Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ধুলো জব্দ করতে আসছে জলকামান

পর্ষদের বিজ্ঞানীরা এ-ও মনে করছেন, যে ভাবে কলকাতার বায়ুদূষণ বাড়ছে, তাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে দিল্লিকে ধরে ফেলতে শহরের বেশি সময় লাগবে না।

আসছে এমনই কামান।


আসছে এমনই কামান।

আসছে এমনই কামান। আসছে এমনই কামান।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

ধুলো দূর করতে বিপুল পরিমাণ জল ঢালার ফলে কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। বিরক্ত হয়েছিলেন রাজা। রবি ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতায়। তবে কবির কল্পনা নয়, বাস্তবে কলকাতার বাতাস থেকে ধুলো ঝাড়তে জল ছেটানোর ব্যাপারে প্রাথমিক চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শহরকে কাদায় মাখামাখি করার কোনও পরিকল্পনা নেই। শুধু ধুলো জব্দ করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়াই লক্ষ্য। বাতাসে জলের গুঁড়ো ছড়াবে এক বিশেষ ধরনের কামান। দিল্লিতে দিন কয়েক আগে যার পরীক্ষামূলক ব্যবহার হয়েছে।

শীতে কলকাতার বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ে। এ বার বড়দিন, ২৫ ডিসেম্বর অসংখ্য মানুষ বেরিয়েছিলেন রাজপথে। সে দিন বাতাসে সূক্ষ্ম (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম কণা (পিএম ২.৫), দু’য়েরই পরিমাণ সহনশীল মাত্রার দ্বিগুণের বেশি ছিল বলে পর্ষদের যন্ত্রে ধরা পড়েছে। পিএম ১০ সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে ঢোকে। সেটা সে দিন ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২০৮, সহনশীল মাত্রা ১০০। পিএম ২.৫ সরাসরি ঢোকে ফুসফুসে। তার সহনশীল মাত্রা যেখানে ৬০, ওই দিন কলকাতার বাতাসে সেটা ছিল ১২৮।

পর্ষদের বক্তব্য, দিল্লির তুলনায় কলকাতার বাতাসের অবস্থা এখনও ভাল। তবে চেন্নাই ও মুম্বইয়ের চেয়ে খারাপ। পর্ষদের বিজ্ঞানীরা এ-ও মনে করছেন, যে ভাবে কলকাতার বায়ুদূষণ বাড়ছে, তাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে দিল্লিকে ধরে ফেলতে শহরের বেশি সময় লাগবে না।

বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, কলকাতায় এই বায়ুদূ‌ষণের অন্যতম উপাদান ধুলো বা ধূলিকণা। আর সেটা দূর করতেই জলকামান ব্যবহারের ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র দিন কয়েক আগে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অতিরিক্ত অধিকর্তা, বিজ্ঞানী দীপঙ্কর সাহার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন।

তবে ক্ষুব্ধ জনতাকে হটাতে পুলিশ যে জলকামান ব্যবহার করে, ধুলো মারার জলকামান তেমন নয়। পুলিশের জলকামানে একটি বা দু’টি নল থেকে বেরোনো জলের তোড়ে ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়। ধুলো দূর করার জলকামান প্রায় আড়াইশো ফুট উঁচুতে জল ছিটোবে। সেই উচ্চতায় থাকা ধূলিকণা গায়ে জল লেগে ভারী হয়ে নীচে পড়ে যাবে। গত বুধবার, ২০ ডিসেম্বর দিল্লির একটি এলাকায় ওই জলকামান পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বায়ুদূষণে সব চেয়ে জর্জরিত এলাকাগুলির মধ্যে ওই এলাকা অন্যতম।

বছর দুই আগে চিনে বাতাসের দূষণকে বাগে আনতে এই জলকামান ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে ওই কামান আকারে যেমন বিশাল, তেমনই তার ছোড়া জল হাজার ফুটের বেশি উপরে উঠতে পারে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, দিল্লিতে ব্যবহৃত জলকামানটির দাম ছ’লক্ষ টাকা। হরিয়ানায় এক সংস্থা ওই কামান তৈরি করেছে।

কেন্দ্রীয় পর্ষদের কর্তা এবং বি়জ্ঞানী দীপঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘নির্মাণ, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং রাস্তা তৈরির কাজের ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ধুলো রোধে জলকামান কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। বহু দেশেই ধুলো তাড়াতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষত গাছপালা কার্যত নেই, কংক্রিটের জঙ্গলে ভরা আবদ্ধ জায়গায় এর সফল প্রয়োগ সম্ভব।’’ তাঁর বক্তব্য, কলকাতায় এই সরঞ্জাম প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা নেই। যখন কোনও জায়গায় প্রচুর ধুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে, তখন নির্দিষ্ট সেই জায়গায় জলকামান ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচের সময়ে, স্টেডিয়াম লাগোয়া এলাকায়। তবে দীপঙ্করবাবু বলছেন, ‘‘এটা শুধু ধুলো আটকানোর জন্য কাজ করবে। কিন্তু বায়ুদূষণের অন্য উপাদানকে ঠেকাতে পারবে না।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণবাবু জানাচ্ছেন, জলকামান বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের জোগান দিলে ধুলোর কণাগুলি মাটিতে পড়ে যাবে। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিল্লি অনেক বেশি শুষ্ক, কলকাতা অনেক বেশি আর্দ্র। জলকামান ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। তা ছাড়া কোনও বড়, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপরেও যখন-তখন জলকামান ব্যবহার করলেও সমস্যা। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে জলীয় বাষ্প
জমে থাকলে চালকের দেখতে অসুবিধা হবে, তাতে দুর্ঘটনারও আশঙ্কা হবে।’’

পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য জলকামান কিনলে শেষমেশ পর্ষদ ওই যন্ত্র নিজেরা ব্যবহার করবে না। সেগুলি কলকাতা পুরসভার হাতে থাকবে। পর্ষদের পরামর্শ মতো তারা কামান ব্যবহার করে ধুলো তাড়াবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

জলকামান Police Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE