Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

একই চিকিৎসায় ভিন্ন ব্যয় কেন, প্রশ্ন

বলা হয়েছে— তিন রোগীর সঙ্গে এক ঘরে থেকে কানের ফুটো মেরামতির অস্ত্রোপচার করাতে লাগবে ৬০ হাজার টাকা। ওই অস্ত্রোপচার একা একটি ঘরে থেকে করালে লাগবে প্রায় ১ লক্ষ টাকা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

দিন কয়েক আগের কথা। আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের তরফে প্রচারমূলক বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল মোবাইলে। ইএনটি অর্থাৎ নাক-কান-গলা সংক্রান্ত চিকিৎসার বড় ‘অফার’-এর কথা বলা ছিল তাতে, সঙ্গে চিকিৎসার খরচও দেওয়া হয়েছিল। যা দেখে চোখ কপালে ওঠার দশা বেশির ভাগ মানুষেরই।

বলা হয়েছে— তিন রোগীর সঙ্গে এক ঘরে থেকে কানের ফুটো মেরামতির অস্ত্রোপচার করাতে লাগবে ৬০ হাজার টাকা। ওই অস্ত্রোপচার একা একটি ঘরে থেকে করালে লাগবে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। সাইনাসের অস্ত্রোপচারের জন্য এই খরচ যথাক্রমে ৯৫ হাজার এবং ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। টনসিলেক্টমির জন্য খরচ ৭৫ হাজার এবং ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।

এই খরচ কি যুক্তিযুক্ত? হাসপাতালের মার্কেটিংয়ের প্রধান সুরজিৎ ঘোষের জবাব, ‘‘নিশ্চয় যুক্তি আছে। আমাদের চিকিৎসকদের নিয়ে দল তৈরি আছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই এই প্যাকেজ তৈরি হয়েছে।’’

যদিও ওই হাসপাতালের ইএনটি চিকিৎসক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও আলোচনা হয়নি। ডাক্তারেরা এই ছোট অস্ত্রোপচারগুলির জন্য এত টাকা দর ঠিক করবেন কেন? হাসপাতালগুলি অবাস্তব প্যাকেজ তৈরি করে।’’

খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, যাদবপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে এসি কেবিনে একা থেকে সাইনাসের অস্ত্রোপচার করানোর সর্বোচ্চ প্যাকেজ ৫০ হাজার টাকা, কানের ফুটো ঠিক করার প্যাকেজ ৩০ হাজার এবং টনসিলেক্টমির খরচ ৩৫ হাজার। ডাক্তারের মান, যন্ত্রপাতি, ওষুধ, ঘর, খাবার প্রায় এক হওয়া সত্ত্বেও
একই শহরের দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে একই অস্ত্রোপচারের খরচে বিস্তর তফাৎ। সব ধরনের চিকিৎসায় একই অবস্থা। এক দিনের ডায়ালিসিসের জন্য পঞ্চসায়র, বাইপাসের ধারের, বেলেঘাটা কানেক্টরের ও আনন্দপুরের একটি হাসপাতাল নেয় যথাক্রমে ১৭০০ টাকা, ২৪০০ টাকা, ৩০০০ টাকা এবং ২০৬০ টাকা। সিজ়ারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে ন্যূনতম প্যাকেজ ৮০ হাজার, আনন্দপুরের এক হাসপাতালে ৯০ হাজার, আবার যাদবপুরের একটি হাসপাতালে ৭৫ হাজার নেওয়া হয়। বেলেঘাটা কানেক্টরের একটি হাসপাতালের তরফে জানানো হল— কী ধরনের ঘরে রোগী থাকবেন, কোন ডাক্তার তাঁকে দেখবেন, এই সবের উপরে খরচ নির্ধারিত হবে। একাধিক হাসপাতাল জানিয়েছে, কখনও প্যাকেজ ঠিক করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার কখনও চিকিৎসকদের মত নেওয়া হয়। কোথাও তার মধ্যেই ধরা থাকে চিকিৎসকদের ফি, কোথাও আবার তা হয় না।

একই ধরনের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচের মধ্যে ফারাক নিয়ে সরব হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ধাঁচে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে বিভিন্ন চিকিৎসার গ্রহণযোগ্য প্যাকেজ বেঁধে দেওয়ার কথাও বলেছিল রাজ্য সরকার।
বহু টালবাহানার পরে মাস তিনেক আগে রাজ্যের ১৫-১৬টি হাসপাতাল রাজ্যের স্বাস্থ্য রেগুলেটরি কমিশনের কাছে নিজেদের প্যাকেজ জমা দেয়। কিন্তু তার পরেও সবার গ্রহণযোগ্য প্যাকেজ তৈরির প্রক্রিয়া এগোয়নি। স্বাস্থ্য কমিশনের সচিব আরশাদ হাসান ওয়ারসি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে মন্তব্য করব না।’’ চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত অনেকেরই মত, দু’-এক মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে চিকিৎসা বিমা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করতে চলেছে। তাতে সব বেসরকারি হাসপাতালই আগ্রহী। প্রতিটি রাজ্যের সরকারও বিষয়টি বুঝে নিতে চাইছে। সব মিলিয়ে তাই ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

costs treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE