বিমানবন্দর থেকে ‘ফর্টিস’ হাসপাতালে নিয়ে আসা হল বরুণের হার্ট। নিজস্ব চিত্র।
হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপনের একটি অস্ত্রোপচারের সঙ্গে জুড়ে গেল তিনটি শহর। প্রথম শহরের একটি চিকিৎসক দল দ্বিতীয় শহর থেকে এক ব্যক্তির হার্ট সংগ্রহ করে তৃতীয় শহরের হাসপাতালে এক রোগীর দেহে তা সফল ভাবে প্রতিস্থাপিত করলেন। সব মিলিয়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ভ ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা।
যে চিকিৎসকের নেতৃত্বে সোমবার কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে সফল এই অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই তাপস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কলকাতা তো বটেই, পূর্ব ভারতে হার্ট প্রতিস্থাপনের এমন জটিল অস্ত্রোপচার এই প্রথম। এটা একটা ইতিহাস। কারণ, চেন্নাই থেকে চিকিৎসকেরা বেঙ্গালুরু গিয়ে ব্রেন ডেথ হওয়া এক ব্যক্তির হার্ট সংগ্রহ করেন। তার পর তা উড়িয়ে কলকাতায় নিয়ে এসে প্রতিস্থাপন করেন অন্য এক রোগীর দেহে। এমনটা এর আগে হয়নি।’’ তিনি আরও জানান, ৬ চিকিৎসকের একটি দল এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বাইপাসের ধারের ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রবিবার বেঙ্গালুরুতে পথদুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন বরুণ ডিকে নামে এক ব্যক্তি। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, বরুণের ব্রেন ডেথ হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা দিলচাঁদ সিংহ বেশ কয়েক বছর ধরে হার্টের গুরুতর সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় তার নাম ডায়ালেটেড কার্ডিয়াক মায়োপ্যাথি। বেশ কিছু দিন ধরে তিনি কলকাতায় ‘ফর্টিস’-এ ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়া দিলচাঁদের হৃদ্যন্ত্রের অবিলম্বে প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। বরুণ ভর্তি হয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর স্পর্শ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। বরুণের ব্রেন ডেথের পর তাঁর পরিবার হার্ট দান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। সেই সময় স্পর্শের তরফে চেন্নাই ফর্টিস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখনই ফর্টিস কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, সব কিছু ঠিক থাকলে দিলচাঁদের শরীরে বরুণের হার্ট প্রতিস্থাপিত করা হবে। বরুণের পরিবারও তাতে সম্মতি জানায়।
হাসপাতালে দিলচাঁদ সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।
সেই মতো সোমবার সকালেই তাপসবাবুর নেতৃত্বে একটি দল চেন্নাই থেকে বেঙ্গালুরু পৌঁছয়। বরুণের দেহ থেকে হার্ট সংগ্রহ করা হয়। এর পর বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত সেই হার্ট বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় বিশেষ বিমানে করে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দাতার শরীর থেকে হার্ট সংগ্রেহর পর সর্বাধিক চার ঘণ্টার মধ্যেই তা গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপিত করতে হয়। না হলে বিষয়টি অকার্যকরী হয়ে পড়ে। সময় নির্ধারিত হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে দ্রুত ‘ফর্টিস’-এ বরুণের হার্ট পৌঁছনোর দরকার ছিল। সে কারণে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয় হাসপাতালের তরফে।
দেখুন ভিডিয়ো
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে, এ দিন সকালে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং কলকাতা পুলিশ যৌথ ভাবে একটি গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা করে। যাতে মিনিট কুড়ির ভিতরে বিমানবন্দর থেকে ফর্টিস হাসপাতালে বরুণের হার্ট পৌঁছে যায়। বিধাননগর পুলিশের ডিসি সদর অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরেই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে আমরা গোটা পরিকল্পনাটা তৈরি করি। কারণ, ১৮ কিলোমিটার রাস্তার একটা বড় অংশ কলকাতা পুলিশের এলাকা। সেই অনুযায়ী, আমরা পাইলট কার দিয়ে পুরো রাস্তাটা অ্যাম্বুল্যান্সকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। ট্রাফিকের সমস্ত কর্মীকেই গ্রিন করিডর প্রসঙ্গে জানানো ছিল। কোথাও কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে, তা কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে, জানানো ছিল তা-ও।’’
দেখুন ভিডিয়ো
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় বিশেষ ওই বিমান। বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করছিল বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স। ১১টা ৭ মিনিট নাগাদ ওই অ্যাম্বুল্যান্স বরুণের হৃদযন্ত্র নিয়ে রওনা হয় ফর্টিসের উদ্দেশে। সকালের এই ব্যস্ত সময়ে পুলিশকর্মীদের তৎপরতায় ভিআইপি রোড, বাইপাস ধরে মাত্র ১৮ মিনিটে ১৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফর্টিস-এ পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্স। ভিআইপি-র উপর কৈখালির কাছে কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটু মন্থর হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সের গতি। কিন্তু, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন পুলিশকর্মীরা।
আরও পড়ুন: বৈঠক ডাকলেন নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ
এ দিন বিকেলে ফর্টিসের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়, দিলচাঁদের দেহে বরুণের হৃদ্যন্ত্র ঘণ্টা দুয়েকের অস্ত্রপোচারের পর সফল ভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হোমে এগারো বছরের ছেলেকে বেত দিয়ে মার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy