বাড়ি বা বহুতল তৈরির জন্য এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও ) করা নির্দিষ্ট জমির কিছু অংশ ফাঁকা থাকলে আলাদা করে তার জন্য কর দিতে হবে না। মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। এত কাল নিয়ম ছিল, বাড়ি বা বহুতলের পাশে ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকলে এফএআর করা থাকলেও কর দিতে হবে। এ বার শহরবাসীকে সেই কর থেকে রেহাই দেওয়ার কথা ঘোষণা করল পুরবোর্ড।
এই সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারণ কী? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এত কাল যে ভাবে এফএআর থাকা জায়গার কিছু অংশ ফাঁকা থাকলেও যে পদ্ধতিতে কর নেওয়া হচ্ছিল, তা সঠিক ছিল না। পুর-প্রশাসনের ভুল হচ্ছিল। এ বার তা শুধরে নেওয়া হল।’’ ভুলটা কোথায় ছিল?
পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুর-এলাকার কোনও জমিতে বাড়ি বা বহুতল তৈরির আগে পুরসভার অনুমোদন নিতে হয়। এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও)-এর হিসেব ধরে সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা বহুতল নির্মাণ করা হয়। তার বাইরে গিয়ে বাড়ি বা বহুতল গড়া বেআইনি। তিনি জানান, ধরা যাক কোনও এক ব্যক্তি এফএআর ধরে ১০ কাঠা জায়গার উপরে বাড়ি করবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি পুরো জমি জুড়ে চারতলা বাড়ি করতে পারেন। আবার কেউ একই পরিমাণ জমির বেশ কিছু অংশ ছেড়ে ১২তলার বাড়ি তুলতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী, দুই ক্ষেত্রেই জমির মালিককে এফএআর-এর আওতাধীন জমির উপরে কর দিতে হবে। এত দিন পুরসভার রীতি অনুযায়ী, ওই ১২ তলা বাড়িটির ক্ষেত্রে বহুতলের জন্য নির্দিষ্ট করের সঙ্গে ফাঁকা জায়গার করও দিতে হত। অথচ চারতলা বাড়ির ক্ষেত্রে ফাঁকা জমি পড়ে না থাকায় আলাদা কর দিতে হত না। যদিও দুই ক্ষেত্রেই এফএআর সমান। ওই অফিসার জানান, এ ভাবে ফাঁকা জমির জন্য কর নেওয়াটা যে ভুল ছিল, তা জানা যেতেই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
মেয়র বলেন, ‘‘বিল্ডিং, গ্যারাজ, গুদাম-সহ যেখানে নির্মাণ হয়েছে, তার জন্য পুরসভাকে কর দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এফএআর থাকা অব্যবহৃত জমির জন্য বাড়ি বা বহুতলের করের অর্ধেক হিসেবে কর দিতে হচ্ছে। এ বার থেকে সেই ফাঁকা জায়গার জন্য কর দিতে হবে না।’’ তিনি জানান, শহরে অনেক বাড়ি লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় গাছগাছালি রয়েছে, বাগান করা হয়েছে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে আরও বেশি মানুষ শহরকে সবুজ রাখায় সামিল হবেন বলে আশা মেয়রের।
ভুল যদি হয়ে থাকে, তা হলে গত পাঁচ বছরে এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি কেন? কেনই বা এ বার পুরবোর্ডে বসে এসে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল— তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে পুরমহলে। একাধিক অফিসারের মতে, একতলা-দোতলা বাড়ির পাশে ফাঁকা জমি তেমন থাকে না। তাই শহরবাসীর একটা অংশ এই সিদ্ধান্তে তেমন কোনও সুবিধা পাবেন না। তবে আধুনিক মানের বহুতলের ক্ষেত্রে নতুন এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হবেন অনেক বাসিন্দা।
যদিও শোভনবাবু জানান, সম্প্রতি পূর্ব কলকাতার একটি বহুতলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে পুরসভার কাছে আবেদন জমা পড়ে। বেলেঘাটা এলাকার ওই বহুতলে ৪৮২টি পরিবার থাকে। ওই বহুতল চত্বরে অনেকটা এলাকা ফাঁকা রয়েছে। তার জন্য বাসিন্দাদের বাড়তি করের বোঝা চাপে। ওই বহুতলের তরফে মেয়রকে বিষয়টি জানানো হয়। মেয়র জানান, তা যাচাই করে দেখতে গিয়েই পুর-প্রশাসনের নজরে আসে বিষয়টি। তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ কাউকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এটা করা হয়নি। ছোট-বড় সব বিল্ডিং মালিকেরা এই ছাড়ের সুবিধা পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy