Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কৃত্রিম উপায়ে ময়ালের ৫৪টি বাচ্চা আলিপুরে

চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, আলিপুরে এই প্রথম রেটিকুলেটেড ও বার্মিজ পাইথনের প্রজনন হল। গত বছর ‘ইন্ডিয়ান রক পাইথন’-এর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চার জন্ম দেওয়া হয়েছিল।

কিলবিল: সদ্যোজাত পাইথন। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। নিজস্ব চিত্র

কিলবিল: সদ্যোজাত পাইথন। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

ডিম পাড়ার পরে মায়েরা ফিরে তাকায়নি। কিন্তু তাতে হাল ছা়ড়েননি ওঁরা। সেই ‘অনাথ’ ডিম থেকেই কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্মীরা। এক-আধটা নয়, চুয়ান্নটি ময়ালের!

চি়ড়িয়াখানার ঘেরাটোপে কাঠের বাক্সে এখন কিলবিল করছে চুয়ান্নটি ময়ালের বাচ্চা। চেরা জিভ বের করে মাথা তুলে তাকাচ্ছে কৌতূহলী মানুষদের দিকে। এর মধ্যে কুড়িটি বিশ্বের সব থেকে লম্বা সাপ বলে চিহ্নিত ‘রেটিকুলেটেড পাইথন’-এর। বাকি ৩৪টি ‘বার্মিজ পাইথন’।

চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, আলিপুরে এই প্রথম রেটিকুলেটেড ও বার্মিজ পাইথনের প্রজনন হল। গত বছর ‘ইন্ডিয়ান রক পাইথন’-এর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চার জন্ম দেওয়া হয়েছিল।

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, ভারতীয় বন্যপ্রাণ আইনের প্রথম তফসিলে থাকা তিনটি প্রজাতির ময়ালের (রেটিকুলেটেড, বার্মিজ এবং রক) ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা জন্ম দেওয়া আলিপুরের মুকুটে নতুন পালক যেমন জু়ড়ল, তেমনই চিড়িয়াখানার ‘সম্পদ’ হিসেবেও কাজে লাগতে পারে এরা। কিন্তু এতগুলি সাপের ছানা আলিপুরে রাখা যাবে না। তা হলে কী করা হবে?

স্টেট জ্যু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব বলছেন, ‘‘এই সাপগুলিকে বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় পাঠানো হবে। বিনিময়ে সেখান থেকে কোনও প্রাণী আলিপুরে নিয়ে আসা হতে পারে।’’

শুধু সাপ নয়, এই দফায় চিড়িয়াখানায় জন্মেছে দুই প্রজাতির গোসাপের (ইয়েলো মনিটর লি়জার্ড এবং ওয়াটার মনিটর লিজার্ড) বাচ্চাও। চিড়িয়াখানার সরীসৃপ আবাসে নিজেদের খুপরিতে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে তারা। ওয়াটার মনিটর লিজার্ডের ছানাগুলি তো ফেলে রাখা গাছের গুঁড়িতে খেলে বেড়াচ্ছে! গোসাপের ক্ষেত্রেও আলিপুরে এই প্রথম প্রজনন ঘটল।

কী ভাবে জন্মাল এই সাপের ছা়নারা? আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, মার্চের শেষে রেটিকুলেটেড পাইথন ডিম পেড়েছিল। কিন্তু মা ময়ালটি সে ভাবে তা দিচ্ছিল না। তাই ২ এপ্রিল ডিমগুলি সংগ্রহ করা হয়। কৃত্রিম ভাবে ডিম ফুটোনোর জন্য সরীসৃপ-বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী এবং তিন জন প্রাণীবিজ্ঞানী তানিয়া চট্টোপাধ্যায়, জয়িতা দত্ত হাজরা এবং ঋক চক্রবর্তীকে নিয়ে দল গঠন করা হয়। দলে রাখা হয়েছিল সাপের ঘরের তিন কিপার প্রবীর দে, উমেশ রাম ও সোমনাথ মাঝিকেও। এপ্রিলের গোড়ায় বার্মিজ পাইথন ডিম পাড়লে সেগুলিও সরিয়ে আনা হয়। এর পরে ইনকিউবেটরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় সেগুলি রাখা হয়েছিল। ৩১ মে প্রথম বার্মিজ পাইথনের ডিম ফুটে বাচ্চা জন্মায়। ৩ জুন রেটিকুলেটেড পাইথনের প্রথম ফোটে।

তবে গোসাপের ক্ষেত্রে এতটা পরিশ্রম হয়নি চিড়িয়াখানার কর্মী-গবেষকদের। সূত্রের খবর, নিজের ঘরে মাটি খুঁড়ে সাতটি ডিম পেড়েছিল ইয়েলো মনিটর বা স্বর্ণগোধিকাটি। তার উপরে নজর রেখেছিলেন কিপারেরা। ১৬ মে পাঁচটি ডিম ফুটে ছানা বেরোয়। ওয়াটার মনিটর লিজার্ডের ডিম ফুটে এপ্রিল মাসে ছানা জন্মেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE