Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: স্মৃতির সরণিতে দুই বাংলা

দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে থিতু হতে হয়েছিল তাঁর পরিবারকে, আজও অশীতিপর আহ্‌মদিকে কেউ ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আমার দেশ কলকাতা’।

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৯
Share: Save:

লাশের আবার ধর্ম কি, সারি দিয়ে মানুষ মরে পড়ে আছে, এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছু তো হতে পারে না...’, নাতনি তুনাজিনা শাহরিন-কে বললেন আহ্‌মদি বেগম!’’ সুপ্রিয় সেন নিজের ছবি করার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন। ‘আওয়ার গ্র্যান্ডপেরেন্টস হোম’ তাঁর পঞ্চম ‘পার্টিশান-ফিল্ম’, সেই ‘ওয়ে ব্যাক হোম’ থেকে শুরু। ১৯৪৭ তো শুধু স্বাধীনতার নয়, দেশভাগেরও বছর, তারই সত্তর পূর্তিতে উদ্বাস্তু পরিবারগুলির তৃতীয় প্রজন্মের কাছে পৌঁছেছেন নতুন ছবিটিতে। ঢাকার তুনাজিনা (পেশায় ডাক্তার, সঙ্গের ছবিতে) তেমনই এক জন। ১৯৪৬-এর দাঙ্গায় ন’দশ বছর বয়সে প্রতিবেশী হিন্দুরা পাশে থাকা সত্ত্বেও কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হন আহ্‌মদি, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর অভ্যর্থনা মোটেও সুখকর ছিল না। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে থিতু হতে হয়েছিল তাঁর পরিবারকে, আজও অশীতিপর আহ্‌মদিকে কেউ ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আমার দেশ কলকাতা’। নাতনির সঙ্গে সম্প্রতি এ শহরে এসে বিডন স্ট্রিটে তাঁদের ফেলে-যাওয়া ভাঙা বাড়িটা দেখতে গিয়েছিলেন, আর তখনই ‘কারা মারা গিয়েছিল’— নাতনির এ প্রশ্নে উপরের উল্লেখিত জবাব আহ্‌মদির। ছবি তৈরি-সহ গোটা ব্যাপারটি ঘটেছে কলকাতা ও ঢাকার ম্যাক্সমুলার ভবন, গ্যেটে ইনস্টিটিউটের এক দীর্ঘকালীন প্রকল্প ‘ইনহেরিটেড মেমোরিজ’-এর অধীনে। কলকাতা থেকে আবার সঞ্চিতা ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁদের ফেলে-আসা বাড়ি খুঁজতে যশোরে গিয়েছিলেন সুপ্রিয়, মধুমতী নদীর পাশে ছিল সে বাড়ি, তাঁর দাদুর নাম অর্ধেন্দুশেখর বলায় দেখা মিলল আবদুল রহমান সর্দারের, জানালেন: তাঁর বাবা শামসুল আর অর্ধেন্দুশেখর একই স্কুলে পড়াতেন। ‘আমি নিজেও তো এক উদ্বাস্তু পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম, এই মানুষগুলির কাছে পৌঁছে টের পেলাম, তাঁরা এখনও হাত বাড়িয়েই আছেন পুনর্মিলনের জন্য।’— উদ্বেলিত সুপ্রিয়। ১৮ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ৬টায় পার্ক ম্যানশনে নতুন ম্যাক্সমুলার ভবনে ডকু-ফোরামে দেখানো হবে ছবিটি।

দূরের নীলিমা

‘যা তাঁর গানকে একেবারে এক আলাদা মর্যাদা দিয়েছে তা হল তার শান্ত রস। তাঁর গানে অশান্ত চিত্ত যেভাবে সহজেই শুশ্রূষা খুঁজে পায় তাতে মনে হয় গানের মধ্যে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই বোধহয় নীলিমা সেনের সংগীতধর্ম ছিল।’ মনে হয়েছে অরুন্ধতী দেবের। তাঁর সম্পাদনাতেই থীমা থেকে নতুন করে প্রকাশিত হচ্ছে দূরের নীলিমা। নীলিমা সেন (১৯২৮-১৯৯৬), বিশুদ্ধতা ও রহস্যময়তার মেলবন্ধন ঘটেছিল যাঁর রবীন্দ্রগানে, তাঁর নিজের রচনাদি, সাক্ষাৎকার, চিঠিপত্র, শিল্পকর্মের আলোচনা, জীবনপঞ্জি, গানের সঙ্কলন, তাঁকে নিয়ে স্মৃতিকথন... এমন নানান বৈভবে ভরপুর এ বই। ২৮ এপ্রিল তাঁর জন্মদিন, এ বারে নব্বই পূর্তি উপলক্ষে শঙ্খ ঘোষ বইটির উদ্বোধন করবেন কলামন্দিরে, ২৯ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ৬টায়। তার পর ‘সংগীত ভারতী মুক্তধারা’-র শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘দূরের নীলিমা’, নব্বই জন পুরুষ শিল্পীর কণ্ঠে সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীত। নীলিমা সেনের রেকর্ড করা রবীন্দ্রগান থেকেই নির্বাচিত গানগুলি গাইবেন তাঁরা। অভিনব এই অনুষ্ঠানটির সামগ্রিক পরিকল্পনা ও সঙ্গীত পরিচালনায় অরুন্ধতী দেব।

বন্দরের ঐতিহ্য

বন্দরের কাল কি কখনও শেষ হয়? নদী আর তীরের মানবসভ্যতার উজান-ভাটার সাক্ষী সে আবহমান কাল ধরে। কলকাতা বন্দর ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বাণিজ্যসূত্র। বন্দরের গড়ে ওঠা তো সুদূর অতীতে, খিদিরপুর ডক তৈরির পর ১৮৯২-এ প্রথম ব্রিটিশ জাহাজ এসে ভিড়েছিল এখানে (সঙ্গের ছবি), ১৮৯৮-এ ভারতের মাটিতে এখানেই নামেন ভগিনী নিবেদিতা। উত্তমকুমারও এক সময় চাকরি করেছেন কলকাতা বন্দর অফিসে। এই বিপুল ইতিহাস তুলে ধরতে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট আয়োজন করছে প্রথম হেরিটেজ ট্যুর। ১৮ এপ্রিল বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসের দুপুরে ইতিহাসপ্রাচীন ‘ম্যান অব ওয়ার’ জেটি থেকে লঞ্চে, পরে হেঁটে ওরা দেখাবে বন্দরপথের ঐতিহ্যস্মারকগুলি। বিকেল সাড়ে ৫টায় স্ট্র্যান্ড রোডের মেরিটাইম হেরিটেজ সেন্টারে ‘ঐতিহ্য আসলে কার?’ বিষয়ে বলবেন বিক্রমজিৎ সিংহ রূপরাই, আমন্ত্রণমূলক অনুষ্ঠানটির যৌথ আয়োজনে ক্যালকাটা হেরিটেজ কালেক্টিভ।

প্রথম থিয়েটার

১৭৯৫-এ গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেদেফ কলকাতার ডোমটোলায় (এজরা স্ট্রিট) বাড়ি ভাড়া করে থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাড়িতেই মঞ্চ নির্মাণ করে ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে তিনি ‘কাল্পনিক সংবদল’ নামে একটি একাঙ্ক নাটক করেন। এই নাটকের দ্বিতীয় অভিনয় হয় তিন অঙ্কের নাটক হিসাবে। দু’টি অভিনয়ই টিকিট কেটে প্রচুর দর্শক দেখেন। কিন্তু পরে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সেই থিয়েটার বন্ধ করে দেওয়া হয়। লেবেদেফকেও দেশ ছাড়তে হয়। ১৮১৭ সালে প্রয়াত হন তিনি। প্রয়াণের দ্বিশতবার্ষিকী স্মরণে ১৭ এপ্রিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রাক্তনী: বাংলা বিভাগ’ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। থাকবেন চন্দন সেন।

পথিকৃৎ

মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজন আছে কি না, সে বিতর্ক মিটেছে। কিন্তু কেমন হবে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা? কেশবচন্দ্র সেন বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম শেখার দরকার নেই। অঙ্ক-জ্যামিতি-লজিক শিখে মেয়েদের কী হবে? প্রবল আপত্তি করে উনত্রিশ বছরের এক যুবক বোর্ডিং স্কুল স্থাপন করলেন। স্কুলের নাম হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়। যুবক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। আজ অনেকের কাছে তাঁর পরিচয়, ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বামী। তাঁর স্কুলেই পড়েছিলেন জগদীশচন্দ্রের বোন স্বর্ণপ্রভা বসু, তাঁর স্ত্রী অবলা বসু, শিবনাথ শাস্ত্রীর কন্যা হেমলতা দেবী। সেই ১৮৭৩ সালেই দ্বারকানাথের পরিচয়, ‘অবলাবান্ধব’ পত্রিকার সম্পাদক। স্ত্রীস্বাধীনতার পক্ষে তাঁর সওয়াল কলকাতার ব্রাহ্মসমাজেও আলোড়ন ফেলেছে। তাঁর সমাজ সংস্কারের কাজের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রমের পার্থক্য ছিল না। ভারতসভার তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য, অসমের কুলিদের উপর তাঁর ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ হত ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকায়। মাত্র চুয়ান্ন বছরের জীবনে মেয়েদের সমমর্যাদা, সমপ্রতিষ্ঠার লড়াইটা একাই অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিলেন দ্বারকানাথ। তাঁর ১৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ২১ এপ্রিল বিশেষ সভা ব্রাহ্ম সম্মিলনী সমাজে।

পিয়ানোর সুরে

এক সময়ে বাংলা ছবিতে হেন নায়ক-নায়িকা ছিলেন না, যিনি পিয়ানো বাজিয়ে গান গাননি। এখনও বাঙালির সঙ্গীত সংস্কৃতির ঝঙ্কারে একটি স্বর পিয়ানোর। সুভা দাস মল্লিক তাঁর ‘ক্যালকাটা সোনাটা’ তথ্যচিত্রে দেখিয়েছেন, কোম্পানির যুগে পিয়ানো আসার পর কলকাতায় পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সমাদর-চর্চার যে ধারা শুরু হল, তা আজও বইছে। পিয়ানো-বাহিত পাশ্চাত্য সঙ্গীত কী ভাবে বাংলা গানের মোড় ফেরাল, তা-ও আছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পিয়ানোতে সুর তুলছেন, রবীন্দ্রনাথ বসাচ্ছেন কথা, রবীন্দ্রসঙ্গীতের সেই তো সূত্রপাত। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও পিয়ানোর ‘স্ট্যাকাটো’ চলনটি নিলেন গতির সঞ্চার করতে। সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত-গবেষক, কয়েক প্রজন্মের শিক্ষক ও ছাত্র, যন্ত্রের কারিগর, অভিজাত হোটেল-রেস্তরাঁর মালিক, সবাই আছেন এ ছবিতে। নানা বয়ানে আর বাদনে ঠাসবুনট ছবি। দারুণ কিছু অ্যান্টিক পিয়ানোও দেখা গেল। এটি কলকাতার প্রথম ‘সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর তথ্যচিত্র বিভাগে রৌপ্যপদক পেয়েছে।

সদিচ্ছা

প্রতিষ্ঠানে যখন আঠারো মাসে বছরটাই নিয়ম, তখন উত্তরপাড়ার অরিন্দম সাহা সর্দার (জন্ম ১৯৮১) আর তাঁর সহযোদ্ধারা সামান্য সামর্থে কিন্তু অসীম সদিচ্ছায় তৈরি করে ফেলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভ: ‘জীবনস্মৃতি’। সংগৃহীত হয়েছে পাঁচশোর উপর সাক্ষাৎকার, চিঠি, দুষ্প্রাপ্য পত্রিকা, বই, সিনেমা পুস্তিকা, পোস্টার, ছবি, রেকর্ড, স্বরলিপি ইত্যাদি। ২০০৪ থেকে ২৪টি প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন তাঁরা। অরিন্দমের নেতৃত্বেই নিউটাউনে দু’টি স্থায়ী প্রদর্শনী: রবীন্দ্রতীর্থে ‘রবিবাবুর গান’ এবং নজরুলতীর্থে বিদ্রোহী কবিকে নিয়ে ‘মহাফেজখানা’ নির্মিত হয়েছে। আটটি তথ্যচিত্র বানিয়েছেন, তাঁর মধ্যে অরিন্দমের শিক্ষাগুরু সৌম্যেন্দু রায় ছাড়াও আছেন বংশী চন্দ্রগুপ্ত, সুব্রত মিত্র, হিরণ মিত্র বা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিষয়। অহর্নিশ পত্রিকা ২২ এপ্রিল ভবানীপুরে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে বিকেল সাড়ে ৫টায় অরিন্দমের হাতে তুলে দেবে নরেশ গুহ স্মরণে সম্মাননা। নরেশ গুহকে নিয়ে আলোচনা করবেন জ্যোতির্ময় দত্ত, মীনাক্ষী দত্ত, প্রভাতকুমার দাস ও রাহুল দাশগুপ্ত।

সঙ্গে অরিন্দমের ছবি: সপ্তর্ষি লোধ

জনসংযোগ

শিক্ষা সমাজ সংস্কৃতি অর্থনীতি— বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঠিকঠাক জনসংযোগই সাফল্যের চাবিকাঠি। এই কারণেই কিছু স্বেচ্ছাব্রতীর নেতৃত্বে ১৯৫৮ সালে জন্ম নেয় ‘পাবলিক রিলেশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’। দেখতে দেখতে এই প্রতিষ্ঠানটিই ষাট বছরে। ভারতের ছাব্বিশটি শহরে এর অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বার হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে ‘জাতীয় জনসংযোগ দিবস’-এ অর্থাৎ ২১ এপ্রিল সন্ধ্যে ৭টায় কলকাতার পাবলিক রিলেশন সোসাইটির উদ্যোগে স্বভূমি রাসমঞ্চ ২-এ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। উদ্বোধন করবেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

নাট্যোৎসব

সাড়ে তিন-চার বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে নান্দীকারের নাটক ‘শেষ সাক্ষাৎকার’ দেখা আর বারো বছরে ‘ফেরিওয়ালার মৃত্যু’ দেখার পর ফেরিওয়ালার চরিত্রাভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের সঙ্গে দেখা করতে গেলে উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেমন লাগল? শুধু বলেছিলাম, ফেরিওয়ালার জন্য বড্ড কষ্ট লেগেছে। উনি আমার মাথায় হাত রেখেছিলেন, সেই বুঝি শুরু। ২০০২-এ নান্দীকারে শিক্ষার্থী হিসাবে যোগদান, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ নাটকে প্রথম অভিনয়, দলের কুড়িটি নাটক ও অন্য গ্রুপেও অভিনয় করেছেন। তবে স্বপ্ন বাস্তব হয়েছিল যখন ‘ফেরিওয়ালার মৃত্যু’ নাটকে পরে অভিনয়ের সুযোগ পান। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর নাট্য পরিচালনা নিয়ে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নাটকের শিক্ষকতা করা রিমি মজুমদার ২০১০-এ ‘ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং থিয়েটার গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাদেরই আয়োজনে তিন দিনের এই প্রথম নাট্য উৎসব আজ অ্যাকাডেমিতে বিকাল পৌনে ৬টায় ব্রাত্য বসু উদ্বোধন করবেন, পরে নিজস্ব দলের ‘প্রিয় পাঠশালা’ ও নয়ে নাটুয়া-র ‘বড়দা’ মঞ্চায়ন। আগামিকাল তপন থিয়েটারে, পরশু যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে নাটক শুরু সন্ধে ৬টায়।

শিল্পী স্মরণে

‘একটুকরো শক্ত কাগজ আর কাঁচি পেলে কাগজ কাটাই নকশাতে যে কোনও ছবি কেটে দিতে ওস্তাদ ছিল প্রবাল’, বলছিলেন শিল্পীবন্ধু নরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পী প্রবাল প্রামাণিক কিছু দিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন। শহুরে সমাজে প্রবল অনীহা ছিল, তাই পাহাড়ে গিয়ে ডেরা বেঁধেছিলেন তিনি। অতঃপর, বাবার মৃত্যুর পর ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানির হাল ধরেন। সেই সময়েই তিনি ঠিক করেছিলেন শিল্পী কাশীনাথ কোলের গবেষণাগ্রন্থ রবীন্দ্র চিত্রকলায় নারী প্রকাশ করবেন। এ বছর সংস্থার ৮৫ বছর। এই উপলক্ষে প্রতিষ্ঠাতা প্রহ্লাদকুমার প্রামাণিক ও প্রবাল প্রামাণিকের স্মরণে সম্প্রতি আইসিসিআর-এ হয়ে গেল অনুষ্ঠান। প্রকাশ পেল বইটি। প্রথম পর্বে দুর্গা বন্দনা এবং শেষ পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

লোকসঙ্গীত

সালটা ১৯৮২। বাংলাদেশে বিজয় দিবসের আগের দিন সৈয়দপুরে আওয়ামি লিগের অনুষ্ঠান। একটা গান গাওয়ার অনুরোধ করতেই সবাই মারমুখী। গান ভাল না লাগলে চিরতরে সঙ্গীতকে বিদায় জানাব এই শর্তে ‘তুমি রহমতের নদীয়া, দোয়া কর মোরে শাহজালাল আউলিয়া...’ গান গাইবার পর ভাল গানের স্বীকৃতি পেলাম।’’ বলছিলেন, শ্রীহট্টের লোকগানের বিশিষ্ট শিল্পী ও সংগ্রাহক জামালউদ্দিন হাসান বান্না। সহস্রাধিক গান তাঁর মগজের কম্পিউটারে রক্ষিত, গাওয়ার সময় না লাগে খাতা, না বইপত্তর। ছোটবেলা থেকেই স্কুল পালিয়ে কীর্তন শুনতে বা দরগায় গানের আসরে হাজির হতেন। জামালউদ্দিন আজ দেশে বিদেশে হজরত শাহজালাল, আবদুল করিম, দ্বিজদাস, হাসনরাজা, ভবানন্দ ভট্টাচার্য, দুরবিন শাহ-সহ বাউল আউলিয়াদের গান শুনিয়ে মন মজিয়ে তোলেন। তিনি বলেন, শ্রীহট্টে জন্ম গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর, আবার তা হজরত শাহজালালের কর্মভূমিও। সেখানে জন্মে আমার বিশ্বাস সম্প্রীতির ভালবাসায় একে অপরের পাশে দাঁড়ালেই বুঝি সাধনা সার্থক হবে! সম্প্রতি পিসিচন্দ্র গ্রুপের সহযোগিতায় ‘দোহার’-এর আমন্ত্রণে জামালউদ্দিন ‘ভাটি অঞ্চলের গান’ শীর্ষক কর্মশালায় ৭৫জন শিক্ষার্থীকে পাঠ দিলেন ও পর দিন ‘কথায় গানে ভাটির টানে’ অনুষ্ঠানে দোহারের সঙ্গতে নানা গান গাইলেন। গান শুনে পিসিচন্দ্র গার্ডেন হলের শ্রোতারা যখন অশ্রুসিক্ত, বাইরে তখন চলছে অঝোরে বৃষ্টি! গানেই বুঝি এমনটা সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE