Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাঙ্কের লকার থেকে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না উধাও

মেয়ের বিয়ে সামনেই। সে কারণেই ব্যাঙ্কের লকারে সযত্নে সংরক্ষিত গয়না তুলে আনতে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন শ্যামবাজারের বাসিন্দা জ্যোতির্ময় বসু। আর সেখানেই যে এমন ধাক্কা অপেক্ষা করছিল স্বপ্নেও বোধহয় ভাবতে পারেননি তিনি। ব্যাঙ্কে এসে জানতে পারলেন তাঁর লকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য কাউকে।

মধুরিমা দত্ত
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:০৭
Share: Save:

মেয়ের বিয়ে সামনেই। সে কারণেই ব্যাঙ্কের লকারে সযত্নে সংরক্ষিত গয়না তুলে আনতে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন শ্যামবাজারের বাসিন্দা জ্যোতির্ময় বসু। আর সেখানেই যে এমন ধাক্কা অপেক্ষা করছিল স্বপ্নেও বোধহয় ভাবতে পারেননি তিনি। ব্যাঙ্কে এসে জানতে পারলেন তাঁর লকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য কাউকে। আর লকারের মধ্যেকার সামগ্রী? আশ্চর্য করে দিয়ে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের উত্তর, ‘‘তা জানি না।’’

অবাক করা এমন ঘটনাই ঘটেছে কলকাতার গোপীমোহন দত্ত লেনের বাসিন্দা জ্যোতির্ময় বসু এবং শিখা বসুর সঙ্গে। কলকাতায় এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ শাখায় প্রায় বছর ২৫ ধরেই অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁদের। গত মাসের ৯ অক্টোবর জ্যোতির্ময়বাবু এবং তাঁর স্ত্রী ব্যাঙ্কের ওই শাখায় যান মেয়ের বিয়ের জন্য লকারে রাখা গয়না তুলে আনবেন বলে। তখনই ব্যাঙ্ক জানায়, তাঁদের লকার দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য কোনও ব্যক্তির নামে। কিন্তু কেন?

ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানান, প্রায় ৮ বছর ধরে লকারের ভাড়া বাকি ছিল জ্যোতির্ময়বাবুর। সে কারণেই লকার ভাঙতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। লকার ভাঙলেও নিয়মানুযায়ী লকারের মধ্যেকার সম্পত্তি থাকবে ব্যাঙ্কের হেফাজতে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দাবি, লকার যখন ভাঙা হয় কিছুই মেলেনি সেখানে। শুধু তাই নয়, এ রকম খালি লকার নাকি ১৭ খানা মিলেছে ব্যা‌ঙ্কের ওই শাখায়। বকেয়া ভাড়া না পাওয়ায় লকার ভাঙতেই পারেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভাঙার আগে তাঁদের জানাতে হবে লকারের উপভোক্তাকে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা তিন বার জ্যোতির্ময়বাবুর বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু ওই ঠিকানায় পাওয়া যায়নি কাউকেই। জ্যোতির্ময়বাবু জানান, আগে তাঁরা ২৪৩/২সি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের বাসিন্দা ছিলেন। প্রায় বছর ২০ ধরেই তাঁরা গোপীমোহন দত্ত লেনের বাসিন্দা। ব্যাঙ্কের যাবতীয় কাগজপত্র তাঁর এই গোপীমোহন দত্ত লেনের ঠিকানায় এলেও কেবলমাত্র লকার সংক্রান্ত চিঠি কেন পাঠানো হল পুরনো ঠিকানায়, প্রশ্ন তাঁর। ‘‘শারীরিক অসুস্থতা-সহ নানা কারণে আমি লকারের বকেয়া টাকা সময়ে মেটাতে পারিনি ঠিকই। লকারও ওনারা ভাঙতেই পারেন। কিন্তু আমার অজ্ঞাতসারে কেন?’’— বলেন জ্যোতির্ময়বাবু।

ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার জানান, ঠিকানা যে বদল হয়েছে তা ব্যাঙ্ক নাকি জানতই না। জ্যোতির্ময়বাবুর দাবি, ‘‘ঠিকানা বদলেছি সেই ১৯৯৩ সালে। ব্যাঙ্কের পাশবইতে পুরনো ঠিকানা কেটে নতুন ঠিকানা পরিষ্কার করে লিখেছিলেন ব্যাঙ্ককর্মীরাই। চলতি বছরের জুলাই মাসেও এই ঠিকানায় ব্যাঙ্কের চিঠি এসেছে। কেবল লকারের ক্ষেত্রেই এমন ঠিকানাবিভ্রাট কেন?’’ জ্যোতির্ময়বাবুর অভিযোগ, লকার ভেঙে তাঁর সম্পত্তি চুরি করেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অক্টোবরের ১৫ তারিখ শ্যামপুকুর থানায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। তাঁর দাবি, লকারের মধ্যে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না ছিল। এমনকী, ওই লকারের চাবি পর্যন্ত রয়েছে তাঁর কাছে। ব্যাঙ্ক অবশ্য পুরোটাই অস্বীকার করে জানিয়েছে, নিয়মমাফিকই তাঁরা লকার ভেঙেছেন, সেই সময় দেখা গিয়েছে লকার ফাঁকা।

দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানেজার বলেন, ‘‘লকারের এবং অন্য কাজের বিষয় দু’টো আলাদা। আমাদের খাতায় নতুন ঠিকানা তোলা নেই।’’ তাই যদি হয় তা হলে গোপীমোহন দত্ত লেনের ঠিকানায় অন্য কাগজপত্র পৌঁছল কী করে? সদুত্তর দিতে পারেননি ম্যানেজার। উত্তর দিতে নারাজ শ্যামপুকুর থানাও। তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করব না বলেই এড়িয়ে গিয়েছেন শ্যামপুকুর থানার ওসি। ব্যাঙ্কের কিছু ক্ষেত্রে যে গাফিলতি রয়েছে তা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের কলকাতার মুখ্য কার্যালয়ের আধিকারিক।

কিন্তু লকারের মধ্যেকার সম্পত্তির হদিশ কোথায়? সে ব্যাপারে মুখে কুলুপ কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE