প্রতীক চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘দৃশ্যদূষণ বোধ হয় দূষণের মধ্যে পড়ে না। না হলে যাঁরা শহরকে সুন্দর এবং দূষণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে নেমেছেন, তাঁরা কখনওই এ ভাবে শহর নোংরা করায় অগ্রণী ভূমিকা নিতেন না।’’
তৃণমল জিতলে যিনি মেয়র হবেন বলে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেভাগে ঘোষণা করে দিয়েছেন, সেই শোভন চট্যোপাধ্যায় অবশ্য এ সবে কোনও দোষ দেখছেন না। শোভনবাবু বলেন, ‘‘হোর্ডিং লাগিয়ে ভোটের প্রচার চালানোটাই পরম্পরা। এই সংস্কৃতিতেই আমরা বড় হয়েছি। সব দলই এ ভাবে প্রচার করে। ভোটের পরে তা খুলেও ফেলা হয়।’’ শোভন কিন্তু কলকাতার বর্তমান মেয়রও।
কী বলছেন বিরোধী দলের নেতারা?
সিপিএমের কলকাতা জেলার নেতা দীপঙ্কর দে বলেছেন, ‘‘কলকাতার বস্তিগুলির যা অবস্থা, তাতে মনে হয় না শাসক দল শহরকে সুন্দর ও দূষণমুক্ত রাখতে চায়।’’
কিন্তু রাস্তায় যথেচ্ছ ভাবে হোর্ডিং, ব্যানার, পোস্টার, পতাকা টাঙিয়ে শহর নোংরা করার লড়াইয়ে তো তাঁরাও আছেন?
দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘হোর্ডিং লাগিয়ে ভোটের প্রচার করলে শহরের সৌন্দর্যায়ন যে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তা জানি। তাই আমরা অল্পের মধ্য দিয়ে সেরেছি। শাসক দলের মতো গোটা শহরটা গ্রাস করিনি।’’
একই সুর অন্য দুই বিরোধী দল বিজেপি এবং কংগ্রেসের গলাতেও। বিজেপি-র মীনাদেবী পুরোহিত এবং কংগ্রেসের প্রকাশ উপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, তাঁরা যথাসম্ভব কমের মধ্যেই সেরেছেন। যা শুনে এক তৃণমূল নেতার টিপ্পনী, ‘‘আমরা জায়গা ছাড়িনি বলে ওরা এখন এ সব বলছে। যেখানে এক মিলিমিটারও জায়গা পাওয়া গিয়েছে, সেখানেই দেখবেন বিরোধীরা তার দখল নিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy