Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালের বদ্ধ ঘর থেকেও ছড়াচ্ছে সংক্রমণ

এক ধরনের সংক্রমণের আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন শহরের চিকিৎসকেরা।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

এক ধরনের সংক্রমণের আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন শহরের চিকিৎসকেরা।

রোগ নির্মূল হওয়ার কথা যেখানে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই হাসপাতাল বা নার্সিংহোমই ওই সংক্রমণের আঁতুড়ঘর। শহরের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে একটি রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আর একটি সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য রোগী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সেটাই ‘নোসোকোমিয়াল ইনফেকশন’।

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতালের আইসিইফ, আইসিইউ বা আইটিইউ এক-একটা বদ্ধ কামরা। কাচের দরজা-জানলা সব বন্ধ থাকে। রোদ কিংবা হাওয়া, কিছুই সেই কাচ ভেদ করে ভিতরে ঢুকতে পারে না। সর্বক্ষণ চলছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। এই পরিবেশই জন্ম দিচ্ছে এক ধরনের জীবাণুর। যা সহজেই অসুস্থ মানুষকে আক্রমণ করছে। তার ফলে রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে ক্রমাগত।

শুধু রোগীরাই নন, বদ্ধ ঘরে উৎপন্ন ওই জীবাণু হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীদের জন্যও স্বাস্থ্য-সঙ্কট ডেকে আনতে পারে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন। এক জীবাণু-বিশেষজ্ঞের কথায়, সূর্যালোক প্রবেশ করতে না পারায় জীবাণুর বংশবৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুত। তার থেকেও ভয়ের ব্যাপার, ওই সব জীবাণু প্রতিনিয়ত নিজেদের চরিত্র বদল করে ফেলছে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলির থেকে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে জীবাণু (মাল্টিপল অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স বা এমডিআর)।

হাসপাতালের আইসিসিইউ-সহ একাধিক বিভাগে এই সংক্রমক জীবাণুর সক্রিয়তার জেরে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এক জন রোগী হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পরে আর এক জনকে ওই শয্যায় ভর্তির আগে অনেক সময়ে ঠিক ভাবে ঘর এবং শয্যা পরিষ্কার করা হয় না। সেই কারণেই অনেকে একটা রোগমুক্তির জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আর একটি জীবাণুঘটিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বিশেষত দুর্ঘটনায় আহত রোগী কিংবা অন্য কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে যে সব রোগীকে ভর্তি করতে হয়, তাঁদের কোনও সংক্রামক ব্যাধি রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে নেওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি, রোগীর ব্যবহার করা জামাকাপড় এবং জিনিস কতটা পরিষ্কার করা হয়, সে দিকেও নজর দেওয়া জরুরি।

কী ভাবে চিকিৎসকেরা মোকাবিলা করবেন এই পরিস্থিতির? পরজীবী রোগ-বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য-সচেতনতা না বাড়ালে এই পরিস্থিতির বদল সম্ভব নয়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নীতি বদল করা জরুরি। ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে চিকিৎসকদের আরও ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সংক্রমণ রুখতে আইসিসিইউ-তে ব্যবহার করা ওষুধ নিয়ে আরও গবেষণা জরুরি। তার পাশাপাশি, হাসপাতালের কর্মীরা ঠিকমতো পরিষ্কার করছেন কি না, সে দিকে নজর রাখতে হবে। রোগীদের খাবার তৈরির জায়গার উপরেও নজরদারি থাকা উচিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি, হাসপাতালে যে সব রোগী ভর্তি হন, তাঁদের কী কী সংক্রামক ব্যাধি রয়েছে, সে বিষয়ে চিকিৎসকের ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। সম্প্রতি এই নিয়ে একটি কর্মশালারও আয়োজন করেছিলেন শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মেডিকা হাসপাতালের আইসিসিইউ ইন-চার্জ অরিন্দম কর বলেন, ‘‘পৃথিবী জুড়েই এখন হাসপাতালগুলি এই সমস্যায় জেরবার। সংক্রমণ রুখতে এলওএস, অর্থাৎ রোগীর হাসপাতালে থাকার দিন কমানো দরকার। অর্থাৎ, কী ভাবে দ্রুত রোগীকে সুস্থ করা যায়, সেই বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কারণ, যত দ্রুত হাসপাতাল থেকে রোগী ছাড়া পাবেন, তাঁর সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Infection Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE