Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরিকাঠামোর অভাবেই দুর্ঘটনা ভিআইপি রোডে

ট্র্যাফিক পুলিশ রয়েছে। তবে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামো এখনও পর্যাপ্ত নয় ভিআইপি রোডে, যার জেরে নিত্য দিনই বাসে বাসে চলছে রেষারেষি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

ট্র্যাফিক পুলিশ রয়েছে। তবে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামো এখনও পর্যাপ্ত নয় ভিআইপি রোডে, যার জেরে নিত্য দিনই বাসে বাসে চলছে রেষারেষি। ঘটছে দুর্ঘটনাও। যেমন ঘটেছে শনিবার সন্ধ্যায় কেষ্টপুরে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় কেষ্টপুরের কাছে একই রুটের দুটি বাস রেষারেষি করছিল। একটি টালিগঞ্জ-বারাসত রুটের সিটিসি-র বাস। অন্যটি গড়িয়া-বারাসত রুটের একটি চার্টার্ড বাস। যদিও পুলিশের দাবি, দুর্ঘটনার কারণ সিটিসি বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারানো। ওই ঘটনায় এক সাইকেল আরোহী শনিবার ঘটনাস্থলেই মারা যান। সোমবার পর্যন্ত ওই ঘটনায় দুটি বাসের চালকেরা কেউ ধরা পড়েননি। দুটি বাসের চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

এই রেষারেষির চিত্র ভিআইপি রোডে নিত্যদিনই ঘটে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, যে কোনও দুটি একই রুটের বাস কাছে এলে বিপজ্জনক ভাবে রেষারেষি করে চলতে থাকে। এর জেরেই ঘটে দুর্ঘটনা। গত জুনে সকাল সাড়ে ন’টার সময় দুটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে জোড়া মন্দিরের কাছে উড়ালপুলের নীচের রেলিংয়ে ধাক্কা মেরেছিল। এর পর গত অগস্টে লেকটাউন ট্র্যাফিক গার্ডের কাছে ভরা বর্ষার দিনে গড়িয়া-বারাসত রুটের দুটি চার্টার্ড বাস রেষারেষি করে একটি অন্য বাসকে ধাক্কা মারে। ওই বাসটির বেশ কয়েক জন যাত্রী আহত হন।

কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?

ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীদেরই একাংশের বক্তব্য, কলকাতায় ট্র্যাফিক আইন না মানলে জরিমানা করার জন্য গাড়িকে সব সময় আটক করতে হয় না। ক্যামেরায় দেখেই কন্ট্রোল রুম থেকে সেই গাড়ির বিরুদ্ধে জরিমানা করা যায়। ভিআইপি রোডে সর্বত্র সেই ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। ট্র্যাফিক কর্মীরা জানান, দিনের ব্যস্ত সময় গাড়ির চাপ এত বেশি থাকে সেই সময় ভিআইপি রোড যানজট মুক্ত রাখতেই তাঁদের বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে অনেক সময় রেষারেষি কিংবা অন্যান্য ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করলেও দোষী গাড়িকে আটকানো সম্ভব হয় না। তা সত্ত্বেও ভিআইপি রোডে রেষারেষি-সহ বিভিন্ন ভাবে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার জন্য সেপ্টেম্বরে মাসে পাঁচ হাজারটি মামলা হয়েছে বলে দাবি বিধাননগরের এডিসিপি (ট্র্যাফিক) জয় টুডুর।

ই এম বাইপাসের সঙ্গে ফারাকটাও এখানে। বাইপাসে কাদাপাড়ার মোড়ে গাড়ির গতি মাপার জন্য কলকাতা পুলিশের বিশেষ যন্ত্র বসানো রয়েছে। নির্ধারিত গতির বাইরে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চললেই জরিমানা হবে। ফলে চালকেরা সংযত থাকেন সেখানে। সেই ব্যবস্থা ভিআইপি রোডে নেই। অথচ ভিআইপি রোড ইতিমধ্যেই ছয় লেনের চওড়া হয়ে গিয়েছে। ফলে চালকেরা সেখানে বেপরোয়া।

যাত্রীরা জানাচ্ছেন, বিশেষত সন্ধ্যার পর থেকে বাসে বাসে রেষারেষি বেড়ে যায় ভিআইপি রোডে। এই রেষারেষির জেরেই ২০০৮ সালে বাগজোলা খালে বাস পড়ে গিয়ে ২৬ জন মারা গিয়েছিলেন। তার পরে ঠিক হয়েছিল ভিআইপি রোডে গাড়ির গতি বেঁধে দেওয়া হবে। সেই মতো রাস্তার ধারে কোথাও কোথাও গাড়ির গতি নির্ধারিত করে পুলিশ বোর্ড ঝুলিয়েছিল। কিন্তু সেই গতি নিয়ন্ত্রণের বোর্ড চালকেরা কেউই মানেন না বলে অভিযোগ।

পুলিশ জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে ভিআইপি রোডে ১ নম্বর গেট, কৈখালি, বাগুইআটি ও লেকটাউন- এই চারটি ট্র্যাফিক গার্ড রয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র ক্যামেরার মাধ্যমে ১ নম্বর ট্র্যাফিক গার্ড থেকেই একটি নির্ধারিত দূরত্ব পর্যন্ত গাড়ির গতিবিধির উপরে নজর রাখা যায়।

তবে এডিসিপি-র দাবি, অন্যান্য ট্র্যাফিক গার্ডগুলি থেকেও এই নজরদারি ব্যবস্থা দ্রুত চালু হবে। নিউ টাউনে ট্র্যাফিকের কন্ট্রোল রুম থেকেও তখন ভিআইপি রোডের উপরে নজরদারি চালানো সম্ভব হবে বলেই জানিয়েছেন এডিসিপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

VIPRoad Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE