খুশি: সপরিবার এডভান কার্ভালহো। শনিবার, শহরে। —নিজস্ব চিত্র।
বাঙালিদের মধ্যে লড়াকু মেজাজের জন্য পূর্ববঙ্গীয়, মানে বাঙালদের ‘জার্মান’ বলা হয়, জানেন কি আপনি?
প্রশ্নটা শুনে খুব হাসলেন টমাস শ্রড। কয়েক বছর আগে ঢাকার জার্মান দূতাবাসে চাকরি করলেও এত বড় খবরটা তাঁর জানা ছিল না।
তবে কলকাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত জার্মান কনসাল জেনারেল শ্রড এই শহরের মধ্যেও বার্লিনের ছোঁয়াচ পান খানিকটা। ‘‘বার্লিনের কিন্তু পুরোটাই দারুণ ঝকঝকে, গোছানো নয়। বরং কলকাতার মতোই নতুন-পুরনোর মিশেলে ভরপুর!’’ হেসে বলছিলেন, তিনি।
এই কলকাতার সৌজন্যেই আপাতত একটি স্বপ্নপূরণ ঘটছে শ্রডের। বছর দশেক আগে জার্মানিতে বিশ্বকাপ হলেও মাঠের টিকিট জোটেনি! সুদূর কলকাতায় বসে সে আশা যে পূরণ হবে, তা কক্ষণও ভাবেননি তিনি।
হোক না যুব বিশ্বকাপ! তবু কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল-জার্মানির লড়াই! আজ, রবিবার কনস্যুলেটের জার্মান ও ভারতীয় সহকর্মীদের নিয়ে গ্যালারিতে গলা ফাটাতে তৈরি কনসাল জেনারেল।
মধ্য পঞ্চাশের বায়ার্ন মিউনিখভক্ত শ্রড এখনও প্রিয় ফুটবলার বলতে বেকেনবাওয়ার-গার্ড মুলারদের কথাই বলেন। জার্মান যুব দলের খেলুড়েরা তত চেনা নয়। কিন্তু ফেসবুকে কনস্যুলেটের পেজে স্বদেশীয় খুদে ফুটবলারদের সঙ্গে ডিনারের ভিডিও আপলোড করিয়েছেন। শনিবার বাঙালির ভাইফোঁটার দুপুরে জার্মান ফুটবলবীরদের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সাবেক অফিসপাড়া চত্বর ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন কনস্যুলেট-কর্তারা। এখন প্রহর গোনা আসল ম্যাচের জন্য। কোয়ার্টার ফাইনালে ভাল কিছু ঘটলেই অবশ্য উচ্ছ্বাসে ভাসতে চান না কনস্যুলেট-কর্তারা। কারণ, সামনে আরও কঠিন যু্দ্ধ। কিন্তু জার্মানি ফাইনাল খেলতে এলে মোচ্ছবের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শ্রড।
কলকাতাবাসী ব্রাজিলীয় ফুটবল কোচ এডভান কার্ভালহো অবশ্য জার্মানরা অত সহজে পার পাবেন বলে মনে করছেন না। কসবার একটি সংস্থায় ফুটবল শেখানোর পাশাপাশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল অব ল্যাঙ্গুয়েজ-এর ডিপ্লোমা কোর্সে বাংলা শেখেন আটত্রিশের যুবক। বাড়ি ব্রাজিলের পোর্তো ভেলহো শহরে। নিজের দেশে গত বিশ্বকাপের সময়ে কলকাতাতেই পড়েছিলেন এডভান। সেমিফাইনালে জার্মানির মুখে পড়ে সেই অভাবনীয় বিপর্যয়ের জ্বালা সহ্য করেছেন এই শহরে বসেই। এডভানের আশা, এই শহরই ব্রাজিলকে শাপমুক্তির স্বাদ এনে দেবে। হোক যুব বিশ্বকাপ! কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানদের ছিটকে দিতে পারলে জ্বালা জুড়োবে খানিক।
সল্টলেকের হাউজফুল গ্যালারির টিকিট কোনও ভাবে ম্যানেজ করতে পারবেন কি না, এখনও নিশ্চিত নন এডভান। কিন্তু এই ব্রাজিল যুব দলের কর্মকর্তা জর্জ ফার্নান্ডেজের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে ইতিমধ্যে টিম হোটেলে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন তিনি।
এডভানের পরিবার ছাড়া কলকাতায় ব্রাজিলীয় হাতে গোনা। তুলনায় কনস্যুলেট ও বিভিন্ন কর্পোরেট কর্মী মিলিয়ে গোটা বাংলায় জার্মান নাগরিক ঢের বেশি। তা বলে কলকাতার মাঠে ‘হলুদ ঝড়’-এর আশায় গলা ফাটানোর লোকের অভাব যে হবে না, বলাই বাহুল্য। ম্যাচের দু’দিন আগেই খাতায়-কলমে ভরে গিয়েছে গ্যালারি। অনেকেই পেলে-রোনাল্ডোদের দেশের পাশে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হলুদ-সবুজ জার্সিতে প্রোফাইল ছবি দিয়ে
বঙ্গযুবার দৃপ্ত ঘোষণা, সময় পাল্টায়, বিশ্বাস নয়!
কলকাতার বৃষ্টিভেজা দুপুরে ধর্মতলার লিন্ডসে স্ট্রিটে রিকশায় পোজ দিতে দিতে দুই পর্তুগিজ যুবক আন্তোনিও ও ম্যানুয়েলও বললেন, ‘‘ভাষার মিলের টানেই ব্রাজিলকে সমর্থন করব!’’ এক মাস ব্যাপী ভারত সফরে আসা দুই পেশাদার কর্পোরেট-কর্তা সল্টলেকের টিকিটও বাগিয়ে ফেলেছেন।
তবে প্রিমিয়ার লিগ বা বুন্দেশলিগাকাতর বাঙালির দুনিয়া পেলে-গ্যারিঞ্চার যুগের রোম্যান্সে আটকে নেই, এটাও ঘটনা। তাই জার্মানদের ভক্তেরও অভাব হওয়ার কথা নয়। এর মধ্যে অধুনা ফ্রাঙ্কফুর্টবাসী, ডানলপের মেয়ে সুস্মিতা ধর লুকাসের আফশোস যাচ্ছে না। বর উয়া লুকাস ফুটবল-পাগল! তাঁর বহুদিনের ইচ্ছে সল্টলেকের মাঠে খেলা দেখার। খালি মনে হচ্ছে, এমন জানলে কলকাতায় আসার বচ্ছরকার ছুটিটা এই সময়ই ঠিক ফেলতেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy