Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতা কড়চা

ময়মনসিংহের গচিহাটার ছেলেটি এন্ট্রান্স পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি থেকে কলকাতায় পালিয়ে এসেছিল শিল্পী হবে বলে। সরকারি আর্ট স্কুলে পড়তে পড়তে আবার বিরোধ— পঞ্চম জর্জের আগমন উপলক্ষে শহর সাজাতে নবীন ছাত্রদের সামান্য পয়সা দিয়ে নিয়োগের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে নামলেন হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার ও আরও ক’জন। প্রিন্সিপাল পার্সি ব্রাউন সঙ্গে সঙ্গে নাম কেটে দিলেন ধর্মঘটীদের।

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

মর্যাদা পেলেন বিস্মৃত শিল্পী

ময়মনসিংহের গচিহাটার ছেলেটি এন্ট্রান্স পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি থেকে কলকাতায় পালিয়ে এসেছিল শিল্পী হবে বলে। সরকারি আর্ট স্কুলে পড়তে পড়তে আবার বিরোধ— পঞ্চম জর্জের আগমন উপলক্ষে শহর সাজাতে নবীন ছাত্রদের সামান্য পয়সা দিয়ে নিয়োগের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে নামলেন হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার ও আরও ক’জন। প্রিন্সিপাল পার্সি ব্রাউন সঙ্গে সঙ্গে নাম কেটে দিলেন ধর্মঘটীদের।

এ বার ভর্তি হলেন রণদাপ্রসাদ গুপ্তর জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমিতে, মন ভরল না সেখানেও। অবনীন্দ্র-শিল্পধারা তাঁর অন্বিষ্ট ছিল না, পশ্চিমী অ্যাকাডেমিক রীতিতে দক্ষ হতে চাইছিলেন হেমেন্দ্রনাথ, বিশেষ করে মানবদেহ অঙ্কনে। শেষে স্বশিক্ষাই তাঁকে পৌঁছে দিতে পেরেছিল চূড়ান্ত সাফল্যে।

বিশ শতকের প্রথমার্ধে বেঙ্গল স্কুলের শিল্পীদের রমরমার দিনে সর্বভারতীয় স্তরে হেমেন্দ্রনাথ যে সম্মান অর্জন করেছিলেন, সে কথা আজ বিস্মৃতির আড়ালে। একের পর এক সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে সেরার পুরস্কার, পাটিয়ালার রাজশিল্পীর মর্যাদার পাশাপাশি কাশ্মীর, বিকানের, জয়পুর, যোধপুর, ঢোলপুর, ময়ূরভঞ্জের রাজাদের পৃষ্ঠপোষণা ছিল অকৃপণ। ছবি আঁকার সঙ্গে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব আর্ট প্রতিষ্ঠা, তার পত্রিকা প্রকাশ, ‘শিল্পী’ পত্রিকা, ইন্ডিয়ান মাস্টার্স শিল্পগ্রন্থমালা বাঙালির শিল্পচর্চায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ১৯৪৮ সালে প্রয়াত হন তিনি। তাঁকে নিয়ে চমৎকার একটি বই লিখেছেন অনুরাধা ঘোষ (হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, রাজ্য চারুকলা পর্ষদ)। জীবনতথ্যের সঙ্গে আছে বিশ্লেষণ, শুধু যে ‘সিক্তবসনা সুন্দরী’র শিল্পী নন তিনি, আছে সেই আলোচনাও। সুমুদ্রিত বহু দুর্লভ ছবি বইটির সম্পদ। বাঁ দিকে স্টুডিয়োয় শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ, ডান দিকে তাঁর আঁকা শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতিকৃতি, মাঝে বইটির প্রচ্ছদ।

হায়, কাদম্বরী

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পত্নী কাদম্বরী দেবীর আত্মহনন আজও রহস্যে আবৃত। যেহেতু রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন তাঁকে নতুন বৌঠান রূপে স্মৃতিধার্য করে রেখেছিলেন, এ নিয়ে মানুষজনের কৌতূহলের শেষ নেই। কিন্তু সে কৌতূহল কিছু কাল ধরে অনুসন্ধানের ছলে যথেচ্ছাচারের জন্ম দিয়েছে, তৈরি করছে কল্পকাহিনি। অথচ কাদম্বরী-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের সবটাই প্রায় রবীন্দ্রনাথের রচনা, চিঠিপত্র, আলাপচারিতা থেকে পাওয়া, আর কিছু তথ্যের সূত্র তৎকালীন ঘনিষ্ঠ জনের রচনা বা স্মৃতিকথা। অমিত দাশ সে সবের ভিত্তিতেই লিখেছেন হায়, কাদম্বরী! ‘বিভ্রান্তি প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে কাদম্বরী-সংক্রান্ত এযাবৎ প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্য গ্রন্থের শেষে সংযোজিত হলো।’ ‘ভূমিকা’য় জানিয়েছেন লেখক। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বৈতানিক-এর সদস্য অমিত সংস্থাটির সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘকাল। তাঁর এ-বইটি সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করল রবীন্দ্রলোক। সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আঁকা কাদম্বরীর স্কেচটি বই থেকে।

কুড়িতে শ্রীকান্ত

খেলাধুলো, গান, তবলা বাজানো, ছবি আঁকা, অভিনয়— সব কিছু নিয়ে ‘জ্যাক অব অল ট্রেডস’ ছিল ছেলেটা। কিন্তু শ্রীকান্ত আচার্য যে গানকেই পেশা হিসেবে নেবে এটা কারও জানা ছিল না। তাঁর দিদি যখন ‘দক্ষিণী’তে গান শিখতে যেতেন, তখন ছোট্ট শ্রীকান্ত বাইরে অফিস ঘরে বসে বসে টেবিল চাপড়ে তবলা বাজাত। তা দেখে স্কুল অধ্যক্ষ শুভ গুহঠাকুরতা এক দিন শ্রীকান্তর মাকে বললেন, ‘ওর তো সুরজ্ঞান-লয়জ্ঞান দু-ই দারুণ দেখছি। ওকেও দিন না গানের ক্লাসে ভর্তি করে।’ সেই শুরু সেন্ট জেভিয়ার্স প্রাক্তনী শ্রীকান্তর গান শেখা। প্রথম একক ক্যাসেট ‘মনের জানালা’তেই পাকাপাকি জায়গা। তার পর রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘হে বন্ধু হে প্রিয়’। ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’, ‘পৃথিবীর চাবি’, ‘নদীর ছবি আঁকি’তে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন। গত কুড়ি বছর ধরে বাংলা গানকে নতুন ধারায় গেয়ে দেশবিদেশের শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সংগীতজগতে কুড়ি বছর উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় কলামন্দিরে তাঁর একক অনুষ্ঠান ‘গানে গানে কুড়ি— এক সন্ধ্যায় শ্রীকান্ত আচার্য।’ প্রকাশিত হবে শ্রীজাতর কথায়, জয় সরকারের সুরে শিল্পীর গাওয়া গজল আঙ্গিকে নতুন বাংলা গানের অ্যালবাম ‘মুসাফিরানা ২’।

বাংলাদেশ সন্ধ্যা

আবু হোসেন মোর্ত্তুজা ওরফে বেনজীন খান বাংলাদেশের মুক্তমনা মানুষের কাছে প্রায় এক প্রতিষ্ঠান। জন্ম ১৯৬৬, যশোর জেলার সিংহঝুলি গ্রামে। দর্শন নিয়ে পড়াশোনা, ‘ইসলামের ইতিহাস ও সভ্যতা’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে ২০০৫-এ প্রতিষ্ঠা করেন ‘আবুল হুসেন রাষ্ট্রসভা’ নামে পাঠচক্র, পরে ‘মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ’ নামে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এবং ২০১৩-য় প্রতিষ্ঠা করেন বহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ‘প্রাচ্যসংঘ’। তাঁর পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে এবং তাঁর দর্শন ও বক্তব্য এ পারেও চারিয়ে দিতে অহর্নিশ আয়োজন করেছে ‘বাংলাদেশ সন্ধ্যা ২০১৬’, ১ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় জীবনানন্দ সভাঘরে। শুভাশিস চক্রবর্তী সম্পাদিত বেনজীন খান ৫০: সম্মাননা পত্র এবং বেনজীন খান রচিত সালমান রুশদীদের ‘সেফ হ্যাভেন’ এবং এক জন সম্মানিত বিবেক (অহর্নিশ থেকে পুনর্মুদ্রিত) গ্রন্থ দুটির মোড়ক উন্মোচন এবং ‘সমাজকর্মী ও প্রাবন্ধিক বেনজীন খান সম্মাননা’ জ্ঞাপন করবেন শঙ্খ ঘোষ। ‘প্রাচ্যসংঘ: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা’ বিষয়ে বলবেন বেনজীন খান।

সহজ পরব

বাংলার বাউলগানের অন্যতম প্রাণপুরুষ বাউল শাহ আবদুল করিম। তাঁর গানে বার বার ফুটে ওঠে মৈত্রীর কথা। তাঁরই জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ বছরের ‘সহজ পরব’ দোহার ও লোপামুদ্রা প্রোডাকশনস আয়োজন করেছে নজরুল মঞ্চে, ২-৪ সেপ্টেম্বর, বিকেল ৪টেয়। উদ্বোধনের পর সন্তুর বাজাবেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা এবং দেখা যাবে তাঁরই নির্মিত সন্তুরের ওপর একটি তথ্যচিত্র। সঙ্গে ওপার বাংলার বিশিষ্ট লোকশিল্পী জামালউদ্দিন হাসান বান্না ও সেঁজুতি দে-র কণ্ঠে লোকগান। ৩ সেপ্টেম্বর শোনা যাবে শুভা মুদগলের কণ্ঠে সন্ত ভজন ও কবীরের দোঁহা, সঙ্গে অসীম সরকারের কবিগান। ৪ সেপ্টেম্বর ওয়াদালি ব্রাদার্স-এর সুফিগান আর সুরজিৎ সেনের কীর্তন। উৎসবে বিশেষ নিবেদন শ্মশাননৃত্য প্রদর্শনী।

দেবদেবী

ইতিহাসের অধিষ্ঠানে প্রায় আড়াই হাজার বছরে ভক্তি-আরাধনা মিশে আছে দেবদেবীকে নিয়ে। বৈদিক যুগ, মহাভারত ও রামায়ণের প্রেক্ষাপট, পুরাণ, বৌদ্ধধর্মমত পেরিয়ে আজ বাংলায় দেবত্বের নানা রূপ। পৌরাণিক ও লৌকিকের বহু ক্ষেত্রেই মিলমিশের ইঙ্গিত। সাউথ হাওড়া সিটিজেন্স ফোরাম-এর আয়োজনে সংস্থার মাসিক বক্তৃতায় বললেন প্রসার ভারতীর সি ই ও জহর সরকার। তাঁর রসিক ভাষ্য— মূলত রাজন্য অনুগ্রাহীর প্রকল্প রূপায়ণেই সৃষ্টি মঙ্গলকাব্য। ‘আমাদের দেবদেবী: পৌরাণিক ও লৌকিক’ শিরোনামে দুর্গা, কালী, শিব, বিষ্ণু, কৃষ্ণ থেকে চণ্ডী, দক্ষিণরায়, ওলাবিবি— বাংলার দেবদেবী নিয়ে ছিল তাঁর গবেষণাভিত্তিক সরস উপস্থাপনা।

শিল্পপত্র

সমসময়ের শিল্পমাধ্যমগুলির বহুবিধ গতায়াত নিয়েই চর্চা ‘ত্রিমুখী প্ল্যাটফর্ম’-এর। শিল্পচর্চার কেন্দ্র শুধু মহানগরই কেন হবে, এই ভাবনা থেকে, কলকাতা থেকে বহু দূরের এক গ্রামে, স্থানীয় মানুষের সহায়তায় তাঁরা তৈরি করেছেন ‘ত্রিমুখী কালচারাল সেন্টার’, শুরু করেছেন রাতভর নাট্যোৎসব ‘নাইট অব থিয়েটার’ও। দেশবিদেশের শিল্পী ও চিন্তকরাও যুক্ত এই প্রচেষ্টায়। তারই অঙ্গ হিসেবে ওরা প্রকাশ করছে ‘ফ্যাব্রিক অব আর্ট’ নামের বার্ষিক দ্বিভাষিক জার্নাল। ১২টি দেশের ২১জন শিল্পী-লেখকের কাজ— কবিতা, থিয়েটার, সিনেমা, ডিজিটাল আর্ট, স্থাপত্য ও সঙ্গীতভাবনা এসে মিলেছে এই জার্নালে। ১ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাতটায় কলকাতার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-এ প্রকাশ-অনুষ্ঠান, থাকবেন সম্পাদক জঁ-ফ্রেদেরিক শেভালিয়ে, স্যমন্তক দাস, চিত্রভানু মজুমদার, নীলাঞ্জনা গুপ্ত, মধুজা মুখোপাধ্যায় ও ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ।

সংগীতানুষ্ঠান

সত্তরের দশকে সংগীতজগতে আবির্ভাব। শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের কাছে রবীন্দ্রসংগীত ও পূরবী ভৌমিকের কাছে ধ্রুপদী গানে তালিম নেওয়া ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়কে বাণী ঠাকুর তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘কিংশুক’-এর অনুষ্ঠানমঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। নানা কোম্পানি থেকে তাঁর রেকর্ড প্রকাশিত। এ ভাবেই ভাস্বতী কাটিয়ে দিলেন চল্লিশ বছর। সেই উপলক্ষে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ৩১ অগস্ট সন্ধে ৬টায়, তাঁর সংগীত শিক্ষায়তন ‘খোয়াই’ আয়োজন করেছে এক সংগীতসন্ধ্যার। অন্য দিকে, রবীন্দ্রনাথের গল্পের বিভিন্ন প্রতিবাদিনী নারী চরিত্রের মানবিক উত্তরণকে কেন্দ্র করে ৩ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘তুমি অকুণ্ঠিতা’ শীর্ষক সংগীতানুষ্ঠান। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় প্রমিতা মল্লিক।

নতুন ভাবনা

বাংলায় পোড়ামাটি শিল্পের ধারা লোকশিল্পধারায় উজ্জ্বল। বর্ধমান জেলার দোলন কুণ্ডু মণ্ডল তেত্রিশ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন। ছোটবেলায় মায়ের কাছেই হাতেখড়ি। তার পর শিল্পী শ্যামলবরণ সাহার কাছে দীর্ঘ দিন শিক্ষা করেছেন। এ বার বত্রিশটি কাজ নিয়ে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ তাঁর একক প্রদর্শনী, ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৩-৮টা)। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে। অন্য দিকে, কোনও ছবিতে পুরাণের রাম-সীতা অটো চড়ে ভ্রমণে, কোনওটাতে বা অটো চালাচ্ছেন লঙ্কারাজ রাবণ, এমনকী কুম্ভকর্ণ শুধু ঘুমিয়েই কাটাচ্ছেন না, সাইকেল চালাচ্ছেন— হালফিলের এমনই দৃষ্টিভঙ্গিতে রামায়ণকেন্দ্রিক ছাব্বিশটি ছোট কাজ ও একটি বড় কাজ নিয়ে কলাভবনের প্রাক্তনী প্রদীপ্ত চক্রবর্তীর ‘পুরাণ প্লে’ শীর্ষক একক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে উইভার্স স্টুডিয়ো-য় (বালিগঞ্জ)। চলবে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৪-৮টা)। সামগ্রিক পরিকল্পনায় শৌনক চক্রবর্তী।

ছকের বাইরে

অচেনা-অজানা পথ পাড়ি দিতে দিতে পায়ে পায়ে পঁচিশটা বছর পার করে দিল একটি ভ্রমণ সংস্থা! অবশ্য নিছক ভ্রমণ সংস্থা বললে ‘হেল্প ট্যুরিজম’ সম্পর্কে অসত্যভাষণ হয়। বস্তুত, ছকে বাঁধা বেড়ানো আর বিনোদনের বাইরে গিয়ে স্থানীয় প্রকৃতি, বন ও বন্যপ্রাণ এবং স্থানীয় মানুষজনকে চেনানোর গন্তব্য হয়ে উঠছে এই সংস্থা। সেই ১৯৯১ সালের অগস্টে শিলিগুড়ির তিন তরতাজা যুবক মূলত উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বের নানা অচেনা গন্তব্য চেনানর আনন্দে তৈরি করেন এই সংস্থা। ধীরে ধীরে তা ডালপালা মেলেছে নানা জায়গায়। রাজ বসু, অসিত বিশ্বাস ও সঞ্জীব সাহা-রা আজও বিশ্বাস করেন, ভ্রমণ মানে নিছক ‘সেভেন পয়েন্ট’ বা ‘নাইন পয়েন্ট’ গুনে ঘোরা নয়, তার বাইরে আরও অনেক কিছু।

সৃজনী প্রতিভা

জীবনীমূলক নাটকের অভিনয়ে তিনি তুখোড়— ডিরোজিওকে নিয়ে ‘আগন্তুক’, ‘বিনোদিনী কথা’ নাটকে গিরিশচন্দ্র, বিভাস চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ‘হ্যামলেট’ও করেছেন। ‘সিরাজদ্দৌলা’য় সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখে শঙ্খ ঘোষের মনে হয়েছিল যে, কণ্ঠধ্বনি ও বুদ্ধিমত্তার মিশ্রণে একটি চরিত্রকে নতুন করে তৈরির জন্য তাঁকে সময় মনে রাখবে। ‘শের আফগানের টিনের তলোয়ার’-এ উৎপল দত্তের চরিত্রে তাঁর অভিনয় দেখে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘অভিনয়টা যে লেভেলে তোমরা (দেবশঙ্কর ও সুরজিৎ) নিয়ে গিয়েছ, দমবন্ধ করে দেখতে হয় এই নাটক।’ ‘শ্রীশম্ভু মিত্র’ নাটকে তাঁর শম্ভু মিত্রের চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে শাঁওলী মিত্র সুরজিৎকে বলেছিলেন, ‘আমার যে সহকারীটি নাটকটি দেখতে এসেছিল, আজ তোর অভিনয় দেখে বলল, দিদি, তোমার বাবার অনেক ভিডিয়ো ক্লিপিংস, অনেক গল্প শুনেছি, কিন্তু আজ তাঁকে চাক্ষুষ করলাম।’ সম্প্রতি, স্বপন সেনগুপ্তের পরিচালনা ও নির্দেশনায় নতুন নাটক ‘শ্রীমধুসূদন’-এ (নাট্যরঙ্গ) মাইকেল মধুসূদনের ভূমিকায় তাঁর অভিনয়ও প্রশংসিত। যার পরবর্তী অভিনয় অ্যাকাডেমিতে, ১১ সেপ্টেম্বর, দুপুর আড়াইটেয়। সুরজিতের মেজমামা ছিলেন শিশির ভাদুড়ির ছাত্র, ছোটমামা স্বপনকুমার যাত্রা-র প্রবাদপ্রতিম নায়ক। মামাদের প্রেরণাতেই অভিনয়ে। রঙ্গমঞ্চে আগে থেকেই, তবে ১৯৯৬-এ পাকাপাকি নাট্যরঙ্গ-এ, এ বছর কুড়ি পূর্ণ হচ্ছে।

ফিরে দেখা

ঐ সময় প্রেসিডেন্সির আকর্ষণ ছিলেন সুশোভন সরকার— খ্যাতিমান অধ্যাপক। মার্কস্‌ এঙ্গেল্‌স-এর নাম না করেই মার্কসিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিহাস পড়াতেন...।’ তাঁর কমিউনিস্ট হয়ে ওঠার স্মৃতি জানিয়েছেন গোলাম কুদ্দুস (১৯২০-২০০৬)। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়া ১৯৪০-এ। কুষ্টিয়া থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতা। জন্ম কুষ্টিয়ার ধলনগরে, বাবা বিখ্যাত উকিল গোলাম দরবেশ জোয়ারদার আর মা সৈয়দুন্নেসা খাতুন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এম এ কুদ্দুস বাইশ বছর বয়সেই ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস’-এর যুগ্ম সম্পাদক হন জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের সঙ্গে। চল্লিশের দশকে ফ্যাসিবিরোধী কবিদের সংকলন একসূত্রে-র যুগ্ম সম্পাদনা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। নিজের প্রথম কবিতার বই বিদীর্ণ-র (১৯৫০) ঠিক এক বছর পর ইলা মিত্র কাব্যগ্রন্থের নামকবিতাটি হয়ে ওঠে স্লোগানের মতো, আবৃত্তি আরম্ভ করেছিলেন শম্ভু মিত্র। বিপ্লবী ইলা মিত্রকে তৎকালীন পুলিশ অমানুষিক অত্যাচার করে রাজশাহি জেলে। নাচে মনময়ূর, নবরামায়ণ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও উপন্যাস, গদ্য, প্রবন্ধ, রিপোর্টাজ লিখেছেন কুদ্দুস— বাঁদী, লেখা নেই স্বর্ণাক্ষরে ইত্যাদি। পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার। স্ত্রী হেনা মৈত্র সহ আজীবন সমাজের উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ মানুষটিকে বাঙালির মনে ফিরিয়ে আনতে পবন সাহার সম্পাদনায় প্রকাশ পেল গোলাম কুদ্দুসের নির্বাচিত কবিতা (পাঠক)। কুদ্দুসের রচনাপঞ্জি ও সংক্ষিপ্ত জীবনীতথ্য সবই সযত্নে সাজিয়েছেন সম্পাদক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE