Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

শহরে গত দেড়-দুই দশক ধরেই থিম পুজোর ভীষণ রমরমা। স্পন্সর-পুরস্কার-জনতার ঢল সবই থিম পুজোর দিকে। কিন্তু এরই পাশাপাশি কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি সর্বজনীন পুজো নিজেদের মর্যাদা অটুট রেখেছে।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

বেঁচে আছে অন্য পুজো

শহরে গত দেড়-দুই দশক ধরেই থিম পুজোর ভীষণ রমরমা। স্পন্সর-পুরস্কার-জনতার ঢল সবই থিম পুজোর দিকে। কিন্তু এরই পাশাপাশি কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি সর্বজনীন পুজো নিজেদের মর্যাদা অটুট রেখেছে। তার মধ্যে কোথাও ‘আর্টের ঠাকুর’, কোথাও বা পুরনো ধাঁচের একচালা প্রতিমা আজও তৈরি হয়ে আসছে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। অটুট আছে দর্শকের আনুগত্যও, যদিও ভিড়ের মধ্যে স্থির হয়ে দাঁড়ানোটাই অসম্ভব। তাই আধুনিক দর্শক সে প্রতিমা স্মৃতিপটে ধরে রাখার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যও নিচ্ছেন (সঙ্গে বাঁ দিকের ছবি)।

সর্বজনীন পুজোর সঙ্গে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কলকাতার বনেদি বাড়ির বেশ কিছু পুজো। সর্বজনীনে ধর্মীয় মোড়ক যেটুকু দেখা যায়, ওই মোড়কেই তার শেষ। পাড়ার পুজোয় একদা যেমন পাড়ার মানুষের যোগদান খুব স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ ছিল, পুজোটা ঠিকঠাকই হত, সে দিন আর নেই। আর বনেদি বাড়িগুলির অধিকাংশই পড়তি অবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুজোর জৌলুস কমাতে বাধ্য হয়েছে। তবু বংশানুক্রমিক মৃৎশিল্পী আজও প্রতিমা গড়েন, সাজের শিল্পী পৌঁছে দেন পুরনো ধাঁচের শোলা কি ডাকের সাজ, ঢাকিরা ঠিক চলে আসেন নির্দিষ্ট দিনে ঝালর দেওয়া ঢাক নিয়ে।

বার করা হয় পুজোর ভারী ভারী বাসনকোসন, আসেন প্রবীণ পুরোহিতমশাই, পুজো চলে পারিবারিক নিয়মনীতি মেনে। ছেলেমেয়েরা অধিকাংশই দেশবিদেশে ছড়ানো, সবাই আসতেও পারে না। ক’দিন পুজো টিঁকবে কেউ জানে না। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

মহিষাসুরমর্দিনী

মৎস্যপুরাণ ও কালিকাপুরাণ অনুসারে দেবী জটাজুট মণ্ডিতা, অর্ধচন্দ্র তাঁর শিখরে, ত্রিনয়না, তপ্তকাঞ্চনবর্ণা, নবযুবতী ও দশভুজা। দেবীর ডান হাতগুলিতে উপর থেকে নীচে যথাক্রমে ত্রিশূল, খড়্গ, চক্র, তীক্ষ্ণবাণ ও শক্তি এবং বাম হাতগুলিতে একই ভাবে খেটক, ধনু, পাশ, অঙ্কুশ, ঘণ্টা বা পরশু থাকে। দেবীর ডান পা সিংহের উপর এবং বাম পায়ের অঙ্গুলি মহিষাসুরের উপর থাকে। দেবী তাঁর বাম হাতে নাগপাশ দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করে শূল দ্বারা তাঁর বক্ষ বিদ্ধ করছেন। তাই তাঁকে মহিষাসুরমর্দিনীও বলা হয়। এ বার তাঁরই পুজো উপলক্ষে ভারতীয় সংগ্রহশালায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে। চলবে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত (১১-৫টা, সোমবার ও ছুটির দিন বাদে)। সঙ্গের ছবিতে উনিশ শতকের জয়পুরের অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী, প্রদর্শনী থেকে।

কমিক্‌স সমগ্র

কার্টুন এবং কমিক্‌স যে দুটি পৃথক শিল্পমাধ্যম, সেটা মাথায় না রেখেই তাঁকে অনেক ক্ষেত্রে ‘কার্টুন শিল্পী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। শিল্পী হিসেবে নবতিপর নারায়ণ দেবনাথের (জন্ম ১৯২৫) দ্বৈত পরিচয়— অলংকরণ ও কমিক্‌স শিল্পী। বাংলা সাহিত্যের অলংকরণে, বিশেষ করে শিশু ও কিশোর সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি এমন এক বিরল গ্রন্থচিত্রশিল্পী যিনি সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় এবং ধারাবাহিক ভাবে অলংকরণ করেছেন। মজার এবং সিরিয়াস বাস্তবধর্মী— দুই বিপরীত ঘরানার ছবিই সমান যত্নে এঁকেছেন সহজাত দক্ষতায়। ১৯৬২ সাল থেকে আজ চুয়ান্ন বছর যাবৎ নারায়ণ দেবনাথের ‘হাঁদা ভোঁদা’ কমিক্‌স সিরিজটি হল একক শিল্পীর গল্পে ও আঁকায় পৃথিবীর বৃহত্তম কমিক্‌স সিরিজ। তাঁরই গল্পে-ছবিতে ভারতের প্রথম সুপারহিরো কমিক্‌স সিরিজ ‘বাঁটুল দ্য গ্রেট’ও অর্ধশতবর্ষ অতিক্রান্ত। পেয়েছেন রবীন্দ্রভারতীর সাম্মানিক ডি লিট, নানা সম্মান। সদ্য প্রকাশিত হল তাঁর কমিক্‌স-সমগ্র পঞ্চম এবং শেষ খণ্ড (লালমাটি)। ।

জলসার স্মৃতি

জলসা আসলে এক আশ্চর্য আলোকময় কাহিনি। একই মঞ্চে কখনও দেখা হয়ে যায় কিংবদন্তির সঙ্গে নবীন শিল্পীর। রচিত হয় কোনও এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। উত্তমকুমারকে মঞ্চে উঠতে দেখে সাততাড়াতাড়ি খাতা বন্ধ করে হারমোনিয়াম গুটিয়ে ফেলেছিল যে অপ্রতিভ মেয়েটি, সে-ই পরে সংগীতদুনিয়ার এক উজ্জ্বল নাম। বনশ্রী সেনগুপ্ত। কখনও বা কনিষ্ঠতম শিল্পী অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি যেতে পারবে কি না, সেই ভাবনাতেই অস্থির হয়ে পড়েন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব। এ রকম গল্পে ঠাসা সদ্য প্রকাশিত তোচন ঘোষের জলসাঘর বইটিতে (সম্পাদনা: শর্মিলা মাইতি, দীপ)। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জলসার আয়োজন করে চলেছেন তোচন ঘোষ। মান্না দে, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, কিশোরকুমারের মতো কিংবদন্তিরাও তাঁর জলসাজীবনের অবিস্মরণীয় অঙ্গ। এই প্রথম তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের স্মৃতি দুই মলাটে।

পুতুল

পুতুলের ঐতিহ্য আজও বাংলায় প্রবহমান। তবে বিশ্বায়ন এবং কালের প্রভাবে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। আশার কথা কাঁকুড়গাছির কালচারাল রিসার্চ সেন্টার ইতিমধ্যেই একটি সংগ্রহশালা তৈরি করে সেখানে পুতুল সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এও রয়েছে পুতুলের গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ। ফি বছর কাঁকুড়গাছির এই প্রতিষ্ঠান নিয়ম করে আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠানের। এখানে পুতুল ছাড়া কাঁথা, নৌকা ইত্যাদিও চমৎকার ভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। সম্প্রতি এখানে আয়োজিত হল তিন দিনের অনুষ্ঠান। পদ্ম কেন্দ্র করে কাঁথা সেলাই, পুতুলের পোশাক তৈরি এবং কাঠের কাজের যন্ত্রপাতি— এই তিন বিষয়ে কর্মশালা এবং আলোচনা। এই অনুষ্ঠানে প্রকাশ পেল বাংলার পুতুল শিরোনামে সংগ্রহশালার সংগ্রহ নিয়ে একটি ছবি, স্কেচ ও তথ্যসমৃদ্ধ বই। সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হল স্যুভেনির শপ। ওদিকে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রেও কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় হয়ে গেল পুতুলনাচের পুতুল তৈরির একটি কর্মশালা।

লরেল-হার্ডি

‘ছেলেবেলার কিছুটা ঝাপসা স্মৃতি বেশ টক-মিষ্টি লাগে। জীবনের প্রথম দশ বছরের যেসব স্মৃতি ভিড় করে আসে, তার মধ্যে লরেল-হার্ডির কথা অবশ্যই বেশ মিষ্টি।’ প্রসাদরঞ্জন রায়ের সুস্বাদু রচনা ‘ছেলেবেলার লরেল-হার্ডি’ শিশু কিশোর আকাদেমি-র গত বারের আন্তর্জাতিক শিশু কিশোর চলচ্চিত্রোৎসবের স্মারকগ্রন্থে: কমেডির সেরা জুটি/ লরেল আর হার্ডি (সঙ্গে প্রচ্ছদ)। সম্পাদক ল্যাডলী মুখোপাধ্যায় শুরুতেই জানিয়েছেন ‘কমেডির এমন সেরা জুটি বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই... এই স্মারকগ্রন্থে এমন সব লেখা ছাপা থাকল... বুঝতে সুবিধা হবে, কীভাবে একটার পর একটা সিনেমা এই জুটি সাফল্যের সঙ্গে সম্ভব করে তুলেছিল।’ শুধু লেখা নয়, পাতাজোড়া ছবিগুলিও অনবদ্য করে তুলেছে বইটিকে। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: শুভেন্দু সরকার। একই রকম ঝলমলে চ্যাপলিনের সমসাময়িক ও তুলনীয় কিটন-কে নিয়ে ওদের অন্য বইটিও— বাস্টার কিটন/ চোখ দিয়ে যায় চেনা। এটিও ল্যাডলীর সম্পাদনায় শুভেন্দুর হাতযশ।

সগৌরব

কথায় বলে চল্লিশ পেরোলেই চালসে। সে চালসের কোনও লক্ষণ তো নেই-ই। উল্টে তারুণ্যে ভরপুর এখনও ডিউক রেস্তোরাঁ। সদ্য চল্লিশ উত্তীর্ণ হল। ডিউক-এর কর্ণধার তৃপ্তিবাবু কথা বলতে স্মৃতিআতুর হয়ে পড়েন, ‘‘শিবরাম চক্রবর্তী সপ্তাহে দু’ থেকে তিন দিন আসতেনই পরোটা-কষা মাংস খেতে। একটা সময় বিমলদা মানে বিমল করের সঙ্গে আসতেন অনেক নতুন লেখক। চা খেতে। এই যেমন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার-রা। পটৌডী কলকাতায় এলেই লাঞ্চ করতে চলে আসতেন। শক্তিদার তো কথাই নেই। খুব ভালবাসতেন মাস্টার্ড দিয়ে ফিশ ফিঙ্গার খেতে।’’ কথা বলতে বলতে হাজির হিরণ্যক ও আরণ্যক। মধ্য-সত্তরের বাবাকে সাহায্য করছেন। ডিউক-এর ঐতিহ্য সম্পর্কে ওঁরা সচেতন। ওঁদের কথায়— চল্লিশ বছর ধরে একই মান বজায় রেখে চলেছি। কাঁচা মাল আমরাই কিনি। নিয়মিত রাঁধুনিদের ট্রেন করি। চল্লিশ বছর পেরোনোর সময় তৃপ্তিবাবুর সঙ্গে থেকে গিয়েছেন তাঁর বোন শীলা চৌধুরী। অতন্দ্র প্রহরী। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ওপরে এক বাঙালি রেস্তোরাঁ ও পানশালা সগৌরবে তার পতাকা নাড়াচ্ছে— এ কম বড় কথা নয়।

মাতৃরূপেণ

‘ওরে ও নবমী নিশি না হইও ভোর’। কন্যা উমা এই বার পিত্রালয় ছাড়িয়া যাইবেন স্বামীগৃহে, কৈলাসে। তাই নবমীর সকাল হইতেই এই বিষাদের গান গীত না হইলেও, এই মনোভাব কলিকাতা হইতে ক্যালিফর্নিয়া— সকল বাঙালির। হুতুমের শহর এই বৎসর তৃতীয়া হইতেই রাস্তায় নামিয়াছে। সত্যি বলিতে কি, ঋদ্ধিমান সাহার গৌরব ও আইএসএল-এর লড়াইও যেন শারদোৎসবের কাছে নিষ্প্রভ। এখন আর বাঙালি ঘরে পাত পাড়িয়া খাইতে চাহে না, দু’বেলাই চলে রেস্তোরাঁয় গমনাগমন। শহরের পাঁচতারা হোটেলগুলি অবধি বাঙালি রান্নায় আপন আপন প্রয়াস দেখাইতে তৎপর। প্রাতে পাঁচ ঘটিকা হইতে দশম কি একাদশ ঘটিকা পর্যন্ত অবশ্য জনসমুদ্রে জোয়ারের বদলে হালকা ভাটা দেখা গিয়াছে, তাহার পরে আবার অসংখ্য মানুষে শহর ডুবিয়াছে। শিয়ালদহ হইতে হাওড়া— উপচাইয়া পড়িয়াছে ভিড়। এই বৎসর একাদশী ও মহরম কাটিতে কাটিতেই মা লক্ষ্মীর আরাধনায় বাঙালি নিমজ্জিত হইবে। তিনি চঞ্চলা বলিয়াই তাঁহাকে আটকাইয়া রাখিবার যাবতীয় আয়োজন। আজ নবমী, আজ হইতেই নাড়ু-নিমকির আয়োজন বিজয়ার জন্য। তবে এ বৎসর নবমী পর্যন্ত শহর যা পান করিয়াছে, তাহাতে ভাঙিয়াছে অতীতের রেকর্ড। পাঠক— শুভ বিজয়া।

পুজোর দিন

ই লাহাবাদে এসে যখন পৌঁছলাম, তখন বিকেল।’ ফেলে আসা পুজোর দিনগুলিতে ফিরে যাচ্ছিলেন তরুণ মজুমদার। সে সময় প্রায়ই একটা ছবির কাজ শেষ করে পরের ছবির কাজ শুরু করার আগে গাড়িতে তাঁর ফিল্ম ইউনিটের কয়েক জনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন, পুজোয় কখনওই কলকাতায় থাকতেন না। সে বারে ঘুরতে-ঘুরতে যখন ইলাহাবাদে এলেন, সঙ্গে ছিলেন সৌমেন্দু রায়। আশ্বিনের আকাশে দিনান্তের রং, হাত-পা ছড়িয়ে একটু চা খাবেন বলে গাড়ি থেকে নামলেন। হঠাৎ এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন, টাক মাথা, ফর্সা, ধারালো নাক, ‘দেখলেই বোঝা যায় কোনও বনেদি পরিবারের বাঙালি, পরিষ্কার বাংলায় বললেন: আপনারা যদি অনুগ্রহ করে আমাদের পুজোমণ্ডপে আসেন, একটু প্রসাদ গ্রহণ করেন, চা খান, আমাদের খুব ভাল লাগবে।’ প্রবাসী বাঙালির পুজো আর তাঁদের আপ্যায়ন নিয়ে আজও স্মৃতিমুগ্ধ তরুণবাবু, ‘অপরিচিত মানুষজন, কোনও দিনই আর তাঁদের সঙ্গে দেখা হবে না, অথচ... পুজোর এটাই পাওনা। সেই যে ছেলেবেলায় বড়রা হাতে চার আনা আট আনা দিয়ে বলতেন, ইচ্ছে মতো খরচ কোরো, কী খুশি যে হতাম... পার্বণী বলা হত, এটা সেই পার্বণী।’ কলকাতায় পুজোর উৎসবে কোনও দিনই মনের মুক্তি খুঁজে পান না তরুণবাবু, বাইরে না যেতে পারলে হাঁপিয়ে ওঠেন, থিম পুজোও টানে না তাঁকে: ‘ওটা অনেকটা নারায়ণ শিলা দিয়ে মশারির পেরেক ঠোকার মতো।’ ‘পথের পাঁচালী’র পর তাঁর ছবিতেই আবার আশ্বিনের কাশবন দেখেছিল বাঙালি, ‘বালিকা বধূ’, পঞ্চাশ বছর আগে; আর পঁয়তাল্লিশ বছর আগে ‘নিমন্ত্রণ’, সে ছবিতেও কাশবনে ঢুকে বিহ্বল হয়ে সংস্কৃতের শব্দরূপ অ্যালজেব্রার ফর্মুলা আওড়াচ্ছিলেন অনুপকুমার... সবই আজ বাঙালির পুজোর নস্টালজিয়া!

গীতশ্রী

এই শরতে পঁচাশি পূর্ণ করলেন এক সংগীতসম্রাজ্ঞী। ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘এ শুধু গানের দিন’ কিংবা ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’: তাঁর এমন কত-না বিচিত্র স্বাদের গান আজও মনে দোলা দিয়ে যায়। বরাবরই অনুষ্ঠান কম করতেন, আর এখন তো প্রশ্নই নেই, কিন্তু সারাটা সময় গানের মধ্যেই ডুবে থাকেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (জন্ম ৪ অক্টোবর ১৯৩১)। সংগীতে দক্ষ মা হেমপ্রভা দেবীর উত্তরাধিকার বর্তেছিল তাঁর ওপর। প্রথম গান শেখা সন্তোষ বসু মল্লিকের কাছে, পরে যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি এবং মুনাব্বর আলি-র তালিমে সমৃদ্ধ হয়েছেন। আধুনিক-চিত্রগীতির এই কিংবদন্তি শিল্পী তাই সহজ নৈপুণ্যে গেয়েছেন উচ্চাঙ্গ সংগীতও। ১২ বছর বয়সে রেডিয়োতে প্রথম গান ‘গল্পদাদুর আসর’-এ। ‘গীতশ্রী’ ১৯৪৬-এ। প্রথম রেকর্ড ১৯৪৫-এর অগস্টে— আধুনিক— গিরীন চক্রবর্তীর কথায়-সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছো’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’। ১৯৪৮-এ প্রথম প্লে ব্যাক রাইচাঁদ বড়ালের সুরে ‘অঞ্জনগড়’-এ এবং রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘সমাপিকা’ ছবিতে। তারপর চার-পাঁচ দশক জুড়ে সন্ধ্যা তাঁর লাবণ্যময় কণ্ঠের দ্যুতিতে, গায়নের মাদকতায় বাংলা আধুনিক-চিত্রগীতির এক অবিসংবাদী শিল্পী। উপহার দিয়েছেন কত-না স্মরণীয় গান গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শ্যামল গুপ্ত (স্বামী), পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের কথায় আর অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ প্রমুখের সুরে। ১৯৫০-এ শচীন দেব বর্মনের ডাকে মুম্বই গিয়ে কয়েকটি হিন্দি ছবিতে গাইলেও ফিরে আসেন। রবীন্দ্রসংগীতও গেয়েছেন। লতা মঙ্গেশকর সম্মান, বর্ধমান ও রবীন্দ্রভারতী-র সাম্মানিক ডি লিট, এইচ এম ভি-র লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট ইত্যাদি পেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE