Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উল্টো অঙ্গ সোজা করে দিল সফল অস্ত্রোপচার

এমনটা নজিরবিহীন নয়। অনেক শিশুই শরীরের ভিতরে এমন উল্টো দিকে অঙ্গ নিয়ে জন্মায়। কিন্তু তা জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই জানা যায় এবং অস্ত্রোপচার করে ঠিক করে দেওয়া হয়।

অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে অর্পণ হালদার। —নিজস্ব চিত্র

অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে অর্পণ হালদার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

ডান দিকের জায়গায় অ্যাপেনডিক্স বাঁ দিকে, হৃদ্‌পিন্ডের নীচে। অন্ত্র-সহ পেটের ভিতরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও উল্টো দিকে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে ‘ম্যালরোটেশন’ বলে।

এমনটা নজিরবিহীন নয়। অনেক শিশুই শরীরের ভিতরে এমন উল্টো দিকে অঙ্গ নিয়ে জন্মায়। কিন্তু তা জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই জানা যায় এবং অস্ত্রোপচার করে ঠিক করে দেওয়া হয়। অনেকের ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন জটিলতা না-থাকলে সমস্যা হয় না, উল্টো অঙ্গ নিয়েই বড় হয় তারা।

কিন্তু, অর্পণ হালদারের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিল ১৭ বছর বয়সে। সম্প্রতি বারবার বমি ও পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, অর্পণের ‘ম্যালরোটেশন’ রয়েছে। এ ছাড়াও, তার অন্ত্র ও ডুওডেনামের সংযোগস্থলটি শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। হৃদ্পিণ্ডের অ্যাওটা থেকে প্রধান যে তিনটি রক্তের নালি শরীরে যাওয়ার কথা ছিল, তার মধ্যে দু’টি শুকিয়ে গিয়েছিল। শরীরে রক্তের সরবরাহ হচ্ছিল শুধু তৃতীয় নালি দিয়ে। তাই সেই নালিটি ফুলে গিয়েছিল।

সপ্তাহ খানেক আগে অর্পণের অস্ত্রোপচার সফল হয়। যে চিকিৎসক, গ্যাসট্রো-সার্জেন শুদ্ধসত্ত্ব সেন ওই অস্ত্রোপচারটি করেন, তিনি জানান, ম্যালরোটেশনের ক্ষেত্রে যেখানে পেটের ভিতরের অঙ্গ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায়, অর্পণের ক্ষেত্রে সেগুলি ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল। অর্পণ এখন সুস্থ রয়েছে। তার অ্যাপেনডিক্স কেটে বাদ দিতে হয়েছে।

গ্যাসট্রো-এন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘এ ভাবে ১৭ বছর পর্যন্ত সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকাটা বেশ অস্বাভাবিক। জন্মগত এমন সমস্যা অনেকেরই রয়েছে, যেগুলি কারও ক্ষেত্রে এক একটি বয়সে প্রকট হয়ে ওঠে। তাই, এটিকে নজিরবিহীন বলা যাবে না। তবে এই অস্ত্রোপচার বেশ জটিল।’’

এ বছরই অর্পণের উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। বাবা রাজকুমার হালদার কলকাতা পুলিশের গাড়ি চালান। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরে। তিনি জানান, ছোট থেকে কোনও সমস্যা হয়নি অর্পণের। মাঝেমধ্যে পেট ব্যথা হলে গ্যাস বা ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ব্যথা কমেও গিয়েছে।

উচ্চ-মাধ্যমিক শুরুর এক সপ্তাহ আগে প্রচণ্ড বমি শুরু হয়। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ডায়মন্ড হারবারের নার্সিংহোম ঘুরে দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেষমেশ সব রকম পরীক্ষার পরে ধরা পড়ে আসল জটিলতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE