Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দূষিত সরোবরে বিপন্ন প্রাণীরা

শুধু এই সব বিপদই নয়, রবীন্দ্র সরোবর পরিদর্শন করে জীববৈচিত্রের আরও অনেক বিপদই খুঁজে পেয়েছেন ওই কমিটির সদস্যরা। সরোবর এবং তার পরিবেশের স্বাস্থ্য ফেরাতে তাই দাওয়াইয়ের কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

অবহেলা: সরানো হয়নি এমন অনেক মরা গাছই। রবীন্দ্র সরোবরে। নিজস্ব চিত্র

অবহেলা: সরানো হয়নি এমন অনেক মরা গাছই। রবীন্দ্র সরোবরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

মহানগরের বিরাট সরোবর। তার জলে মাছ, কচ্ছপদের আবাস। কিন্তু সেই রবীন্দ্র সরোবরের জলে ক্ষারের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি!

রবীন্দ্র সরোবরে বহু গাছ (মূলত রেন ট্রি) সংক্রমণের শিকার। বহু গাছ মারাও গিয়েছে। অথচ সেই সব গাছের মৃতদেহ এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে সরোবর এলাকায়।

রবীন্দ্র সরোবর পরিদর্শন করে এমন ঘটনা জানতে পেরেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। তা আদালতে দেওয়া রিপোর্টেও উল্লেখ করেছে তারা। জলের স্বাভাবিকতা ফেরাতে অবিলম্বে সরোবরের ভারপ্রাপ্ত সংস্থা কেএমডিএ-কে পদক্ষেপের সুপারিশও করেছে ওই কমিটি। তারা এ-ও জানিয়েছে, মৃত গাছগুলি না সরালে সেগুলি ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠতে পারে।

শুধু এই সব বিপদই নয়, রবীন্দ্র সরোবর পরিদর্শন করে জীববৈচিত্রের আরও অনেক বিপদই খুঁজে পেয়েছেন ওই কমিটির সদস্যরা। সরোবর এবং তার পরিবেশের স্বাস্থ্য ফেরাতে তাই দাওয়াইয়ের কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

কমিটি সূত্রের খবর, গাছ, প্রাণী, জল এবং বায়ু, জীববৈচিত্র রক্ষায় সব ক’টি উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই গাছের দিকে তেমন নজর দেওয়া হচ্ছে না। অথচ রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে বহু পাখির জীবন এই গাছের উপরেই নির্ভরশীল। মৃত গাছ সরানোর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জাম, বাদামের মতো বিভিন্ন দেশি ফলের গাছ সরোবর চত্বরে লাগাতে হবে। তার ফলে পাখিদের খাবার ও বাসস্থান, দু’টোই সুরক্ষিত হবে। রবীন্দ্র সরোবরের জলাশয়ের মাঝে যে দ্বীপটি রয়েছে, সেগুলি জলচর পাখিদের বাসস্থান। সেই দ্বীপ যাতে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত করা হয় তার উপরেও জোর দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরোবরের আলোগুলি পাখিদের সমস্যা করছে। সে ক্ষেত্রে আলোকস্তম্ভের উপরে আচ্ছাদন করা যেতে পারে বলেও তাঁরা জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: রাজ্য ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু টেক মহীন্দ্রার

কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে, জলে ক্ষারের মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলের তলায় প্রচুর প্লাস্টিক, কাচের বোতলের মতো জঞ্জাল পড়ে রয়েছে। তা না সরালে সরোবরের কচ্ছপ, মাছেদের ক্ষতি হতে পারে। তাই অবিলম্বে সেগুলি সরাতে হবে। তবে সরোবরে ড্রেজিং করা চলবে না বলেই কমিটি জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ড্রেজিং করলে জলাশয়ে বসবাসকারী মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি হবে। জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য রবীন্দ্র সরোবরে প্রজাপতি পার্ক করা যেতে পারে বলেও তাঁরা জানাচ্ছেন।

জলের দূষণ ঠেকাতে সরোবরে বর্জ্য ফেলা আটকানো উচিত বলেও জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, কোনও মতেই যেন নিকাশি জল সরোবরে না পড়ে। ক্লাবগুলির নিকাশি যেন জলে না মেশে তাও দেখতে হবে। এলাকার বস্তিবাসীদের সরোবরের জল যাতে ব্যবহার করতে না দেওয়া হয়, তা-ও জানানো হয়েছে। জলে প্লাস্টিক ফেলা আটকাতে সরোবর চত্বরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে। বুধবার এই মামলার শুনানিতে কেএম়ডিএ-র কৌঁসুলি পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে জানান, কেউ যাতে প্লাস্টিক নিয়ে ঢুকতে না পারে তার জন্য গেটে নজরদারি করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE