Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রেফতার নেতা, ভেস্তে গেল জমি আন্দোলন

গর্জন করেছিলেন ওঁরা। কিন্তু বর্ষাতে আর দিল না প্রশাসন। জমি ফেরতের দাবি নিয়ে সোমবার হিডকো প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাজারহাটের জমিহারারা। সেই স্মারকলিপি গ্রহণ না করা হলে সোমবার তাঁরা আইন অমান্য করবেন বলে হুমকিও দিয়েছিলেন।

আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। সোমবার, নিউ টাউন থানার সামনে। — নিজস্ব চিত্র

আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। সোমবার, নিউ টাউন থানার সামনে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

গর্জন করেছিলেন ওঁরা। কিন্তু বর্ষাতে আর দিল না প্রশাসন।

জমি ফেরতের দাবি নিয়ে সোমবার হিডকো প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাজারহাটের জমিহারারা। সেই স্মারকলিপি গ্রহণ না করা হলে সোমবার তাঁরা আইন অমান্য করবেন বলে হুমকিও দিয়েছিলেন।

কিন্তু রবিবার সকাল থেকেই পুলিশ মাঠে নেমে পড়ে। ওই দিন সন্ধ্যায় যাত্রাগাছি থেকে পাঁচ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। সোমবার সকাল থেকেই হিডকো ভবনের সামনে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। মোতায়েন করা হয়েছিল বিরাট পুলিশবাহিনীও।

এ দিন যখন চাষিরা জমি ফেরতের আবেদনপত্র হিডকোতে জমা দেওয়ার জন্য জমায়েত করছিলেন, সেই সময়ে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক শেখ নিজামুদ্দিনকেও। তার পরেই চাষিদের এ দিনের আন্দোলন ভেস্তে যায়।

এই ঘটনার পরে রাজারহাটের জমিহারাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। জেলা নেতৃত্বের ভূমিকায় সায় দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘রাজারহাটের চাষিদের দোষ কোথায়? তাঁরাও সিঙ্গুরের মতোই সিপিএমের দ্বারা শোষিত হয়েছেন। সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি ফেরত দিচ্ছেন। রাজারহাটেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে জমি ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেন। তাই রাজারহাটের মানুষ জমি ফেরত চাইছেন। সেই কাজে তাঁরা আমাদের সহায়তা যখন চাইছেন, তখন কংগ্রেস তো তাঁদের পাশে দাঁড়াবেই।’’

সিঙ্গুরের পরে রাজারহাটের জমিহারারাও নতুন করে জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, নিউ টাউন তৈরির সময়ে বামফ্রন্ট সরকার জোর করে তাঁদের থেকে জমি নিয়েছিল।

জমি ফেরত পেতে আবেদনপত্র ছাপিয়ে গত সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর চাষিরা হিডকো ভবনে গিয়ে জমা দিয়েছিলেন। সে দিন দেড় হাজার মানুষের আবেদনপত্র হিডকো ভবনে জমা দেন বলেই চাষিদের দাবি।

এ দিন সেই সংখ্যাটা আরও বেশি হবে বলেই জানিয়েছিলেন চাষিরা। শেখ নিজামুদ্দিন জানিয়েছিলেন, সোমবার তাঁরা হিডকো কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবেন। হিডকো স্মারকলিপি না নিলে চাষিরা আইন অমান্য করবেন বলেই হুমকি দিয়েছিলেন তাঁরা।

এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবারই তাঁকে গ্রেফতার করতে চেয়ে চিনার পার্কে নিজামুদ্দিনের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বিকেলে যাত্রাগাছি থেকে পাঁচ জন আন্দোলনকারীকে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করা হয়। হিডকো কর্তৃপক্ষ এ দিন আর চাষিদের আগের দিনের মতো হিডকো ভবনে ঢুকতে দেননি। হিডকোর বাইরে একটি ‘ড্রপ বক্স’ রেখে দেওয়া হয়। পুলিশকেই মাইকে ঘোষণা করে বলতে শোনা যায় যে, আবেদনপত্র যেন চাষিরা ওই ড্রপ বক্সে ফেলে দেন।

এ দিন সকালে হিডকো চত্বরে পা রাখতেই নিজামুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যাতে কেউ তাঁর নাগাল না পায়, তার জন্য নিজামুদ্দিনকে গ্রেফতার করে বিমানবন্দরের এনএসসিবিআই থানায় বসিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যার পরে অবশ্য তাঁকে থানা থেকেই জামিন দেওয়া হয়েছে। রবিবার যাত্রাগাছিতে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁরাও বিকেলে বারাসত আদালত থেকে জামিন পান। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান তথা মুখপাত্র সন্তোষ পাণ্ডে জানান, নিজামুদ্দিন-সহ প্রত্যেককেই গণ্ডগোলের আশঙ্কা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল।

এ দিকে নিজামুদ্দিন গ্রেফতার হওয়ায় আন্দোলনকারীরা তাঁকে ছাড়াতে নিউ টাউন থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ সেই বিক্ষোভ প্রতিহত করতে গেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাঁদের সামান্য ধস্তাধস্তিও হয়।

দুপুরের দিকেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস আসরে নামে। নিজামুদ্দিনকে ছাড়াতে নিউ টাউন থানায় আসেন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তাপস মজুমদার-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। তিনি বলেন, ‘‘নিজামুদ্দিন কোনও দাগী অপরাধী নন, যে এ ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করবে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajarhat land leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE