Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডিমের দাম বেড়ে স্বাদ জোলো মুরগির পদের

জিঙ্গলটা এখনও মুখে মুখে ফেরে। প্রায় তিন দশক আগে তৈরি, তবু আবেদন যায়নি আজও। ‘সানডে হো ইয়া মানডে, রোজ খাও আনডে।’ ডিমের প্রচারে এক নামী ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ‘ন্যাশনাল এগ কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র তৈরি করানো সেই জিঙ্গলের মজা এখন যেন কোথাও টাল খাচ্ছে। ডিম যে মহার্ঘ!

জিভে-জল: দামের ধাক্কায় কি এই দৃশ্য বিরল হবে? ছবি: রণজিৎ নন্দী

জিভে-জল: দামের ধাক্কায় কি এই দৃশ্য বিরল হবে? ছবি: রণজিৎ নন্দী

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১১
Share: Save:

জিঙ্গলটা এখনও মুখে মুখে ফেরে। প্রায় তিন দশক আগে তৈরি, তবু আবেদন যায়নি আজও। ‘সানডে হো ইয়া মানডে, রোজ খাও আনডে।’ ডিমের প্রচারে এক নামী ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ‘ন্যাশনাল এগ কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র তৈরি করানো সেই জিঙ্গলের মজা এখন যেন কোথাও টাল খাচ্ছে। ডিম যে মহার্ঘ!

এতটাই যে, শহরের অফিসপাড়ায় ফুটপাথের খাবারের স্বাদেও হেরফের ঘটিয়ে দিচ্ছে। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে যুগল মাহাতোর চিনা খাবারের স্টলের নিয়মিত খদ্দের ‘দিদিমণি’রা অসন্তুষ্ট। চিকেনের সেই স্বাদ পাচ্ছেন না। কারণটা মুরগি নয়, মুরগির ডিম। যুগল জানান, চিলি চিকেনের পকৌড়া করতে এক কেজি চিকেন সাধারণত সাতটি ডিম দিয়ে মেখে ভাজা হয়। ‘‘এখন সাতটার জায়গায় দু’টোর বেশি ডিম দিতে পারছি না। স্বাদ হবে কী করে?’’ বলছেন যুগল।

৩০ বছর ধরে ওই জায়গায় খাবারের স্টল দেওয়া দোকানির বক্তব্য, এক পিস চিলি চিকেনের দাম সাত টাকা। এক টাকা বাড়ালে অনেকে খাবেন না। এগ চাউমিন এক টাকা বাড়িয়ে ২৭ টাকা করাতেই নিয়মিত খদ্দেরদের একাংশ মুখ ফিরিয়েছেন। রোজ গড়ে ওই স্টলে ৯০টি ডিম ভাঙতে হত। শুক্রবার লেগেছে ৬৫টি, শনিবার ৬০টি। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আগে একটা ডিম ৪ টাকা ২০ পয়সা পড়ত। এখন ৬ টাকা ২০ পয়সা। অথচ, ভেজ চাউমিন ২০ টাকা আর এগ চাউমিন ২৭ টাকায় বিক্রি করছি। মানে একটা ডিম বিক্রি করছি সাত টাকায়। ৮০ পয়সা লাভ রেখে।’’

যুগলের দু’টি স্টল পরেই অশোক ঘোষের ডিম-পাউরুটির দোকান। অফিসপাড়ায় ডিম-টোস্টের বিক্রি প্রচুর। দু’পিস পাউরুটির মধ্যে সাঁটা ডিমভাজা। যার দাম অশোকবাবুর দোকানে ছিল ১৫ টাকা। চার দিন আগে তা বেড়ে হয় ১৬ টাকা। শুক্রবার থেকে ১৭। ওমলেট ও পোচ আট টাকা থেকে ১০ টাকা হয়েছে। এক-একটি সেদ্ধ ডিম এক টাকা বেড়ে আট টাকা। চাঁদনি চকের ফুটপাথে বাপি সামন্তের স্টলেও একই দাম। ৪৫ বছরের পুরনো দোকানি, বাগনানের অশোকবাবু জানান, পাইকারি দরে এক-একটি ডিম এখন কিনছেন সাড়ে ৬ টাকায়। আগে যেখানে কমবেশি ১০০টি ডিম বিক্রি হত, দু’-তিন দিন ধরে সেটা ৮০ পেরোচ্ছে না।

‘ন্যাশনাল এগ কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র হিসেবে, কলকাতার চাহিদা মেটাতে দিনে ৫৫ লক্ষ ডিমের প্রয়োজন। যার একটা বড় অংশই লাগে অফিসপাড়ায়। সেই সংখ্যা কিছুটা ঘেঁটে দিয়েছে ঊর্ধ্বমুখী দাম।

রোলের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বিক্রি এগ রোলের। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এক খাবারের দোকানের অন্যতম কর্ণধার দীপঙ্কর নন্দী জানান, এ বার এগরোলের দাম ২৩ থেকে ২৫ টাকা না করলে সামাল দেওয়া মুশকিল। যে ডিম ৪ টাকা ৮০ পয়সায় কিনতেন, সেটাই এখন কিনছেন ৬ টাকা ২৫ পয়সায়। ওই তল্লাটেরই এক রেস্তোরাঁ-কাম-স্ন্যাক্স বারে রোজ গড়ে ২০০টির বেশি এগরোল বিক্রি হয়। ম্যানেজার পবিত্র হালদারের কথায়, ‘‘শীতে লোকে ডিম বেশি খায়। তা ছাড়া, এই সময়ে কেক তৈরির জন্যও ডিমের চাহিদা বাড়ে। অন্যান্য বার পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বড়জোর ৪০ পয়সা বাড়ে। এ বার বেশি বেড়েছে।’’ পবিত্রবাবু জানান, এগরোলের দাম তাঁরা বাড়াচ্ছেন না।

একই অবস্থান লেক মার্কেট লাগোয়া জনক রোডে চা, ওমলেট, কবরেজি ও কাটলেটের জন্য নাম করা এক দোকানের। কর্তৃপক্ষের তরফে সত্যসুন্দর দত্ত জানান, বছরে কেবল এক বার, দুর্গাপুজোর বোধনের দিন তাঁরা দাম বাড়ান।

এ বছর যেমন সিঙ্গল ওমলেট এক টাকা বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা, ডবল ডিমের ওমলেট দু’টাকা বেড়ে ২৮ টাকা। ফিশ, চিকেন, মটন— এই তিন রকম কবরেজি কাটলেটই এ বছর পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। আর চিংড়ির কবরেজি কাটলেটও পাঁচ টাকা বেড়়ে হয়েছে ৬০ টাকা। সত্যসুন্দরবাবুর কথায়, ‘‘খাবারের দাম হুট করে বাড়ানো এই দোকানের পরম্পরায় নেই। দাম ফের বাড়বে আগামী বছর ষষ্ঠীতে। তাতে ক্ষতি হলেও কিছু করার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Restaurant Eggs Food Items
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE