Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দীপাবলিতে কালীঘাটে লক্ষ্মীর পুজো

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামতেই মন্দিরের চারদিকে সাত পাক ঘোরার পরে খড়ের পুতুলে আগুন ধরিয়ে দূর করা হল অলক্ষ্মীকে। তবেই হবে মা লক্ষ্মীর পুজো। সেটিই মূল পুজো। কালীপুজোর দিন কালীঘাটের মন্দিরের পুজোর এমনই রীতি।

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

কালীঘাটে আছেন কালী। সঙ্গে রয়েছেন লক্ষ্মীও।

কালীপুজোর দিন সব আয়োজনের কেন্দ্রে তিনিই। সে রীতি বজায় থাকল এ বছরও।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামতেই মন্দিরের চারদিকে সাত পাক ঘোরার পরে খড়ের পুতুলে আগুন ধরিয়ে দূর করা হল অলক্ষ্মীকে। তবেই হবে মা লক্ষ্মীর পুজো। সেটিই মূল পুজো। কালীপুজোর দিন কালীঘাটের মন্দিরের পুজোর এমনই রীতি।

এ দিন অলক্ষ্মী দূর করার নিয়ম সারা হলে সন্ধ্যার পরে শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো। দক্ষিণা কালীকেই লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয় এ দিন। কালীঘাট মন্দিরের এক সেবাইত জানান, রোজের মতোই মা কালীর ভোগ দেওয়া হয়। সকালে নিত্যপুজোর ফল প্রসাদ, নৈবেদ্য হিসেবে আতপ চাল। দুপুরেও রোজের মতো মায়ের ভোগে থাকে শুক্তো, পাঁচ রকম ভাজা, সাদা ভাত, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস, পোলাও, পায়েস। এই দিনটায় কালীঘাটের মন্দিরের সব সেবাইতের ঘর থেকেই মায়ের ভোগ পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় খড়ের অলক্ষ্মীর পুতুল পোড়ানোর পরেই কালীঘাটের মা দক্ষিণা কালীকে পুজো করা হয়। পুজোর পরে দক্ষিণাকালীকেই লক্ষ্মী রূপে ভোগও দেওয়া হয়। তার পরে ঘণ্টা খানেক হয় আরতি।

কালীঘাট মন্দিরের এক সেবাইতের বলেন, ‘‘কালীঘাটের শাস্ত্রমতে দক্ষিণা কালীকেই লক্ষ্মীরূপে পুজো করা হয়। সন্ধ্যার পরে অলক্ষ্মী দূর করার উদ্দেশ্য সমাজ থেকে অন্ধকার দূর করা। সমাজ ও সংসার থেকে অন্ধকার দূর করে আলোয় ভরিয়ে দেওয়ার লক্ষেই কালীপুজোর দিন কালীঘাটে দক্ষিণা কালীকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়।’’

বুধবার রাত থেকেই কালীঘাট মন্দির চত্বরে পুলিশি নিরাপত্তা একেবারে আঁটোসাঁটো। বুধবার গভীর রাতেই অমাবস্যা পড়ে গিয়েছে। ফলে রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ভক্তসমাগমও। ভোরের পর থেকে তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ফলে মন্দিরের সব গেটে পুলিশি নজরদারি হয়েছে আরও কড়া। তবে পুলিশি নজরদারির ফাঁকেও পাণ্ডাদের ছল-ছাতুরির খুব একটা অভাব ছিল না।

সকাল থেকেই মন্দিরের দীর্ঘ লাইন। কয়েক জন পাণ্ডা ভক্তদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো থেকে মুক্তি দিতে ‘হাইটেক’ পুজোর ব্যবস্থা করেছেন। গেটের দীর্ঘ লাইন না দাঁড়িয়েও দেওয়া যাচ্ছে পুজো। পাণ্ডাদের কাছে গিয়ে বললেই হল। শুধু কত টাকার প্রসাদ আর নাম-গোত্র জানিয়ে দিতে হবে। মন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পাণ্ডা তা মোবাইলে ফোন করে জানিয়ে দেবেন ভিতরের পাণ্ডাদের। কিছুক্ষণ পরে মন্দিরের লোহার গেটের ফাঁক দিয়ে বারিয়ে দেওয়া হবে প্রসাদ আর পুজোর ফুল। ‘হাইটেক’ পুজোর দক্ষিণা অবশ্য বেশি নয়। কোনও ভক্ত পঞ্চাশ দিচ্ছেন, তো কেউ একশো। পাণ্ডাদের সাফ কথা, মায়ের দর্শন না করেও পুজো দেওয়া যায়। এক পাণ্ডা বলেন, ‘‘পুজোর ক্ষেত্রে মায়ের দর্শন জরুরি নয়। মন্দিরের চুড়ো দেখা আর মায়ের মুখ দর্শন করা একই ব্যাপার।’’

এ দিন দেখা গেল, একাধিক কালীভক্ত মোবাইল-পুজোর প্রসাদ মাথা ঠেকিয়ে দু’হাত উপরে তুলে মন্দিরের চুড়োর দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে মনে মনে প্রার্থনা করে মন্দির চত্বর ছাড়ছেন। চারদিকে ওয়াকিটকি নিয়ে পুলিশ ঘুরলেও মোবাইল পুজোর বিষয়ে তাঁদের কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘সব কিছুই সহমতে হচ্ছে। কোনও বিশৃঙ্খলা তো হচ্ছে না। আমারা শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে রয়েছি। যার যেমন ইচ্ছে, সে ভাবে পুজো দিচ্ছেন। আমাদের কাছে তো কোনও অভিযোগ আসেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalighat Kali Temple Kali Puja Lakshmi Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE