Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বার ‘আত্মহত্যা’, অভিযুক্ত শ্বশুরবাড়ি

মৃতার পরিবারের অভিযোগ, অর্পিতাকে ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না শ্বশুরবাড়িতে। অনেক বার শিবানীদেবীকে সে কথা জানিয়েও ছিলেন অর্পিতা। কাঁকুড়গাছির একটি নার্সিংহোমের নার্স ছিলেন অর্পিতা।

অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। (ডান দিকে) শোকার্ত ভাই নীলাদিত্য।

অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। (ডান দিকে) শোকার্ত ভাই নীলাদিত্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৯
Share: Save:

সকাল থেকে কয়েক বার ফোনে কথা হয়েছিল। কিন্তু সন্ধে থেকে বারবার ফোন করলেও পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি মা। গভীর রাত পর্যন্ত মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এবং জামাইকে একাধিক বার ফোন করেও মেয়ের খবর না পাওয়ায় রাত দেড়টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে যান তিনি। তখন জানতে পারেন, মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। এই ঘটনায় মৃতার স্বামী শঙ্খদীপ চট্টোপাধ্যায়কে রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বড়তলা থানা এলাকার হরীতকী বাগান লেনের একটি বাড়ি থেকে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় (২৩) নামে ওই বধূর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। দোতলার ঘরের খাটে গলায় ওড়না জড়ানো অবস্থায় অর্পিতাকে পাওয়া যায়। দিন কয়েক আগেই দমদম এবং মধ্যমগ্রামে পরপর বধূ-মৃত্যুর ঘটনায় শিউরে উঠেছিলেন শহরবাসী। সে ক্ষেত্রেও অভিযোগের আঙুল উঠেছিল শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে।

শুক্রবার অর্পিতার মা শিবানী বেরা তাঁর জামাই শঙ্খদীপ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই শঙ্খদীপকে ধরা হয়। কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা শিবানীদেবী বলেন, ‘‘ওঁরা আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও আমার সন্দেহ হচ্ছে। অর্পিতা যদি গলায় ওড়না দিয়ে আত্মহত্যাই করবে, তা হলে তো পুলিশের দেহ উদ্ধার করার কথা। শ্বশুরবা়ড়ির লোকেরা কেন দেহ নামালেন?’’ তাঁর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে বারবার জামাইকে ফোন করলেও তিনি স্পষ্ট কোনও জবাব দেননি। কখনও বলেছেন তিনি মানিকতলায় আছেন, কখনও বলেছেন বা়ড়িতে। কিন্তু মেয়ে কোথায় জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়েছেন।

অর্পিতার ভাই নীলাদিত্য বেরা জানান, জানুয়ারি মাসে অর্পিতার বিয়ে হয়েছিল। তার পরেই নানা বিষয়ে মতভেদ শুরু হয় অর্পিতা ও শঙ্খদীপের মধ্যে।

আরও পড়ুন:উপর নীচে জলের চাপে রাজ্যে বাড়ছে বন্যা

মৃতার পরিবারের অভিযোগ, অর্পিতাকে ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না শ্বশুরবাড়িতে। অনেক বার শিবানীদেবীকে সে কথা জানিয়েও ছিলেন অর্পিতা। কাঁকুড়গাছির একটি নার্সিংহোমের নার্স ছিলেন অর্পিতা। কাজে যাওয়ার সময়ে বেশির ভাগ দিন মায়ের কাছ থেকে খাবার খেয়ে যেতেন। অধিকাংশ দিন শ্বশুরবাড়িতেই তাঁর খাবার পাঠিয়ে দিতেন শিবানীদেবী। অর্পিতার কাকা অজয় বেরা বলেন, ‘‘আমার দাদা অটো চালান। তবু যতটা সম্ভব আমরা জিনিস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অর্পিতা প্রায়ই বৌদিকে বলত, নানা সমস্যা হচ্ছে। আমরা ভাবতাম, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে, সেটা বুঝতে পারিনি।’’

এ দিন অর্পিতার শ্বশুরবাড়ি লোকেরা জানান, বেসরকারি সংস্থায় শঙ্খদীপ চাকরি করতেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর চাকরি চলে যায়। মাসখানেক আগে নিউ মার্কেট চত্বরের একটি হোটেলে চাকরি পেয়েছিলেন। নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে বা়ড়ি ফিরতে একটু দেরি হতো শঙ্খদীপের। অর্পিতার শাশুড়ি শিপ্রাদেবী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর দাবি, খেতে না দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। শ্বশুরবাড়ির রান্না পছন্দ হতো না বলেই মায়ের কাছে গিয়ে খেতেন অর্পিতা। শিপ্রাদেবীর কথায়, ‘‘কাজের জন্য আমায় চুঁচুড়া যেতে হয়েছিল। আমি মাছ খাই না। সকালে ওর জন্য মাছ কিনে এনেছিলাম। ওকে রান্না করতে বলায় বলেছিল, মাছ ফেলে দিতে। আমি কিছু বলিনি। রাত বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরতেই ছোট ছেলে জানায়, অর্পিতা কাজে যায়নি। ওকে ডাকলেও সাড়া পাইনি। ওর খুব মেজাজ ছিল। সাধ্যমতো চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করতাম।’’

শ্বশুরবাড়ির দাবি, শঙ্খদীপ বাড়িতে ফিরে দেখেন, ঘরের দরজা বন্ধ। শঙ্খদীপের দাবি, তাঁর ভাই সুদীপ জানলা দিয়ে অর্পিতার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। জানলা ভেঙে ঘরে ঢুকে সুদীপ দরজার ছিটকিনি খুলে দেন। তার পরে শঙ্খদীপ এবং শিপ্রাদেবী ঘরে ঢুকে দেখেন, সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অর্পিতাকে। শঙ্খদীপ বঁটি দিয়ে ওড়নার কিছুটা অংশ কেটে অর্পিতাকে নামান। তার পরে পুলিশকে বিষয়টি জানান।

এ দিন শঙ্খদীপ বলেন, ‘‘বিয়ের আগে সাত বছরের সম্পর্ক। দু’জনেই অনেক দিন টাকা জমিয়ে বিয়ে করেছিলাম। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলা হলেও বড় সমস্যা ছিল না। অর্পিতাকে ওই অবস্থায় দেখে মাথা কাজ করছিল না। পুলিশকে আগে জানানো দরকার, তা তখন মাথায় আসেনি। মনে হয়েছে, আগে ওকে নামানো দরকার। হয়তো সেটা ভুল।’’

পুলিশ জানিয়েছে, দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE