Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রশাসনের নজরদারির করুণ দশা, মৃত পশুর মাংস কিনত কসাইখানাও

এ শহরে খাবারে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। পচন ধরে যাওয়া মাংস থেকে কৃত্রিম রং মেশানো খাবার— এ সব এখন শহরবাসীর গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে।

নজরদারি: রেস্তরাঁর মাংস সুরক্ষিত কি না, পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করছেন খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিকেরা। শুক্রবার, শিয়ালদহে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নজরদারি: রেস্তরাঁর মাংস সুরক্ষিত কি না, পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করছেন খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিকেরা। শুক্রবার, শিয়ালদহে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

রেস্তরাঁই হোক বা কসাইখানা, প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারির যে কতটা করুণ দশা, ভাগাড় থেকে মৃত পশুর মাংস কেটে আনার ঘটনায় আরও এক বার তার প্রমাণ মিলল!

এ শহরে খাবারে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। পচন ধরে যাওয়া মাংস থেকে কৃত্রিম রং মেশানো খাবার— এ সব এখন শহরবাসীর গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া মৃত পশুর মাংসও যে খাবারের প্লেটে উঠে আসতে পারে, সেটা বোধহয় কষ্টকল্পনাতেও ছিল না তাঁদের অধিকাংশের। এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই সব মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। গোটা ঘটনাটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে তদন্তে উঠে আসা এক চমকপ্রদ তথ্য।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, বজবজের ভাগাড় থেকে তুলে আনা মৃত পশুর মাংস বিভিন্ন রেস্তরাঁর পাশাপাশি পৌঁছে যেত উত্তর কলকাতার কয়েকটি কসাইখানাতেও। সেখানে কাটা মাংসের সঙ্গে ভাগাড়ের মাংস মিশিয়ে বিভিন্ন রেস্তরাঁয় তা পাচার করা হত। এখানেই উঠেছে সার্বিক নজরদারিতে অভাবের প্রশ্ন। এমনিতে খাবারে ও জলে ভেজাল ধরতে পুরসভা অভিযান চালায়। কিন্তু কসাইখানা কী ধরনের মাংস বিক্রি করছে, তা কি পরীক্ষা করে দেখা হয় কখনও? নজরদারির অভাবের বিষয়টি পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘আমরা এত দিন জানতাম, রেস্তরাঁ ও হোটেলেই খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়। ফলে কসাইখানাগুলিতে তেমন নজর দেওয়া হয় না। এ বার থেকে সেটাও করতে হবে।’’ এ দিনই বৈঠকখানা বাজারেরমাংসের দোকানে খাদ্য-সুরক্ষা অফিসারদের দল অভিযানে যায়।

বৈঠকখানা বাজারের পাশাপাশি শিয়ালদহের একটি দোকান থেকে রাঁধা ও কাঁচা মাংসের নমুনা সংগ্রহ করতেই তিন ঘণ্টার মতো লেগে যায় ওই অফিসারদের। শহরের অনেক রেস্তরাঁতেই যেখানে ভাগাড়ের মাংস সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে একটি দোকানে এত সময় লাগলে কী করে পুরো শহরে অভিযান চালানো হবে, সে প্রশ্ন উঠেছে। খাদ্য-সুরক্ষা অফিসারদের একাংশ জানাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট রেস্তরাঁর মালিক আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন ধরে নিয়েই আইনি খুঁটিনাটি মেনে ওই নমুনা সংগ্রহ করতে সময় লাগবে। অনেকে মিলে অভিযান চালালে সময় একটু কম লাগে ঠিকই, কিন্তু বর্তমানে পুরসভার মাত্র ১৩ জন খাদ্য-সুরক্ষা অফিসার থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, আজ, শনিবারও পুরসভার মাংস পরীক্ষার অভিযান চলবে। তিনি বলেন, ‘‘বজবজে যে মাংস থেকে ওই অভিযোগ উঠেছে, তার রিপোর্ট কী, তা-ও জানতে হবে।’’ ধাপায় কলকাতার মূল ভাগাড়েও নজরদারি শুরু হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ভাগাড়ের মাংস পাচার করার অভিযোগে রাজা মল্লিক ও শ্যামলাল নামে অভিযুক্ত দু’জনকে শুক্রবার ধরা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে এ দিন বজবজের ভাগাড় পরিদর্শনে যান কাউন্সিলরদের একটি প্রতিনিধিদল। তদন্তকারীরা জানান, মাংসের ওই পাচার-চক্রে উত্তর কলকাতার একাধিক কসাইও জড়িত। ধৃতদের জেরা করে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, নতুন দল গঠন করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE