Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাড়ায় খুনি মেলে মাত্র কয়েক হাজার টাকাতেই!

কৈখালিতে সিভিক ভলান্টিয়ারকে খুনের ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে ভাড়াটে খুনি নিয়োগের অভিযোগ সামনে আসতে পুলিশ কর্মীদের মনে পড়ছে ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে অক্সিটাউন হত্যা-কাণ্ডের কথা।

ধৃত: আদালতের পথে দুই অভিযুক্ত সুপ্রতিম দাস (বাঁ দিকে) এবং মীরা দাস। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়, স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ধৃত: আদালতের পথে দুই অভিযুক্ত সুপ্রতিম দাস (বাঁ দিকে) এবং মীরা দাস। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়, স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

ঘরে গৃহকর্ত্রী ও পরিচারিকার নলি কাটা দেহ। বাড়ি থেকে উধাও গয়নাগাঁটি। প্রথমে পুলিশ ভেবেছিল, লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন। কিন্তু তদন্ত এগোতেই সামনে আসে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা। পুলিশ জানিয়েছে, বেহালার অক্সিটাউনে ওই বাড়ির কর্তা অভীক ঘোষই ‘সুপারি কিলার’ (ভাড়াটে খুনি) লাগিয়ে স্ত্রী ও পরিচারিকাকে খুন করিয়েছিল।

কৈখালিতে সিভিক ভলান্টিয়ারকে খুনের ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে ভাড়াটে খুনি নিয়োগের অভিযোগ সামনে আসতে পুলিশ কর্মীদের মনে পড়ছে ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে অক্সিটাউন হত্যা-কাণ্ডের কথা। ইতিমধ্যে অভীককে ফাঁসি ও ভাড়াটে খুনি সোমনাথ তাঁতিকে যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছে আদালত। পুলিশের দাবি, গত বছর দক্ষিণ শহরতলির রাজপুরে পারিবারিক বিবাদের জেরে ভাড়াটে খুনি দিয়ে জামাইকে খুন করে শ্বশুর।

লালবাজার ও সিআইডি-র একাংশের মতে, এক সময়ে দক্ষিণ শহরতলিতে ভা়ড়াটে খুনিদের দাপট থাকলেও তা এখন অনেক কমেছে। কিন্তু মহানগর থেকে তারা উধাও হয়নি। অনেকেই মনে করেন, ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করলে প্রচুর টাকা দিতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কয়েক হাজার টাকা ও মদের বোতলেও কাজ সেরে ফেলা যায়। বেকারত্ব, সহজলভ্য অস্ত্র— এ সবের ফলেই অনেকে ভাড়াটে খুনি হয়ে উঠছে বলে মনে করছে পুলিশেরই একাংশ।

খুন করেও পুরো টাকা পায়নি, এমন খুনিও রয়েছে! ২০০১ সালে লালবাজারের অদূরে গুলি করে খুন করা হয়েছিল পার্সি মহিলা নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়াকে। লালবাজারের খবর, ২০১৭ সালে বেনিয়াপুকুরের এক দুষ্কৃতী সরফুদ্দিন ওরফে সরফুকে গ্রেফতারের পরে রহস্যের পর্দা ফাঁস হয়। জানা যায়, নাবালক অবস্থায় সরফুই ছিল ভাড়াটে খুনি! ৫০ হাজার টাকার টোপ দিয়ে তাকে কাজে লাগিয়েছিল নওয়াজের পরিচারিকা ক্যাথরিনের স্বামী মহম্মদ মোহিত ওরফে মইস। প্রথম দফায় ২৫ হাজার টাকা দিলেও কাজ হাসিলের পরেই চম্পট দেয় সে। ১৬ বছর ঘুরেও মইসের হদিস পায়নি সরফু। ‘‘ধরা পড়ার পরে এই আক্ষেপের কথা জানিয়েছিল সরফু নিজেই,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

পুলিশই বলছে, ২০০৫ সালে একটি ছোট চায়ের দোকান সরানোর জন্য বড়বাজারের দুষ্কৃতী গোপাল তিওয়ারিকে কাজে লাগিয়েছিল এক ভুজিয়া সংস্থার কর্ণধার। গুলিতে চায়ের দোকানি মরেননি। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সেই দুষ্কৃতী ও ষড়যন্ত্রকারী। ২০১১ সালে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটেও বাড়ির দখল নিতে বিহারের এক খুনিকে কাজে লাগানো হয়।

গত দশকের শুরুতেই দমদমে বাড়ির সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা যান পুরপ্রধান শৈলেন দাস। পুলিশই বলছে, ষড়যন্ত্রীরা কাজে লাগিয়েছিল ভা়ড়াটে খুনিদের। গত দশকের মাঝামাঝি হাওড়ার ঘুসুড়িতে খুন হন ছাঁট লোহার ব্যবসায়ী কিষণ জৈন। ‘সুপারি কিলার’ এসেছিল বিহার থেকে। নেপথ্যে হাওড়ার ছাঁট মাফিয়া অমিত চৌধুরী। পুলিশেরই একাংশ বলছে, দুই গোয়েন্দা সংস্থার টানাপ়ড়েনে ফস্কে যায় অমিত। পরে অন্য মামলায় ধরা পড়ে সে। হুগলিতে হুব্বা শ্যামলের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ ছিল অজস্র। সে-ও খুন হয় বিরোধী গোষ্ঠীর ভাড়াটে খুনির হাতে।

বহু সময়েই এই খুনিরা নিজেরাই শিকার হয়ে যায়। উঠে আসে নতুন মুখ। মধ্যমগ্রামে মাটিবাবু বা ঢাকাই গৌতমের খুনই তার প্রমাণ। গৌতমের নামেও একাধিক খুনের অভিযোগ। চলতি বছরের গো়ড়ায় সেই গৌতমকেই মধ্যমগ্রামের এক সেলুনে ঢুকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় ভাড়াটে খুনির দল। তার আগে মধ্যমগ্রামে মাটিবাবুকে খুনে মূল অভিযুক্ত প্রদীপ দে ওরফে পদ খুনি ভা়ড়া করে জনবহুল রাস্তাতেই কাজ হাসিল করেছিল।

এই সব ঘটনার মধ্যেই পুলিশ ও সিআইডি-র প্রবীণ কর্তাদের মনে পড়ছে শহর লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার পুরনো খুনিদের কথা। এক প্রবীণ আইপিএস অফিসার বলছেন, ‘‘লেকটাউনের পলাশ দাস, মহেশতলার রাজা রডরিগস, ব্যারাকপুরের তপন ভৌমিক, নৈহাটির শেখ বাচ্চুর নামে নিয়মিত অভিযোগ জমা পড়ত। ওদের কেউ এখন জেলে, কেউ বা মারা গিয়েছে। কত সুপারি কিলার তো রাজনীতিও করছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Contract Killers Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE