সচেতনতার পাঠ: তিলজলার বস্তিতে। —নিজস্ব চিত্র।
পেটের অসুখে পরপর তিন সন্তানের মৃত্যু দেখেছিলেন বছর আঠাশের তরুণীটি। রুমেনা বিবি তখন ছিলেন ঘিঞ্জি রাইফেল রেঞ্জ রোডের বাসিন্দা। পরে স্বামী চলে যান। আবার বিয়ে করে রুমেনা চলে আসেন হাটগাছিয়ায়। সেখানেও ঘরে ঘরে পেটের অসুখ।
কারণ, কলকাতা পুরসভার ধাপা সংলগ্ন ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের খানাবেড়িয়া, হাটগাছিয়া, আরুপোতা, উঁচুপোতা, ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের তিলজলা, তপসিয়া, রাইফেলরেঞ্জ রোডের বাসিন্দাদের দিন শুরু আর শেষই হয় আবর্জনার পাহাড়ে বসে ময়লা বেছে। হাত না ধুয়ে মুখে দেওয়া, জল বা রান্না করা খাবারে ঢাকা না দেওয়া, ধাপা এলাকার বিষাক্ত জলের ব্যবহারে তাই লেগেই থাকত আন্ত্রিক।
এখন অভ্যাস বদলেছে। খাওয়ার আগে-পরে, শৌচকর্মের শেষে হাত ধোওয়া, জল ফুটিয়ে খাওয়া, খাবার জল ঢেকে রাখা, বছরভর বাড়িতে ওআরএস এবং ওষুধ মজুত করার অভ্যাস বদলে দিয়েছে রুমেনা বিবিদের জীবন। রুমেনার কথায়, ‘‘বাচ্চা মরে যাওয়ার দায় আমার উপরে চাপিয়ে ছেড়ে দেয় স্বামী। বিয়ের পরে এখানে এসেও দেখলাম সেই পেটের অসুখ। বাচ্চা হলে মরে যাবে ভেবে আনতেই ভয় পেয়েছিলাম। এখন ভয় কেটেছে। একটা মেয়ে রয়েছে আমাদের।’’
বছর তিনেক আগে দুই ওয়ার্ডে মায়েদের সচেতনতার প্রশিক্ষণ শুরু করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অন্য মহিলাদের নিয়ে সেখানে যান রুমেনা। স্থানীয় মাধবী মণ্ডল, সীমা মাজিরা জানান, গল্পের ছলে তাঁদের সচেতনতার পাঠ দেওয়া হয়। ওই সংস্থার এক কর্মীর কথায়, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুর মায়েদের স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস শেখানো হয়। আন্ত্রিক হলে ওআরএস, ওষুধ খাওয়া, নুন-চিনির জল দেওয়ার কথা বলা হয়।’’
তাতে কাজ হয়েছে বলে আপাতত ইঙ্গিত। গত চার দিনে মাঠপুকুর, কাছাড়িয়াপাড়া, হাটগাছিয়া থেকে শিশু-প্রাপ্তবয়স্ক মিলে ২৬ জনের আন্ত্রিকে আক্রান্ত হওয়ার খবর এলেও হাসপাতালে ভর্তি হননি কেউ। কারণ, আরুপোতার পিঙ্কি দাসের কথায়, ‘‘এখন তো ঘরেই থাকে ওআরএস, ওষুধ। বাচ্চা তিন বারের বেশি পায়খানা করলেই সে সব খাওয়াতে শুরু করি।’’ আসলে আবর্জনার পাহাড় ঘেঁটেও অভ্যাস বদলানো যায়। ইচ্ছে থাকলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy