—ফাইল চিত্র।
হাতে ছেনি, গ্যাস কাটার, নিউম্যাটিক হ্যামার! ছোট ট্রাকে চেপে ১৫-২০ জনের এক-একটি দল শহর জুড়ে অভিযান চালাতে নেমেছে বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে। দৃশ্যটা এমনই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। এমনটাই জানাচ্ছেন কলকাতা পুর আধিকারিকদের একাংশ।
কারণ, বেআইনি বাড়ি ভাঙার জন্য পুরসভায় নথিভুক্ত ‘ডেমোলিশন গ্যাং’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার সংখ্যা যেখানে প্রায় ১০টি, সেখানে বর্তমানে মাত্র দু’টি সংস্থা কাজ করছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। তাই শহর জুড়ে বেআইনি বাড়ির সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলেও তা ভাঙার জন্য ‘ডেমোলিশন গ্যাং’ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি মাসেই বেআইনি বাড়ি ভাঙা সংক্রান্ত ফাইল জমছে। যে দু’টি সংস্থা কাজ করছে, তারাই শহরের নানা জায়গায় বাড়ি ভাঙার জন্য ‘ডেমোলিশন গ্যাং’ পাঠাচ্ছে।
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতি মাসে ২৫-৩০টি করে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। পাঁচ, ছয়, সাত, নয় ও ষোলো নম্বর বরো এলাকায় তিন মাসে শ’খানেক বাড়ি ভাঙা হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, ‘বেআইনি’ বাড়ির সংজ্ঞা এখন পাল্টেছে। কারণ, বর্তমানে তথাকথিত ‘বেআইনি’ অংশকে আইনসিদ্ধ করার জন্য পুর বিল্ডিং আইনে সুযোগ রয়েছে। সাড়াও মিলছে। কারণ, সংশোধিত নকশা জমা দিয়ে ও জরিমানা দিয়ে বেআইনি অংশকে আইনি করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পুরসভার ভাঁড়ারে বাড়তি টাকাও আসছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, আগের মতো চট করে কোনও বাড়িকে ‘বেআইনি’ ঘোষণা করা মুশকিল। অনেক বাড়িতে আইনি ঝামেলাও রয়েছে। সেগুলিও হঠাৎ ভাঙা যায় না। কিন্তু আইনে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যখন সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক তা নেন না, তখন সেই বাড়িকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে পুরসভা।
কিন্তু সেই সব বাড়ি ভাঙার জন্য ‘ডেমোলিশন গ্যাং’-এর অভাব যে রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ। এই সঙ্কটের কারণ তাঁরা জানাচ্ছেন, কোনও ঠিকাদার সংস্থাই বেআইনি বাড়ি ভাঙতে রাজি হচ্ছে না। কারণ, তারা মনে করছে, ওই কাজে ঝুঁকি বেশি। যে ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হুকিং কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎকর্মীরা প্রহৃত হন, সে ভাবে বাড়ি ভাঙতে গিয়েও পুরকর্মীরা আকছার মার খাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, যখনই কোনও বেআইনি বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় পুর প্রশাসন, তখন সংশ্লিষ্ট থানাকে বিষয়টি জানানো হয়। তার পরে পুলিশকে নিয়েই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাতেও বিপদ কাটছে না বলেই জানাচ্ছে পুরসভা। কারণ, বেআইনি নির্মাণ জেনেও ঝামেলার ভয়ে অনেক জায়গায় ঢুকতেই পারে না ওই ‘গ্যাং’। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেন কেউ বেআইনি বাড়ি ভাঙার ঝক্কি নেবে বলুন তো! বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গেলেই তো হাজারো সমস্যা!’’
যে দু’টি সংস্থা বর্তমানে বেআইনি বাড়ি ভাঙার কাজ করছে, তাদের মধ্যে একটি সংস্থার আবার অভিযোগ, বাড়ি ভাঙার জন্য পুরসভা ঠিকমতো টাকা দেয় না। তাই কোনও ঠিকাদার সংস্থা এই কাজে আগ্রহী নয়। ওই ঠিকাদারের বক্তব্য, ‘‘একেই বাড়ি ভাঙতে যাওয়ার একটা ঝুঁকি আছে। তার উপরে যদি টাকাটাও ঠিকঠাক পাওয়া না যায়, তা হলে কে আর বাড়ি ভাঙতে আসবে বলুন?’’
বেআইনি বাড়ি ভাঙার সমস্যা যে রয়েছে, পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন একাধিক বরো চেয়ারম্যানও। পাঁচ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বেআইনি বাড়ির অর্ডার আসতে অনেক সময়ে দেড় বছর-দু’বছর লেগে যায়। কিন্তু পুরোপুরি বেআইনি হলে সেই নির্মাণ ঠিকই ভাঙা হয়।’’ ছ’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘অনেক সময়ে লোকজন কম থাকায় এক দিনে বাড়ি ভাঙার কাজ হয় না। পরে আবার ভাঙা হয়।’’ ১৬ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিকাঠামোর অভাব যে রয়েছে, তা অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই।’’
তবে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি, মেসেজেরও উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy