Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সিএমআরআই

১৮ হাজারের ওষুধ, প্রশ্নের মুখে বিল নামল পাঁচ হাজারে

আইসিইউ কিংবা আইটিইউ নয়। রোগী ছিলেন দুই শয্যাবিশিষ্ট ঘরে। সেখানে মাত্র ১০ ঘণ্টায় তাঁর ওষুধের বিল দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৮৬৫ টাকা। এক রাতে এত ওষুধ ঠিক কী কারণে লাগল, রোগীর বাড়ির লোক সেই ব্যাখ্যা চাইলে তড়িঘড়ি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ ১২ হাজার ৬২৩ টাকার ওষুধ রিফান্ড করে দেন। ঘটনাস্থল সিএমআরআই হাসপাতাল।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

আইসিইউ কিংবা আইটিইউ নয়। রোগী ছিলেন দুই শয্যাবিশিষ্ট ঘরে। সেখানে মাত্র ১০ ঘণ্টায় তাঁর ওষুধের বিল দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৮৬৫ টাকা। এক রাতে এত ওষুধ ঠিক কী কারণে লাগল, রোগীর বাড়ির লোক সেই ব্যাখ্যা চাইলে তড়িঘড়ি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ ১২ হাজার ৬২৩ টাকার ওষুধ রিফান্ড করে দেন। ঘটনাস্থল সিএমআরআই হাসপাতাল। মাত্র দিন কয়েক আগে চিকিৎসার অবহেলায় এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে হাসপাতালে প্রবল ভাঙচুর, এমনকী পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

রোগীর বাড়ির লোকেরা শুক্রবার এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ভবনে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, সরকারি তরফে ‘অন্যায়’ বিল নিয়ে এত নাড়াচাড়ার পরেও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ এমনটা করলেন কী ভাবে? তা হলে কি সরকারি হুঁশিয়ারিকে স্রেফ কথার কথা হিসেবেই মনে করছে একাধিক হাসপাতাল?

বুধবার টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের ডেকে অন্যায় ভাবে বিল বাড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন, ঘটনাচক্রে ঠিক তখনই ওই রোগীর কাছ থেকে ওষুধ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করার চেষ্টার অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সিএমআরআই হাসপাতাল। হাসপাতালের রিসেপশনে হাজির একাধিক রোগীর বাড়ির লোকেরা সেই প্রসঙ্গ তুলে চিৎকার করতে থাকেন। ফের উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরই মধ্যে তড়িঘড়ি বিল বদলানো হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ হন ওই রোগীর পরিবার। তাঁদের প্রশ্ন, এ ভাবেই কি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে বারবার ঠকে যেতে হবে রোগীদের? যদি তাঁরা বিলকে চ্যালেঞ্জ না করতেন, তা হলে তো অন্যায় ভাবে বাড়তি টাকাই আদায় করা হত তাঁদের কাছ থেকে। বেসরকারি হাসপাতালগুলি কি তা হলে এতটাই বেপরোয়া যে, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকেও তারা গ্রাহ্য করছে না?

আরও পড়ুন:

খোঁজ শুরু হতেই মিলিয়ে গেল বাড়তি টাকার দাবি

দিন কয়েক আগেই সিএমআরআই হাসপাতালে এক রোগিণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রবল ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, ইমার্জেন্সি-সহ হাসপাতালের একাধিক বিভাগ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ছিল, দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় গুরুতর অসুস্থ ওই তরুণীর চিকিৎসাই শুরু করেনি হাসপাতাল। তার জেরেই মারা যান তিনি। হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের ঘটনা যে সমর্থনযোগ্য নয়, সব মহল তা স্বীকার করে নিলেও টাকা না মেটানোয় চিকিৎসা শুরু না করার অভিযোগটিও ধিক্কৃত হয়। সিএমআরআই-এর এক প্রবীণ চিকিৎসক বলেন, ‘‘রোগীদের সব চেয়ে বেশি রোষ এবং অবিশ্বাসের সরাসরি শিকার হই আমরা। অথচ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের কিছু করার থাকে না। সে দিনের ঘটনা এবং তার জেরে সরকারি তৎপরতা শুরু হতে ভেবেছিলাম, পরিস্থিতি কিছুটা বদলাবে। কিন্তু ফের বিল নিয়ে এমন অভিযোগ ওঠায় হতাশ লাগছে।’’

কোচবিহারের মাথাভাঙার বাসিন্দা, ৩৮ বছরের রাহুল দাস গত মাসের শেষে বাইপাস সার্জারি করিয়েছিলেন বি এম বিড়লা হার্ট ইনস্টিটিউটে। দু’লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে দিন কয়েক কলকাতাতেই ছিলেন। এক সপ্তাহ পরে হাসপাতালে যখন চেক-আপের জন্য যান, তখন চিকিৎসকেরা তাঁকে মাথাভাঙায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন। যাওয়ার আগে হাসপাতালে রক্তের একটি পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়। রাহুলবাবুর পরিবারের দাবি, সেই রাতে তাঁরা যখন ট্রেনে উঠছিলেন, তখন হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয়, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল নয়। অবিলম্বে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এর পরে ১২ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। রক্তে শ্বেতকণিকার হার দ্রুত কমছিল। কিন্তু সমস্যার উৎস চিহ্নিত করা যায়নি। এ দিকে দু’লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা বিল হয়। রাহুলবাবুর দাদা কৌশিক দাস জানান, বিএম বিড়লা কর্তৃপক্ষ তাঁদের বলেন, ওখানে মেডিসিনের ডাক্তার নেই। তাই সিএমআরআই-তে স্থানান্তরিত করা দরকার। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে সিএমআরআই-তে স্থানান্তরিত করা হয় রাহুলকে। সেখানে এক রাতে বিল হয় ২১ হাজার ৮৩৬ টাকা। এ ছাড়া ভর্তির সময়ে আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আইসিইউ বা আইটিইউ-তে রাখা হয়নি। তা-ও এই বিপুল বিল! এর মধ্যে ১৭,৮৬৫ টাকা ওষুধের। কী ভাবে এক রাতে এত টাকার ওষুধ ব্যবহার হতে পারে এক জন রোগীর ক্ষেত্রে? প্রশ্ন তুলি আমরা। আর তার পরেই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, ১২ হাজার ৬২৩ টাকার ওষুধ ব্যবহারই হয়নি। ওটা ‘রিফান্ড’ হবে। থার্মোমিটার-ও রিফান্ড হয়েছে।’’

সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, সব ওষুধ কেনা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী বিল হয়। তার পরে বন্ডে সই করে রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে যে ওষুধগুলি লাগেনি, তা তাঁরা নিজেরাই রিফান্ড করেন। এ ক্ষেত্রেও তাই হত।

কিন্তু তা-ই যদি হবে, তা হলে তাঁরা কেন রোগীর ডিসচার্জের সময়ে পুরো টাকাটাই দাবি করেছিলেন? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Investigation Hospital Medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE