Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উৎসবে রং বদলাবে হাওড়া ব্রিজ

সেই মতোই ২০০৬ সালে প্রথম বার নতুন করে আলো লাগানো হয়েছিল হাও়ড়া ব্রিজে। তার আগে পর্যন্ত ব্রিজে সাধারণ আলো লাগানো ছিল। সেই আলো থেকেই ওই বছরে সোডিয়াম ভেপার আলোয় উত্তরণ হয়েছিল হাওড়া ব্রিজের।

আলোকিত: নানা রঙে ধরা দেবে রাতের হাওড়া ব্রিজ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

আলোকিত: নানা রঙে ধরা দেবে রাতের হাওড়া ব্রিজ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

হাতের নাগালে উপায় রয়েছে। তা দিয়ে কি রাতের কলকাতাকে পাল্টে দেওয়া সম্ভব? চুলচেরা সেই আলোচনায় বসেছিলেন কলকাতা বন্দরের শীর্ষকর্তারা। সেটাও বছর বারো আগে। দীর্ঘ আলোচনার পরে তাঁরা নিঃসংশয় হয়েছিলেন— ‘হ্যাঁ, পাল্টে দেওয়া সম্ভব!’ আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এমন ভাবে আলোকিত করা হবে, যাতে দূরের জাহাজ থেকে পরিষ্কার দেখা যাবে, আবার হাজার মাইল উঁচুতে থাকা বিমান থেকেও দেখা যাবে হাওড়া ব্রিজ!

সেই মতোই ২০০৬ সালে প্রথম বার নতুন করে আলো লাগানো হয়েছিল হাও়ড়া ব্রিজে। তার আগে পর্যন্ত ব্রিজে সাধারণ আলো লাগানো ছিল। সেই আলো থেকেই ওই বছরে সোডিয়াম ভেপার আলোয় উত্তরণ হয়েছিল হাওড়া ব্রিজের। পাল্টে গিয়েছিল রাতের কলকাতা! গত বারো বছর সেই আলোই দেখে আসছেন শহরবাসী।

এক যুগ পরে আলো ফের বদলের মুখে! উৎসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ বার হাওড়া ব্রিজের আলো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ, দুর্গাপুজোর সময় এক রঙের আলো, ক্রিসমাসের সময় আরেক রঙের, ইদ আর দীপাবলিতে আবার অন্য রকম। নানা উৎসবে নানা রঙে ঝলমল করবে ওই সেতু।

বন্দর সূত্রের খবর, ১২টি আলাদা রঙের আলো লাগানোর জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। শহরের উৎসব ও ঋতু অনুযায়ী সেই রং ফুটে উঠবে ব্রিজে। এক কর্তার কথায়, ‘‘হাওড়া ব্রিজে নতুন আলো লাগানোর জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। সোডিয়াম ভেপারের আলো বদলে এলইডি আলো লাগানো হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একাধিক সংস্থার সঙ্গে এ নিয়ে কথা চলছে।’’ পুরো প্রকল্পের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। সূত্রের খবর, বাস্তবায়নে কম করে এক বছর লাগবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত তিন রঙের আলোই দৃশ্যমান হাওড়া ব্রিজে— হলুদ, সোনালি ও ম্যাজেন্টা। বর্তমানে ১১০টি আলোকস্তম্ভ রয়েছে ব্রিজে। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) সেই আলো লাগিয়েছে। তবে খরচ বহন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষই। বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার এ নিয়ে একাধিক বার বৈঠকও করেছেন বন্দরের কর্তাদের সঙ্গে। মূলত তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত এই পরিকল্পনা। বন্দরের এক কর্তার কথায়, ‘‘উৎসব অনুযায়ী রং পাল্টাবে হাওড়া ব্রিজ। চেয়ারম্যান সে রকমই পরিকল্পনা করেছেন।’’

ইতিহাস বলছে, বরাবরের বিস্ময়, হাওড়া ব্রিজের উদ্বোধনের সময়টাই ছিল রীতিমতো রোমহর্ষক! ১৯৪৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি যখন ব্রিজটি উদ্বোধন করা হয়েছিল, তখন প্রবল বোমাবর্ষণ হচ্ছে কলকাতা বন্দরে! বন্দরের হেরিটেজ কো-অর্ডিনেটর গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যে চারদিক অন্ধকার করে হাওড়া ব্রিজের উদ্বোধন হয়েছিল। এই ব্রিজ যদি না হত, তা হলে কলকাতাকেও কি আমরা একই ভাবে পেতাম!’’

২০০৭ সালে হাওড়া ব্রিজ নিয়ে একটি সমীক্ষা হয়েছিল। তাতে উঠে এসেছিল, প্রতিদিন গড়ে ৯০ হাজার যানবাহন যাতায়াত করে ব্রিজ দিয়ে। সেই সংখ্যা বর্তমানে অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে দৈনিক দেড় লক্ষেরও বেশি যানবাহন ও

আড়াই লক্ষের বেশি মানুষ বিশ্বের ব্যস্ততম ‘ক্যান্টিলিভার’ ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করেন বলে বন্দর সূত্রের খবর। হাওড়া ব্রিজে রং করার তথ্যটিও চমকে দেওয়ার মতো! ২০১৪ সালে ব্রিজ নতুন করে রং করা হয়েছিল। পুরো ব্রিজ রং করতে প্রায় ২৬ হাজার লিটার সীসামুক্ত রং লেগেছিল। আর সময় লেগেছিল প্রায় সাড়ে সাত মাস! এ বার আলোয় পর্বান্তরের পালা!

প্রথম বার আলোর উৎসব পাল্টে দিয়েছিল রাতের শহরকে! এ বার সেই উৎসবের রঙেই নিজেকে বদলাতে চলেছে হাওড়া ব্রিজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Bridge Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE