বাজেয়াপ্ত হওয়া মদ। নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি হওয়ার খবর পেয়ে এর আগে শহরের হুকা বারে হানা দিয়েছেন আবগারি অফিসারেরা। নিয়ম না মানার অভিযোগ পেয়ে হানা দেওয়া হয়েছে নামী-দামি বারেও।
এ বার শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া পার্টি। ফেসবুকের দেওয়ালে বিনে পয়সার সেই ‘লেটস্ পার্টি’-র বিজ্ঞাপন দেখে এগিয়ে আসছে তরুণ-তরুণীর দল। শহরের এক কোণে ভাড়া করা হচ্ছে লাউঞ্জ। সেখানেই হাজির হচ্ছেন দম্পতি, বন্ধুবান্ধব। থাকছে গোটা উচ্চবিত্ত পরিবার, সাধারণ চাকুরিরত বা কলেজপড়ুয়ারাও। এঁদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা ছড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ মারফত। তার পরে দিনক্ষণ ঠিক করে ঠিকানা বলে দিলে নেশাতুর সন্ধ্যা কাটাতে জড়ো হচ্ছে অপরিচিত সব মুখ। আলাপ জমে উঠছে পার্টিতেই।
সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে, আইনের চোখকে ধুলো দিয়ে, আবগারি দফতরের অনুমতি ছাড়াই মদ্যপান-সহ এই ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া পার্টি যে হচ্ছে, তা দফতরের অফিসারদের কাছে খবর আসছিল। কিন্তু ধরতে পারছিলেন না তাঁরা। রবিবার, বর্ষশেষে এমনই এক পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল লেক থানা এলাকার মেঘনাদ সাহা সরণিতে। সেই পার্টিতে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তির মাধ্যমে খবর চলে আসে আবগারি দফতরের কাছে। যে হলে সেই পার্টি চলছিল, সেখানে রবিবার রাতেই হানা দেন অফিসারেরা। আবগারি লাইসেন্স ছাড়া এমন পার্টি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সৌরভ দত্ত নামে সেই লাউঞ্জের মালিককে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ লন্ডন থেকে এমবিএ-ও করেছেন।
কিন্তু গ্রেফতার কেন? কেউ যদি নিজে একটি পার্টি আয়োজন করে চেনা-অচেনা লোকেদের ডেকে মদ্যপান করেন, তা কি অপরাধ?
আবগারি দফতরের অতিরিক্ত কমিশনার সুব্রত বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আপনি আপনার বাড়িতে যাকে খুশি ডেকে মদ্যপান করলে তো কারও কিছু বলার থাকে না। লাউঞ্জ ভাড়া নিয়ে মদ্যপান ছাড়া পার্টি করলেও কিছু বলার নেই। কিন্তু লাউঞ্জ ভাড়া নিয়ে মদ্যপানের আয়োজন করলে তাতে আবগারি দফতরের অনুমতি প্রয়োজন।’’ অভিযোগ, সৌরভের লাউঞ্জের সেই অনুমতি নেওয়া ছিল না। সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, শহরে এই ধরনের অনেক লাউঞ্জ আছে, যেখানে এই অনুমতি নেওয়া থাকে। সে সব জায়গায় পার্টির আয়োজন করলে মদ্যপানও করা যাবে।
রবিবারে লেক এলাকার ওই পার্টির যিনি আয়োজক, সেই ব্যক্তিকেও খোঁজা হচ্ছে বলে আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই ব্যক্তির মোবাইল বন্ধ করা রয়েছে। পুলিশ জেনেছে, আয়োজক নিজে ওই পার্টিতে হাজির ছিলেন না। জানা গিয়েছে, প্রচুর টাকার মুনাফার জন্য এই ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া পার্টিতে আয়োজকেরা নিজেকে অন্তরালে রাখতেই পছন্দ করেন। আবগারি দফতর সূত্রে খবর, এই পার্টিতে অংশ নেওয়ার খরচ ছিল জন প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা। দম্পতির পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকায় জন প্রতি চার পেগ করে মদ ধার্য ছিল। সঙ্গে ডিনার।
সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, ওই পার্টি থেকে প্রচুর বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, এই সব বিদেশি মদ ডিউটি ফ্রি থেকে জোগাড় করা। তাদের মধ্যে কিছু বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে বিমানবন্দর থেকে কেনা। তা ছাড়া, ডিউটি ফ্রি দোকানে বিদেশি মদ কেনাবেচার চক্রও সক্রিয় রয়েছে শহরে। তারাও অনেক কম টাকায় এই সব মদ সরবরাহ করে। এই ঘটনায় পুলিশ তেমন চক্রের পাণ্ডাদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy