Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ক্যাব ব্যবসার নামে বহু লক্ষ টাকা প্রতারণা

অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে চম্পট দিল অভিযুক্ত। লেকটাউন থানা এলাকার এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শোভমদীপ চক্রবর্তীর শ্যালক তথা সংস্থার অন্যতম কর্তা সন্দীপ হাজরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে চম্পট দিল অভিযুক্ত। লেকটাউন থানা এলাকার এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শোভমদীপ চক্রবর্তীর শ্যালক তথা সংস্থার অন্যতম কর্তা সন্দীপ হাজরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ি এলাকায় একটি বহুতলে সংস্থার অফিস খুলে বসেছিল শোভমদীপ। দক্ষিণদাঁড়ি রোডের বাসিন্দা ঝন্টু সাহা জানান, বিভিন্ন অ্যাপ-ক্যাব পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থায় গাড়ি দিয়ে টাকা উপার্জনের টোপ দিয়েছিল মূল অভিযুক্ত।

ব্যবসার শর্ত ছিল, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ করে গাড়ি কিনবেন আবেদনকারী। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, চালক এবং তেলের খরচ ওই সংস্থার। মাসে কুড়ি হাজার টাকা করে পাবেন আবেদনকারী। ঝন্টু বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের জন্য অগ্রিম বাবদ দু’দফায় দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। ছ’মাসের মধ্যে গাড়ি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গাড়ি তো পেলাম না, উল্টে টাকাও গেল।’’

ঝন্টুর মতো একই ভাবে প্রতারণার শিকার অন্য ব্যক্তিরা। সেই তালিকায় গৃহবধূ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীও আছেন। ডানকুনির বাসিন্দা সাজিদা হক জানান, তরুণ মণ্ডল নামে একজনের মাধ্যমে শোভমদীপের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। স্বামী অসুস্থ। এই পরিস্থিতিতে বাড়তি রোজগারের আশায় নিজেদের গাড়ি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় খাটানোর জন্য দেন সাজিদা। প্রথম মাসে প্রতিশ্রুতি মতো তিনি ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তার পরেই গণ্ডগোল। সাজিদার কথায়, ‘‘শোভমদীপ বলেছিল, পারমিটের সমস্যার জন্য পুরনো গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। নতুন গাড়ি যদি কিনি তাহলে দুটো গাড়িই চালানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেই মতো এক লক্ষ ২৪ হাজার টাকা দিই। কিন্তু নতুন গাড়ি পাইনি, পুরনো গাড়িও হাতছাড়া। এ দিকে পুরনো গাড়ির ঋণের কিস্তি গুনতে হচ্ছে।’’ সাজিদার মতোই দু’কূল হারানোর গল্প মানিকতলার বাসিন্দা ছন্দাঞ্জলি দে-র। উল্টোডাঙার বাসিন্দা মাধবী দাঁ ভাল করে হাঁটাচলা করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘‘চার লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। টাকা চাইতে গেলে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল।’’

কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে চারটে গাড়ির জন্য ৮ লক্ষ টাকা দিয়ে এখন পথে বসেছেন মিতালি চট্টোপাধ্যায়। সারা জীবনের সঞ্চয় থেকে ৯ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসার স্বপ্ন দেখেছিলেন যাদবপুরের বাসিন্দা রেলের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। এ দিন ক্ষুব্ধ বৃদ্ধ বলেন, ‘‘কষ্টের উপার্জনের টাকা যে ডুবছে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দারা শুধু নয়। প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাদ পড়েননি প্রতিবেশীরাও। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, চা বিক্রেতাকে পর্যন্ত ছাড়েনি শোভমদীপ। গত ৩১ মার্চ যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন তাঁদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছিল মূল অভিযুক্ত। সে দিন টাকা নিতে এসে আবেদনকারীরা দেখেন, অভিযুক্ত পগার পার। এর পরে সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। এ দিন সংস্থার অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা।

ধৃত সন্দীপ হাজরাকে এ দিন বিধাননগর আদালতে তোলা হলে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। শোভমদীপকে গ্রেফতার করে টাকা এবং গাড়ি উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Money Laundering Arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE