বছর দশেক আগেও একটা পারমিট ছিল হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো ঘটনা। পরিবহণ দফতর থেকে ট্যাক্সির পারমিট বিলির বিজ্ঞপ্তি জারি হলেই আবেদনকারীদের ভিড় উপচে পড়ত। ভিড় সামলাতে পুলিশ ডাকতে হতো। পারমিট দেওয়ার ফর্ম বিলি হয়ে যেত দু’সপ্তাহেই।
বেলতলার সেই চেনা ছবিটা আজ আর নেই। রাস্তায় পাঁচ হাজার ট্যাক্সি নামাতে চেয়ে ২০১৪ সালে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল পরিবহণ দফতর। তার পরে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অর্ধেক পারমিট বিলির ফর্ম বেলতলার এক ঠান্ডা ঘরে পড়ে রয়েছে। সূত্রের খবর, ১৫ বছরের পুরনো ট্যাক্সি বাতিল করে নতুন ট্যাক্সি নেওয়ার ঝোঁকও কমেছে অনেকটাই। সব মিলিয়ে তাই কলকাতার রাস্তা থেকে মিটার লাগানো ট্যাক্সি ক্রমশ বিরল প্রজাতির চেহারা নিতে চলেছে।
কেন এই অবস্থা?
পরিবহণ দফতরের কর্তারা এর কারণ হিসেবে ট্যাক্সি পরিষেবার বদলে যাওয়া চালচিত্রর কথাই বলছেন। এক কর্তার কথায়, ‘‘তিন বছরের মধ্যে ওলা-উবের বাজারে চলে এসেছে। আর তাতেই ট্যাক্সির নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে।’’ কর্তারা আরও জানাচ্ছেন, গাড়ি এক, কিনতে খরচ এক, চালানোর খরচও এক। পার্থক্য বলতে ওলা-উবের রাস্তায় নামাতে লাক্সারি ট্যাক্সির পারমিট নিতে হয়। যা ট্যাক্সির পারমিট ফি-এর থেকে মাত্র দু’-তিন হাজার টাকা বেশি।
তবু ক্রমশ বাজার দখল করে নিচ্ছে এক ফোনে কাছে এসে দাঁড়ানো ওলা-উবের। ট্যাক্সি মালিকেরাই মানছেন, বাজারে ওলা-উবের আসার পরে যাত্রীদের কাছে ট্যাক্সির চাহিদা অনেক কমেছে। যার জেরে কমেছে রোজগার। পাল্লা দিয়ে তাই নতুন ট্যাক্সি বার করার আগ্রহও কমছে। এক ট্যাক্সিমালিকের কথায়, ‘‘খদ্দের চাইলে তাঁর একেবারে সামনে গাড়ি এসে উপস্থিত হচ্ছে। যাত্রী প্রত্যাখ্যানেরও অভিযোগ
ওলা-উবেরে অনেক কম। স্বভাবতই, পয়সা বেশি দিতে হলেও হলুদ ট্যাক্সির চেয়ে ওলা-উবেরেই বেশি ভরসা রাখছেন যাত্রীরা।’’
ট্যাক্সিমালিক সংগঠনের নেতা বিমল গুহ দাবি করেছেন, ট্যাক্সির বাজার খারাপ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ চালকের অভাব। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ভাল চালকই বেশি টাকা রোজগারের লোভে হলুদ ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে ওলা-উবের চালাতে চলে গিয়েছেন। পাশাপাশি, অনলাইনে চালকদের লাইসেন্সের আবেদন করার যে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাজ্যে, সে কারণেও অনেকেই আর আবেদন করছেন না।’’ যদিও পরিবহণ দফতরের কর্তারা তাঁর এই দাবি নস্যাৎ করে দিচ্ছেন। এক পরিবহণকর্তার বক্তব্য, ‘‘চালক তৈরি হয় মোটর ট্রেনিং স্কুল থেকে। কাজেই অনলাইনে আবেদন করার বিষয়টি তো সেখানেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’
আরও একটি কারণের কথা বলছেন বিমলবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ট্যাক্সি মানেই আমরা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি জানতাম। ট্যাক্সির চাহিদা যখন আকাশছোঁয়া ছিল, তখন একটা অ্যাম্বাসাডর পেতে তিন-চার মাস লেগে যেত। অ্যাম্বাসাডর কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সির ব্যবসার জন্য সেরা গাড়ি। ২০১২-’১৩ সালের পর থেকে আর অ্যাম্বাসাডর গাড়ি কার্যত নেই। তাতে অনেক মালিকই নতুন ট্যাক্সি বার করায় উৎসাহ হারিয়েছেন। কারণ, অন্য গাড়িতে মেরামতের খরচ অনেকটাই বেশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy