Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আইপিএল নিয়ে দেদার ব্যবসা ইডেনের সামনে

খদ্দেরের কাছে পৌঁছনোর পরে অবশ্য বদলে যাচ্ছে বলার কায়দা। গলা নামিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ‘‘৫০০ টাকা বেশি দিতে হবে। নিতে হলে নিন। নইলে নেওয়ার অনেক লোক আছে।’

 ...ফস্কা গেরো: ইডেনের সামনে পুলিশি ধরপাকড়।

 ...ফস্কা গেরো: ইডেনের সামনে পুলিশি ধরপাকড়।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৩:৩৩
Share: Save:

‘‘যা লেখা, তা-ই দিন। এক দাম।’’ ফেরি করার কায়দায় চিৎকার করতে করতে খদ্দেরের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে অনায়াসেই। কয়েক হাত দূরে দাঁড়ানো পুলিশেরও পরোয়া নেই। কখনও পুলিশ ধরলেও সহজ উত্তর, ‘‘একে ব্ল্যাক বলে নাকি? যা দাম, তাই তো নিচ্ছি!’’

খদ্দেরের কাছে পৌঁছনোর পরে অবশ্য বদলে যাচ্ছে বলার কায়দা। গলা নামিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ‘‘৫০০ টাকা বেশি দিতে হবে। নিতে হলে নিন। নইলে নেওয়ার অনেক লোক আছে।’’

আগে এক রকম দাম বলে পরে বেশি চাইছেন কেন? বিক্রেতার সহজ হিসেব, ‘‘প্রথমেই বেশি দাম চাইলে ধরা পড়ে যেতে হবে। করুণ মুখ করে কার টিকিট লাগবে, বুঝে নেওয়া ভাল। তার পরে কাছে গিয়ে বাড়তি দাম চাইতে হয়। এতে কার টিকিট লাগবে, সহজে বোঝা যায়। পুলিশকেও বোকা বানানো যায়!’’

বুধবার আইপিএল-এর এলিমিনেশন পর্বের ম্যাচের আগে এ ভাবেই চলল টিকিটের কালোবাজারি। যদিও পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা ছিল যথেষ্ট। আশপাশের থানা থেকে পুলিশকর্মীদের মোতায়েন করার পাশাপাশি টিকিটের কালোবাজারি রুখতে সাদা পোশাকে লালবাজারের অফিসারেরাও ছিলেন। তবু কালোবাজারি আটকানো গেল না কেন? ইডেন সংলগ্ন টিকিট কাউন্টারের সামনে বসা এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘কী করে আটকাব? এরা নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে। গত কাল মেয়েরা সব থেকে বেশি টিকিট ব্ল্যাক করল। বেশ কয়েক জনকে ধরেছি। আজ তাই মহিলা পুলিশ দিতে বলেছি।’’

পাল্লা দিয়ে চলছে টিকিটের কালোবাজারিও। বুধবার।

ওই আধিকারিক জানালেন, একসঙ্গে অনেক ক্রেতা ধরতে লোকও নিয়োগ করছেন কেউ কেউ। তাঁর কথায় ‘‘এক যুবক বেশ কিছু ক্ষণ নিজেই লোক ধরছিল। ম্যাচের সময় এগিয়ে আসছে দেখে কেকেআর-এর ফ্ল্যাগ বিক্রি করতে আসা কয়েকটি ছেলেকে ওই কাজে নামিয়ে দিল। বলে দিল, ১২০০ টাকার টিকিট আছে। তোরা নিজেদের লাভ রেখে বিক্রি কর। আমি শুধু যা লেখা, সেই দাম নেব। ফোন নম্বর আদান-প্রদান করে ছড়িয়ে পড়ল সকলে!’’ ওই পুলিশকর্মীর আক্ষেপ, ‘‘এতগুলো ছেলেকে এ ভাবে ধরা যায়?’’

কমিশন দেওয়ার শর্তে সঙ্গে থাকা টিকিট ওই পতাকা-বিক্রেতাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে এক যুবককে আবার দেখা গেল মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিছু ক্ষণ পরেই পকেট থেকে বেরিয়ে এল আর একটি ফোন। একের পর এক নম্বরে ফোন করে বলতে শুরু করলেন, ‘‘রাজস্থানে আজ ৫৫ হাজার লাগাতে বল। হায়দরাবাদ আর চেন্নাই হচ্ছে বড় ম্যাচ। তোরা তো কিচ্ছু বুঝিস না!’’ পরমুহূর্তেই সঙ্গীর ঘাড়ে হাত রেখে বসে পা দোলাতে দোলাতে তাঁর স্বগতোক্তি, ‘‘চার বছর ধরে আইপিএল চালাচ্ছি। এমনি নয় ভাই! যা বললাম, মিলিয়ে নিস। রাতে পার্টি দিচ্ছি তোদের।’’

আজ কে জিতছে দাদা? উত্তরে মুচকি হেসে ওই যুবক অবশ্য বললেন, ‘‘খেলা তো হবে, দেখাই যাক!’’

মহমেডান তাঁবুর কাছে দু’জন মাঝবয়সি ব্যক্তিকে আবার দেখা গেল, টিকিট হাতে ভিড় দেখলেই তেড়ে যাচ্ছেন। সাদা জামা, ট্রাউজার্স আর স্নিকার্স পায়ে তাঁদের দেখে ছুটে পালাচ্ছেন কেউ কেউ। ওই ব্যক্তিদেরই শেষবেলায় এক টিকিট বিক্রেতাকে কড়া ধমক দিতে দেখা গেল। বললেন, ‘‘সারা দিন অনেক কামিয়েছিস। এ বার টাকা ছাড়।’’ বিক্রেতা বললেন, ‘‘চলুন চিকেন স্টু খাইয়ে দিচ্ছি।’’ ফের ধমক।

এ বার পকেট থেকে কয়েকটি ১০০-২০০ টাকার নোট বার করে তাঁদের হাতে দিলেন টিকিট-বিক্রেতা। বোঝাপড়ার ভুলে নোট হাওয়ায় উড়ে গিয়ে পড়ল মাটিতে। মাটি থেকে সেগুলি কুড়িয়ে নিয়ে হাঁটা দিলেন ওই দু’জন।

ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IPL Ticket Police Ticket Blackers Mohammedan club
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE