আরও ক’টি প্রাণ গেলে পুরসভার হুঁশ ফিরবে, প্রশ্ন এখন সেটাই!
কলকাতা শহর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য জীর্ণ বাড়ি। খুব খারাপ অবস্থা যেগুলির, তাদের গায়ে ‘বিপজ্জনক’ নোটিসও লটকে দিয়েছে পুরসভা। কিন্তু ওইটুকুই। সেই সমস্ত বাড়ি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ আর তাদের তরফে দেখা যায় না। বাড়ি কেন ভাঙা হয় না, সে প্রশ্ন উঠলে সামাজিক দায়বদ্ধতার যুক্তি খাড়া করেন পুরকর্তারা। আর বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ার একের পর এক ঘটনা ঘটে চলে শহরে।
ঠিক যেমনটি হল মঙ্গলবার রাতে। ঝ়ড়ের তাণ্ডবে লেনিন সরণির একটি বিপজ্জনক বাড়ির চারতলার ছাদে গজিয়ে ওঠা বট ও নিমগাছ রাস্তায় চলন্ত অটোর মাথায় আছড়ে পড়ে। মারা যান অটোচালক মহম্মদ মানোয়ার আলম ও যাত্রী আমরিন জাভেদ। জখম বাকি তিন যাত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঝ়ড়ে উত্তর কলকাতাতেই ভেঙে পড়েছে বারোটি বিপজ্জনক বাড়ির অংশ। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। পোস্তার কলাকার স্ট্রিটে একটি ছ’তলা বাড়ি ভেঙে পড়ায় অনিত শুক্ল নামে এক পথচারীর
মৃত্যু হয়।
প্রশ্ন উঠেছে, বছরভর শহরে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে চললেও প্রশাসন কেন কড়া হচ্ছে
না? কেনই বা বাড়ি সংস্কারে উদ্যোগী হন না বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটে? লেনিন সরণির ঘটনাস্থলে গিয়ে
দেখা গেল, বিপজ্জনক ওই বাড়িটির সামনে দিয়েই হাঁটতে ভয় পাচ্ছেন পথচারীরা। এলাকার লোকজনের দাবি, ‘‘বাড়িটি ভেঙে ফেলতে অনেক আগেই আমরা নিউ মার্কেট থানা ও পুরসভায় আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হয়নি। এর পরেও বাড়িটি ভাঙা না হলে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’’
ওই বাড়িতে রয়েছেন বারো জন ভাড়াটে। বাড়ির ওই হাল হওয়া সত্ত্বেও বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটে— কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও রাজি নন। নীচের তলার এক ভাড়াটে, শেখ মফিজুদ্দিনের অভিযোগ, ‘‘২০০৮ সালে এই বাড়িতে আগুন লাগার পরে বাড়িওয়ালা আমাদের না জানিয়েই বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করেছিলেন। আমরা এখানে ২৬ বছর ব্যবসা করছি। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলাম।’’ বাড়ির এক শরিক, মোর্শেদ আলি সর্দার বলেন, ‘‘আমরা বাড়ি সংস্কার করতে চাই। কিন্তু ভাড়াটেরা কোনও খরচ না করেই বাড়ি পেয়ে যাবেন, এটা হতে পারে না।’’
এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বাড়ি সংস্কার নিয়ে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের লড়াই চলতেই থাকে। আর খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। পুরসভা এই বাড়ি ভাঙা নিয়ে কঠোর হোক, এটাই আমরা চাইছি।’’ পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং-২) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লেনিন সরণির ওই বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুরসভার তরফে খুব দ্রুত বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy