Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মমতার সই জাল, হাজতে প্রোমোটার ও জমির মালিক

চিঠিতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষর! পাশে আবার সই রয়েছে মুখ্যসচিবেরও! আর সেই চিঠি কি না এক জন প্রোমোটারের বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের জন্য!

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩২
Share: Save:

চিঠিতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষর! পাশে আবার সই রয়েছে মুখ্যসচিবেরও! আর সেই চিঠি কি না এক জন প্রোমোটারের বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের জন্য!

এমন চিঠি পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষের। খবর যায় পুলিশের কাছে।

শুক্রবার দুপুরে পুরভবন থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় প্রোমোটার রাজীব ঘোষকে। পরে তদন্তে নাম উঠে আসে সেই জমির মালিক জোনাকি বসুর। তাঁকেও এ দিন হেফাজতে নিয়ে কিছুক্ষণ জেরা করার পরে গ্রেফতার করে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ।

প্রশ্ন উঠেছে, কে এই রাজীব ঘোষ কিংবা জোনাকি বসু, যাঁরা ধরা পড়ে যেতে পারেন জেনেও এই কাজ করতে ভয় পেলেন না? তাঁরা সমাজে ঠিক কতটা প্রভাবশালী?

পুলিশ জানিয়েছে, বাগুইআটির ঘোষপাড়ার বাসিন্দা রাজীব। ‘সমৃদ্ধি কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি সংস্থার অন্যতম কর্তা তিনি। মূলত নির্মাণের কাজই করেন। জোনাকি বাগুইআটির ঝিলপাড়ার বাসিন্দা।

পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে ধৃত রাজীব বিধাননগর পুর নিগমের মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে যান। আধ ঘণ্টা পরে সেখানে হাজির হন বিধাননগরের এসিপি পদমর্যাদার এক অফিসার। পুরভবন থেকে ওই প্রোমোটারকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর দক্ষিণ থানায়। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জোনাকি বসুকেও থানায় নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতির জন্য জাল নথি ব্যবহার, ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, বাগুইআটির ঝিলপাড় এলাকার একটি প্লটে পাঁচতলা ভবন তৈরি হবে। নির্মাণকারী সংস্থার কর্তা রাজীব ঘোষ বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করানোর জন্য পুরসভায় যোগাযোগ করেন। পুরকর্তাদের দাবি, পুর আইন মোতাবেক জমা দেওয়া প্ল্যানে অনেক গণ্ডগোল ছিল। তা পুর আইন ভঙ্গের সামিল। তাই রাজীবকে ওই প্ল্যানের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এর পরে প্ল্যান আটকে দেওয়া হয়েছে বলে মেয়র সব্যসাচী দত্তের কাছে অভিযোগ জানাতে থাকেন ওই প্রোমোটার। মেয়রের দাবি, ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন, পুর আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে দেখেই প্ল্যান আটকানো হয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, এর পরে মেয়রের কাছে একটি চিঠি জমা দেন ওই প্রোমোটার। সেই চিঠিতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং রাজস্ব দফতরের উল্লেখ রয়েছে। এমনকী, চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাক্ষরও রয়েছে।

চিঠিটি পাঠানো হয়েছে মেয়র সব্যসাচী দত্তকে উদ্দেশ করে। মেয়র এ দিন বলেন, ‘‘চিঠি দেখেই আমার সন্দেহ হয়। পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে।’’

পাশাপাশি, পুর প্রশাসনের একটি অংশের দাবি, বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের জন্য শীর্ষ পদাধিকারীদের নির্দেশ দেওয়ার কোনও প্রক্রিয়া তাঁদের জানা নেই। তাই চিঠি দেখেই জাল বলেই মনে হয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজীব জেরায় জানিয়েছেন, জমির মালিকই ওই চিঠির বন্দোবস্ত করেছিলেন।

রাতে ধৃত রাজীবের এক আত্মীয় পার্থ ঘোষের দাবি, তাঁর ভাই ফেঁসে গিয়েছেন। জমির মালিক জোনাকি বসুই ওই চিঠি ভাইকে জমা দিতে দিয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি। জমির মালিক দাবি করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

তদন্তকারীরা অবশ্য জানিয়েছেন, জমির মালিকের বক্তব্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সইয়ের পাশে যে তারিখ রয়েছে, সে দিন ইদের ছুটি ছিল। এ ছাড়াও অনেক অসঙ্গতি রয়েছে ওই চিঠিতে।

বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সই জাল করার দুঃসাহস কোথা থেকে পেল ধৃতেরা? ধৃতদের মূর্খামি না কি গভীর ষড়যন্ত্র, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata signature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE