Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভিড় ও জট সামলে পাশ কলকাতা

হাতিবাগান থেকে বোসপুকুর, সর্বত্রই ছিল পুলিশের বিশেষ বাহিনী। রাস্তার দু’পাশে বাঁশের ব্যারিকে়ড তৈরি করে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০০:২৩
Share: Save:

পুজোর ভিড় আর রাস্তায় যানজট সামলে ‘উৎসব কাপ’ জিতল কলকাতা পুলিশ।

হাতিবাগান থেকে বোসপুকুর, সর্বত্রই ছিল পুলিশের বিশেষ বাহিনী। রাস্তার দু’পাশে বাঁশের ব্যারিকে়ড তৈরি করে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশাপাশি রাস্তার ধারে গাড়ি রাখার জেরে যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্যও ছিল বিশেষ নজরদারি।

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, গত দু’বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর পুজোর

তিন মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। গত বছর যে পুলিশকর্তারা সাফল্যের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁদের এ বছর সেই এলাকারই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যাতে পরিচিত এলাকায় তাঁরা ভিড় সামলাতে

সমর্থ হন। পাশাপাশি গত বছর থেকে যে সব মণ্ডপে ভিড় বেশি হয়েছিল, সেখানে এ বছর দেওয়া হয়েছিল বিশেষ বাহিনী। যেমন, উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোয় গত বছর ভিড় হয়েছিল। এ বার তাই ওই এলাকায় ছিল অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। এ ছাড়াও রাস্তার উপরে ওভারহেড গেট করতে দেওয়া না হওয়ায় রাস্তা আটকানোর সমস্যায় প়ড়তে হয়নি কাউকে। রাতের দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ছিল বিশেষ বাহিনী।

তবে, বেশ কিছু জায়গায় ভিড় সামলাতে হিমশিমও খেয়েছে পুলিশ। যেমন শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর ভিড় সামলাতে না পারার কারণে বাঙুর, লেক টাউনের পাশাপাশি জনস্রোত আছ়ড়ে পড়েছিল উল্টোডাঙা, চিংড়িহাটা এলাকায়।

তার জেরে বেশ কিছু জায়গায় তীব্র যানজট হয়। পাশাপাশি, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘে দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে নবমীর রাতে নাজেহাল

হয় কলকাতা পুলিশ। রাতে ঘটনাস্থলে যান লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা। গড়িয়া, টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো-সহ একাধিক রাস্তা দিয়ে দর্শনার্থীদের লাইন ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কিছু জায়গায় আবার দর্শনার্থীদের ঠিক মতো ছড়িয়ে দিতে না পারার জেরে জট তৈরি হয়।

ভিড়ের পাশাপাশি নিজস্বী তোলার হিড়িক আর বেপরোয়া মোটরবাইকের দাপট সামলাতেও নাজেহাল হয়েছে বাহিনী। রাস্তার পাশে কিংবা মণ্ডপের লাইনে নিজস্বী তোলার চোটে ধীর গতিতে এগিয়েছে লাইন। চতুর্থীর বিকেল থেকেই এই নতুন বিপদ আন্দাজ করতে পেরেছিল পুলিশ। তাই সপ্তমী থেকে কড়া হাতে তা নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। উত্তর কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ কিংবা বিধান সরণি অথবা দক্ষিণের শরৎ বসু রোডে রাস্তা দিয়ে হাঁটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ। দর্শনার্থীদের স্রোত মসৃণ রাখতে নলিন সরকার স্ট্রিট, কাশী বোস লেন, ত্রিধারা, দেশপ্রিয় পার্ক-সহ একাধিক পুজো মণ্ডপে নিজস্বী তোলার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা।

কোথাও অটোর লাইসেন্স নিয়ে মত্ত অবস্থায় বাইক চালানো, কোথাও আবার বেপরোয়া গতিতে বাইক চালানোর জেরে বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মেরে জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে পুজোর শহরে। লেক, বালিগঞ্জ, পার্ক সার্কাস-সহ একাধিক এলাকায় মত্ত অবস্থায় হেলমেটহীন বাইক চালানোর জন্য গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক যুবক। লালবাজারের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছে, বেপরোয়া বাইক রুখতে অন্য বছর ষষ্ঠীর দিন থেকেই বিশেষ অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর সেই নির্দেশ ছিল না। তাই দাপট বেড়েছিল বাইক-বাহিনীর। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বেপরোয়া গতি রুখতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো কাজও হয়েছে। দশমীতে মোট ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুজোর শহর সামলানো প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘যে কোনও বড় উৎসবের পরেই বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। তাঁদের অভিজ্ঞতা পরবর্তী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় কাজে লাগানো হয়। সে ভাবেই পুজোর ভিড় সামলানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police crowd Road Traffic Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE