Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিমা আনার পথে নৌকা থেকে পড়ে মৃত্যু

প্রতি বছরই নৌকা চেপে কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আসে বালি ব্যারাকপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবে। দেবীপক্ষের শুরুতে বৃহস্পতিবারও তেমনটাই হয়েছিল।

 দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার কিছু ক্ষণ আগে নৌকায় বসে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার কিছু ক্ষণ আগে নৌকায় বসে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

মাত্র পাঁচ মিনিটের ঘটনা। আর তাতেই বোধনের আগে বিসর্জনের বিষণ্ণতা বালির রাসবাড়ি এলাকার পুজো মণ্ডপে!

প্রতি বছরই নৌকা চেপে কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আসে বালি ব্যারাকপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবে। দেবীপক্ষের শুরুতে বৃহস্পতিবারও তেমনটাই হয়েছিল। কিন্তু নৌকা থেকে প্রতিমা নামানোর সময়েই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। পা ফস্কে দুই নৌকার মাঝে পড়ে গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন পুজো কমিটির সহ-সভাপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় (৬৫)। কয়েক মিনিটের মধ্যেই উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ক্লাবের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হইচই করতে করতে কুমোরটুলির দিকে রওনা দিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী অশোকবাবু। কুমোরটুলিতে গিয়েও হাসিঠাট্টায় মেতে ছিলেন। দুপুর একটা নাগাদ তিনটি নৌকায় প্রতিমা তুলে তাঁরা রওনা দেন বালির রাসবাড়ির কাকেশ্বরতলা ঘাটের দিকে।

এ দিন বিকেলে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্লাবের সদস্য মানবেন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘‘নৌকায় উঠেও পুরনো দিনের কত গল্প করছিলেন। দুর্গা প্রতিমার
সামনে বসে ছবি তুললেন। আর বাড়ির সামনে এসেই সব শেষ।’’ তিনি জানান, গঙ্গায় তখন জোয়ার। দুপুর আড়াইটে নাগাদ কাকেশ্বরতলা ঘাটে এসে ভিড়েছিল নৌকাগুলি। একটি নৌকা সিঁড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে তা থেকে নামানো হচ্ছিল লক্ষ্মী ও সরস্বতী। বাকি দু’টি নৌকা বাঁধা ছিল ঘাটের পাশে চাতালের রেলিংয়ে। অশোকবাবু ও তাঁর ভাই অনুপবাবু বসে ছিলেন দুর্গা প্রতিমার নৌকায়। অনেকে নেমে যাওয়ার পরে অশোকবাবুও নৌকা থেকে নামার জন্য উঠে দাঁড়ান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দু’টি নৌকা পাশাপাশি রাখা থাকলেও সামনের দিকে কিছুটা ফাঁক ছিল। সেখান দিয়েই বসে নামার চেষ্টা করছিলেন অশোকবাবু। আর তখনই পা ফস্কে দু’টি নৌকার ফাঁক দিয়ে জলে পড়ে যান তিনি। দাদাকে জলে পড়তে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপ দেন অনুপবাবু ও অন্যেরা। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই পাওয়া যায় অশোকবাবুকে। তাঁকে তুলে এনে শ্রমজীবী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। অনুপবাবু বলেন, ‘‘নৌকায় রোদ লাগছিল বলে দাদা আমার মাথায় ছাতা ধরল। একসঙ্গে কোল্ড ড্রিঙ্ক খেলাম। তখন কি জানতাম, দাদা আর বাড়ি ফিরবে না।’’

রাসবাড়ি এলাকায় জি টি রোডের উপরেই অশোকবাবুর বাড়ি। এ দিন তাঁর মৃত্যুর খবরে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর এক মেয়ে ও এক ছেলে। কয়েক বছর আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে অয়ন দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মরত। এলাকায় উদ্যোগী মানুষ বলে পরিচিত ছিলেন অশোকবাবু। ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে চলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর চৈতালি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘গত কাল আমার সঙ্গে দেখা হতেই বললেন, ফুটপাথের ধারগুলি উঁচু হয়ে যাচ্ছে। জল দাঁড়িয়ে যাবে। যেন একটু ঠিক করে দিই। আজ হঠাৎ জানলাম, তিনি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE