ছুটির দিনে ফাঁকা রাস্তায় দ্রুতগতিতে ছুটছে বাইক। লরির ধাক্কায় বাইক থেকে ছিটকে পড়েন যুবক। মাথায় গুরুতর চোট-সহ তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে পরিকাঠামো না থাকায় যুবককে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে পেরিয়ে যায় প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সময়। চিকিৎসকেরা জানান, ‘গোল্ডেন আওয়ারে’ প্রাথমিক চিকিৎসা সঠিক না হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।
ভোরে বেপরোয়া গতিতে শহরের এক উড়ালপুল থেকে নামছিল একটি অ্যাপ ক্যাব। ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে যায় গাড়িটি। আহত যাত্রী ও চালককে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক জানান, দুর্ঘটনা পরবর্তী আতঙ্ক কাটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে।
এগুলো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট ফের প্রশ্ন তুলছে, এ রাজ্যের জরুরি চিকিৎসার হাল কি আদৌ উন্নত হচ্ছে? আজ ‘ওয়ার্ল্ড হেড ইনজুরি অ্যাওয়ারনেস ডে’। তাই সামনে উঠে আসছে এই প্রশ্ন।
কেন্দ্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চেন্নাইয়ে সব চেয়ে বেশি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে প্রথম দিল্লি। এর পরেই বেঙ্গালুরু, মুম্বই কলকাতা এবং পুণে। এ শহর পথ দুর্ঘটনায় দেশের মধ্যে চতুর্থ। কলকাতায় ৫১.৪ শতাংশ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। সঠিক পদ্ধতিতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকা থেকে আহতকে উদ্ধার করে নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনোতেও পিছিয়ে কলকাতা।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার পরে প্রথম ৬০ মিনিট খুব জরুরি। একে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময় দেখা যায়, আহতকে উদ্ধার করে কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে তা ঠিক করতেই সময় পেরিয়ে যায়। গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না হলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ-সহ একাধিক সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।
স্নায়ুশল্য চিকিৎসক জে কে প্রুস্তি জানান, ৬০ শতাংশ পথ দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে চোট থাকে। তবে, সকলের অস্ত্রোপচার দরকার হয় না। গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না হলে পরবর্তী সময়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘অজ্ঞান না হলে কিংবা বাইরে থেকে কোনও উপসর্গ দেখা না দিলেই মস্তিষ্কে চোট নেই এ ধারণা ভুল।’’
হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে রোগীদের চিকিৎসা শুরু হতেও বহু ক্ষেত্রে গড়িমসি চলে। দুর্ঘটনার পরে আইনি জটিলতার জেরে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত জানানোর পরে সময় নষ্ট করলে বিপদ বাড়বে বলেই জানাচ্ছেন স্নায়ুশল্য চিকিৎসক কৌশিক শীল।
এ দেশে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে ‘ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি’। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য শহরের বড় হাসপাতালগুলির পাশাপাশি জেলা স্তরেও প্রশিক্ষিত কর্মী থাকা জরুরি বলে মনে করছেন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরিজিৎ বসু। তাঁর কথায়, ‘‘রক্তপাত বন্ধ করা গোল্ডেন আওয়ারে জরুরি কাজ। অধিকাংশ জায়গায় সেই পরিষেবা না থাকায় রোগী অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যান। অ্যাম্বুল্যান্সে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী থাকলে বড় বিপদ এড়ানো যাবে।’’
এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইন চার্জ চিকিৎসক সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনেক সময় জেলায় কেউ পথ দুর্ঘটনায় আহত হলে সরাসরি তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু প্রাথমিক পর্বের চিকিৎসা না করিয়ে দূরের হাসপাতালে যাওয়া বিপজ্জনক। অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পরে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy