Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সাতটাতেও ‘স্বাভাবিক’, দশটায় এল মৃত্যুসংবাদ

যদিও হাসপাতাল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, গৌতমবাবুর চিকিৎসায় ত্রুটি ছিল না।

এক সন্তানের সঙ্গে গৌতমবাবু।

এক সন্তানের সঙ্গে গৌতমবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৯
Share: Save:

যমজ সন্তানের অন্নপ্রাশনের তারিখটা হয়ে যেতে চলেছে বাবার শ্রাদ্ধের দিন!

সোমবার মা উড়ালপুলে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন হাওড়ার সালকিয়ার গৌতম পাল (৩৪)। প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে আলিপুরের উ়ডল্যান্ডস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। মঙ্গলবার রাতে সেখানেই মৃত্যু। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই মৃত্যু। আলিপুর ও বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

যদিও হাসপাতাল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, গৌতমবাবুর চিকিৎসায় ত্রুটি ছিল না।

মৃতের পরিবারের দাবি, চিকিৎসা শুরুর আগেই হাসপাতাল বলেছিল, ১০ লক্ষ টাকা লাগবে। দ্রুত ৫০ হাজার দিতে বলা হয়। টাকা পেয়ে গৌতমবাবুকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর অস্ত্রোপচার করা হবে। বাঁ পায়ে এবং ডান হাতের চোট গুরুতর। সোমবার বেলা একটা নাগাদ অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচার সফল।

আরও পড়ুন: ‘আমার চেয়ে বড় মস্তান কেউ নেই’, শাসানি ইউনিট হেডের

বুধবার মৃতের মামাতো দাদা ভবতোষ দে জানান, মঙ্গলবারও গৌতমবাবু স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছিলেন। তাঁর দাবি, হাসপাতাল গৌতমবাবুর স্ত্রী মিতা পালকে জানিয়েছিল, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। দিন কয়েক পরে যমজ ছেলে-মেয়ের অন্নপ্রাশন। সে কথা শুনে মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের এক কর্তা নাকি আশ্বাস দিয়েছিলেন, তার আগেই বাড়ি ফিরবেন গৌতমবাবু। কিন্তু রাত আটটা নাগাদ তাঁর বাবা শিশুরঞ্জন পালকে ফোনে জানানো হয়, ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কিন্তু কেন হঠাৎ অবস্থার অবনতি ঘটল, সে বিষয়ে হাসপাতালের উত্তর মেলেনি বলে পরিবারের অভিযোগ।

মর্মান্তিক: প্রতিবাদ বাড়ির লোকেদের।

ফোন পেয়ে রাত ন’টা নাগাদ গৌতমবাবুর বাবা ও তাঁর কয়েক জন বন্ধু হাসপাতালে পৌঁছন। এ দিন গৌতমবাবুর বন্ধু অবিনাশকুমার সিংহ বলেন, ‘‘হাসপাতালে ঢুকতে গেলে বাধা দেন নিরাপত্তারক্ষী। বলা হয়, বাইরে অপেক্ষা করতে। প্রয়োজনে ডাকা হবে।’’ গৌতমবাবুর পরিবার-পরিজনদের দাবি, ঘণ্টাখানেক পরে জানানো হয়, রোগী মারা গিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে বারবার জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর মেলেনি। এর পরেই শিশুরঞ্জনবাবু থানায় যান।

অবিনাশের কথায়, ‘‘আলিপুর থানা জানায়, দুর্ঘটনা বেনিয়াপুকুর থানা এলাকায় হয়েছিল। তাই সেখানে প্রথমে অভিযোগ জানাতে হবে। পুলিশের পরামর্শে দুই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।’’

মৃতের পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি চাওয়া হলে হাসপাতাল জানায়, এক লক্ষ টাকা বিল মেটানোর পরে সব নথি মিলবে। শিশুরঞ্জনবাবু বারবার ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে হাসপাতাল শেষে জানায়, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়েছেন। জানানো হয়, বুধবার সকালে টাকা দেওয়ার পরে ছেলের দেহ এবং চিকিৎসার নথি নিয়ে যেতে পারবেন।

এ দিন গৌতমবাবুর বন্ধুদের জানানো হয়, নথি পরে দেওয়া হবে। সে কথা শুনেই তাঁরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কর্মীদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তাঁদের। বেলা পৌনে একটা নাগাদ ডেথ সার্টিফিকেট এবং চিকিৎসার নথি পরিজনদের দেওয়া হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেহে রক্ত সঞ্চালনে বাধা এবং সেপসিসের উল্লেখ রয়েছে।

উডল্যান্ডসের তরফে চিকিৎসক গৌতম সাহা জানান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়েছিল। তাঁর যুক্তি, অনেক সময়ে রোগীকে বাইরে থেকে দেখে সুস্থ মনে হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকে। গৌতমবাবুর ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও গৌতমবাবুকে বাঁচানো যায়নি।

ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE