Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

জ্বরের রোগী স্রোতের মতো, খাবি খাচ্ছে আইডি

কী ভাবে এত রোগীকে পরিষেবা দেওয়া যাবে, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, এত রোগী সামলানোর মতো পরিকাঠামোই তাঁদের নেই। বহু বার তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়েছেন, লোকাভাবে রোগীদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা অবহেলিত হচ্ছেন। যে কোনও দিন এর জন্য ডাক্তারদের উপরে হামলাও হতে পারে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

জ্বর, ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর স্রোত সামলাতেই এখন থরহরি কম্প আইডি, রাজ্যে সংক্রামক রোগের একমাত্র চিহ্নিত ‘রেফারাল’ হাসপাতাল।

কী ভাবে এত রোগীকে পরিষেবা দেওয়া যাবে, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, এত রোগী সামলানোর মতো পরিকাঠামোই তাঁদের নেই। বহু বার তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়েছেন, লোকাভাবে রোগীদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা অবহেলিত হচ্ছেন। যে কোনও দিন এর জন্য ডাক্তারদের উপরে হামলাও হতে পারে। কিন্তু অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর নির্লিপ্ত।

শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, আইডি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে এই মুহূর্তে ভর্তি রয়েছেন ২২৯ জন। এঁদের এখনও রক্ত পরীক্ষা হয়নি। ডেঙ্গি নিয়ে ভর্তি ৮৮ জন। ম্যালেরিয়া রোগী সাত জন। মশাবাহিত এই সব রোগ ছাড়াও আইডি-তে ডায়রিয়া, রেবিস, পক্স, ডিপথেরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের রোগীও রয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন মোট রোগীর সংখ্যা ৪৯২। আর তাঁদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রয়েছেন মোটে ১৩ জন সিনিয়র চিকিৎসক ও ১০ জন হাউজস্টাফ।

আইডি-র অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্রের কথায়, ‘‘১৩ জন ডাক্তারের পক্ষে কি কখনও ৫০০ রোগীকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব? কয়েক দিনের মধ্যেই পুজো। তখন অনেকে ছুটিও নেবেন। এ দিকে, জ্বরের রোগী বেড়েই চলেছে। কী ভাবে সামলাব, জানি না। যে কোনও দিন রোগী-পক্ষের রোষ এসে পড়বে আমাদের উপরে।’’

গত বছর ২৯ অগস্ট স্বাস্থ্য দফতরের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজাকে আইডি কর্তৃপক্ষ একটি চিঠি দিয়ে তাঁদের লোকাভাবের বিস্তারিত বিবরণ দেন। আইডি-তে চিকিৎসক ঘাটতির হার ৭৪ শতাংশ, নার্সের ঘাটতি ৫৮ শতাংশ। সেই চিঠিতে আইডি কর্তৃপক্ষ লিখেছিলেন, গোটা রাজ্য থেকে আইডি-তে রোগীদের রেফার করা হয়। যদি চিকিৎসক ও নার্স বাড়ানো না হয়, তা হলে পরিষেবা দেওয়া যাবে না এবং জনস্বার্থ রক্ষিত হবে না।

লোকাভাবের কথা মাথায় রেখে চলতি বছরের ১১ অগস্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা একটি নির্দেশিকা জারি করে জানান, আইডি-তে জ্বর এবং ডায়রিয়ার রোগীরা যাতে দীর্ঘ সময় ধরে বিনা চিকিৎসায় পড়ে না থাকেন, তার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর এবং এসএসকেএম থেকে এক জন করে পিজিটি বা আরএমও-কে প্রতি শিফট‌ে আইডি-তে পাঠাতে হবে। এবং বিষয়টিকে ‘জরুরি’ হিসেবে দেখতে হবে। উচ্ছ্বলবাবুর কথায়, ‘‘নির্দেশ শুধু খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে। প্রথম কিছু দিন আরজিকর কয়েক জনকে পাঠিয়েছিল। তার পরে বন্ধ। বাকি মেডিক্যাল কলেজ সেটুকুও করেনি। প্রত্যেকে জ্বরের রোগী পেলেই আমাদের কাছে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ, ডাক্তার পাঠানোর বেলায় কেউ নেই।’’ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বিষয়টি দেখছি। কেন মেডিক্যাল কলেজগুলি লোক পাঠাচ্ছে না, আমরা জানতে চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Malaria fever Mosquitoes ID
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE