Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঐতিহ্যের হাত ধরে খুলে যাক আয়ের পথও

ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হেরিটেজ বাড়ি এবং হেরিটেজ এলাকা (যেখানে অনেক বাড়ি বা ভবনও থাকে)।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পার্থরঞ্জন দাশ (রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য ও হেরিটেজ বিশেষজ্ঞ)
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৭
Share: Save:

যে কোনও শহরেরই ঐতিহ্যের মধ্যে একটা নিজস্বতা থাকে। সেটা সেই শহরের নিজস্ব ছাপ আর গন্ধ। কলকাতার হেরিটেজের সঙ্গে দিল্লি, আমদাবাদ বা অন্য কোনও শহরের হেরিটেজ তুলনীয় নয়। কলকাতার মতো যে কোনও পুরনো শহরেই দু’ধরনের হেরিটেজ দেখা যায়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হেরিটেজ বাড়ি এবং হেরিটেজ এলাকা (যেখানে অনেক বাড়ি বা ভবনও থাকে)।

কিন্তু এই শহরে দু’টি ক্ষেত্রে সমস্যা একই। কী ভাবে সেই পুরনো বাড়িগুলি সংরক্ষণ করা হবে? কলকাতায় যে কোনও পুরনো বাড়ি সংরক্ষণই ভীষণ কঠিন। কারণ, এখনও এ শহরের হেরিটেজ-সচেতনতা তেমন ভাবে তৈরি হয়নি। প্রথমত, যে ভাবে শহরের বিভিন্ন বাড়িকে বিভিন্ন রকমের গ্রেডের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে। যে বাড়ির যে গ্রেড প্রাপ্য, তেমনটা দেওয়া হয়নি। গ্রেড ওয়ানের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়, এমন বাড়িকেও গ্রেড ওয়ানের আওতায় আনা হয়েছে। আবার গ্রেডেশনের অবনমন ঘটিয়ে অনেক বাড়িকে ভেঙেও ফেলা হচ্ছে। অথচ, কোন বাড়ির গ্রেড কী হবে, কী ভাবে সেগুলির সংস্কার করতে হবে, সংস্কারের প্রয়োজনে সেখানে কী কী পরিবর্তন করা সম্ভব— এমন হাজারো বিষয়ে ইউনেস্কো-র পরিষ্কার গাইডলাইন রয়েছে। কিন্তু কলকাতায় সেই গাইডলাইন বিন্দুমাত্র মেনে চলা হয়নি বা হচ্ছে না। যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার!

পুরনো বাড়িকে পুরনো বাড়ি করেই রাখব, এমন সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে কিন্তু সেই বাড়িগুলি রক্ষা করা যাবে না। ওল্ড কেনিলওয়ার্থ হোটেলের মতো গ্রেডেশনের পরিবর্তন করে তা ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে। ঐতিহ্য থাকবে, সেই সঙ্গে তার একটা আর্থিক মূল্যও থাকবে, এমনটা করলে অনেক পুরনো বাড়িই রক্ষা করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে আইনেও বদল আনতে হবে। পুরনো বাড়িগুলির একাংশ যদি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যায়, তা হলে সেটি সহজে ভেঙে ফেলতে চাইবেন না সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক। সে ক্ষেত্রে বাড়িগুলিকে ‘রেসিডেন্সিয়াল’ থেকে ‘নন-রেসিডেন্সিয়াল’-এ পরিবর্তনের অনুমোদন দিতে হবে। বিশ্বের অনেক জায়গাতেই পুরনো বাড়িকে আয়ের বিকল্প উৎস করে তোলা হয়েছে। ব্রিটেন, ফিলিপিন্স-সহ একাধিক দেশে হেরিটেজ ভবনকে মূল অর্থনীতিতে ব্রাত্য করে রাখা হয়নি, বরং সেগুলি থেকেই আয়ের নতুন মাধ্যম বার করা হয়েছে। ‘অ্যাডাপটিভ রি-ইউজ’ ছাড়া পুরনো বাড়ি সংরক্ষণ করাটা কিন্তু ভীষণই মুশকিল। এ ব্যাপারে সচেতনতা সবার আগে প্রয়োজন।

শহরের উন্নয়নের একটা চাপ থাকেই। কিন্তু তা করতে গিয়ে যদি পুরনো বাড়ি, ঐতিহ্যশালী বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, তা হলে শহরে শুধু বহুতলই থাকবে। ফলে ঐতিহ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কী ভাবে পুরনো বাড়ি সংরক্ষণ করা যায়, তা ভাবতে হবে। ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আর দেরি করলে চলবে না। দেরি হয়ে গেলে শহরের নিজস্ব যে হেরিটেজশৈলী, নিজস্ব গন্ধ, তা কিন্তু দ্রুত হারিয়ে যাবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heritage Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE