পারিবারিক বিবাদে ব্যক্তিগত ভাবে খুব একটা স্বস্তিতে নেই কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে,তার মধ্যেই প্রশাসক শোভনকে কিছুটা স্বস্তি দিল জনাগ্রহ সেন্টার ফর সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি নামে বেঙ্গালুরুর একটি অলাভমূলক সংস্থা। ওই সংস্থা তাদের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়েছে, সুশাসনের নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে কলকাতার স্থান দু’নম্বরে। একে রয়েছে পুণে।
গত পাঁচ বছর ধরে জনাগ্রহ সেন্টার এই সমীক্ষা করছে। ২০১৭ সালে করা সমীক্ষার উপর ভিত্তি করেই সাম্প্রতিক ওই রিপোর্ট তারা প্রকাশ করেছে। গত বার অর্থাৎ ২০১৬ সালের রিপোর্টে কলকাতা ছিল তৃতীয় স্থানে।সে বার তালিকার শীর্ষে ছিল তিরুঅনন্তপুরম। এ বার কিন্তু সব হিসেব ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। ২০টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ২৩টি শহরে তারা সমীক্ষা চালায়। রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর দেখা যায়,দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো প্রথম সারির শহরগুলোর নাম প্রথম পাঁচে ঠাঁই পায়নি। বরং সেই জায়গায় এক নম্বর জায়গা নিয়েছে পুণে, দুয়ে কলকাতা, তিনে তিরুঅনন্তপুরম, চারে ভুবনেশ্বর এবং পাঁচে সুরাত।
এই রিপোর্টের কথা জেনে স্বভাবতই খুশি শোভনবাবু। তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষের পরিষেবায় যে সমস্ত লেটেস্ট পরিকাঠামো রয়েছে, আমরা তার ব্যবস্থা করেছি। যেমন জিপিএস সিস্টেম, অনলাইন প্ল্যান, ই-টেন্ডার, স্বাস্থ্য অ্যাপ। এ সবের ভিত্তিতেই তো গ্রেডেশন হয়। এ বছর দ্বিতীয় হয়েছি। আগামী বছর যাতে প্রথম হওয়া যায়, সে চেষ্টাই করব।’’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে কি তৃণমূলের মদত
এই সমীক্ষা করার সময় যে যে দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সেই শহরগুলিতে সাধারণ মানুষের ব্যয়ের ক্ষমতা। রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব কতটা। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা কেমন।পুরসভার কর্মীর সংখ্যা কিংবা পুরসভার আয় কত।
কিন্তু, ওই শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রাস্তাঘাটের অবস্থা, ট্রাফিক জ্যাম কিংবা দূষণের মতো বিষয়গুলোকে মানদণ্ড হিসাবে রাখাই হয়নি। ফলে, অনেকেই এই সমীক্ষার প্রাথমিক মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের মতে, এই মাপকাঠিতে নাগরিক স্বাচ্ছন্দের চেয়ে পুর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দক্ষতাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জনাগ্রহ সেন্টারের রিপোর্টে পুণের প্রাপ্ত নম্বর ১০-এর মধ্যে ৫.১। কলকাতা পেয়েছে ৪.৬। আলাদা ভাবে বিচার করলে প্রত্যেকটি বিভাগেই কলকাতার স্থান উপরের দিকে। তবে, প্রশাসনিক স্বচ্ছতায় দশম স্থানে রয়েছে কলকাতা।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষাগুলিতে দেখা গিয়েছে, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক কিংবা জোহানেসবার্গের মতো উন্নত শহরগুলি এই ধরনের রিপোর্টে ১০-এর মধ্যে প্রায় নয়ের কাছাকাছি পায়। সেখানে দেশের সেরা হয়েও পুণে পেয়েছে পাঁচের সামান্য বেশি। অনেকই বলছেন, গোটা বিশ্বের নিরিখে ভারতের শহরগুলো যে অনেকটাই পিছিয়ে, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে দিয়ে গেল জনাগ্রহ সেন্টারের রিপোর্ট। কিন্তু, এখানেও একটা অন্য মত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সমীক্ষাগুলিতে যে মানদণ্ডগুলিকে সূচক ধরা হয়, এ ক্ষেত্রে তার কোনওটিই ব্যবহার করা হয়নি।
তবুও, দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়ে কলকাতা আহ্লাদিত। তবুও, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মুখে অনেক দিন পর যেন উচ্ছ্বাসের হাসি।
অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy