Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আইরিশ তরুণীকে ধর্ষণে সাত বছর কারাদণ্ড

পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ৩০মে ভোরে কালীঘাটে সুজয়ের বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। ১ জুন গ্রেফতার করা হয় তাকে। এর কিছু দিন পরে দেশে ফিরে যান ওই তরুণী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

আয়ারল্যান্ডের এক তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে কালীঘাটের বাসিন্দা সুজয় মিত্রকে সাত বছর কারাবাসের নির্দেশ দিল আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালত। শনিবার বিচারপতি সঞ্জীব দারুকা এর পাশাপাশি ওই তরুণীকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেও বলেছেন।

পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ৩০মে ভোরে কালীঘাটে সুজয়ের বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। ১ জুন গ্রেফতার করা হয় তাকে। এর কিছু দিন পরে দেশে ফিরে যান ওই তরুণী।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিশেষ ধরনের স্টুডিও তৈরি হয় আয়ারল্যান্ডে। স্টুডিওয় ভারতীয় দূতাবাসের দুই অফিসার এবং আয়ারল্যান্ডের অফিসারদের উপস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দেন ওই তরুণী। বিদেশ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোনও ফৌজদারি মামলার এই ধরনের বিচার এ রাজ্যে নজিরবিহীন বলেই জানিয়েছেন পুলিশ অফিসারেরা।

এ দিন দুপুর সওয়া দুটোয় শাস্তি ঘোষণা করেন বিচারক। তার আগে তিনি সুজয়ের কাছে জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কি না। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক বলেন, ‘‘আমি পাঁচ বছর ধরে জেল খাটছি। আমি অসুস্থ। আমার বৃদ্ধ বাবা-মাও সুস্থ নন। পরিবারের কথা বিবেচনা করে যদি শাস্তির মেয়াদ কম করেন।’’ এর পরে বিচারক সরকারি কৌঁসুলি সর্বাণী রায়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার কী বলার আছে?’’ সরকারি কৌঁসুলি জানান, এই ঘটনার সঙ্গে দেশের মানসম্মান জড়িত। শাস্তি ঘোষণার সময়ে বিচারক বলেন, ‘‘দোষী ব্যক্তি এর আগে কোনও অপরাধ করেননি। এই ঘটনাও হঠকারীতাবশত। তাই এই অপরাধের জন্য কমপক্ষে যত বছর সাজা হওয়ার কথা, তা-ই দেওয়া হল।’’

সুজয়ের আইনজীবী অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় ও দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য আদালতে আবেদন করেছিলেন, তাঁদের মক্কেলকে জেলে সাধারণ কক্ষে রাখতে। বিচারক জানিয়ে দেন, ওই আবেদন বিবেচনা করার এক্তিয়ার তাঁর নেই। তা জেল কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন।

পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের মে মাসে একটি সেবামূলক সংস্থার তরফে দিল্লিতে এসেছিলেন একুশ বছরের ওই তরুণী। সেখান থেকে দার্জিলিং হয়ে ওই মাসের শেষ দিকে কলকাতা পৌঁছন। ৩০ মে ওই তরুণীর জন্মদিন। সেই উপলক্ষে বন্ধুদের জন্য পার্ক স্ট্রিটের একটি নাইট ক্লাবে পার্টির আয়োজন করেন তিনি। পার্টির আগে এক বন্ধুর সঙ্গে কেনাকাটা করতে তিনি নিউ মার্কেট এলাকায় যান। সেখানেই ওই বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় সুজয়ের সঙ্গে। তিনি সুজয়কেও ওই পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান। ভোর তিনটে নাগাদ নাইট ক্লাবে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে সুজয় তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। তরুণী সুজয়ের বাড়িতে গেলে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ চার্জশিটে জানায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ৩১ মে তরুণী সুজয়ের বাড়ি থেকে যান মধ্য কলকাতার এক হোটেলে। হোটেলে ফেরার পরে ওই তরুণী তাঁর এক পরিচিতের মাধ্যমে কথা বলেন কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তার সঙ্গে। ওই কর্তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি থানায় অভিযোগ জানান। দেশে ফিরে গিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, কলকাতা এসে তিনি সাক্ষ্য দিতে পারবেন না। মামলার স্বার্থে আমলাতান্ত্রিক নিয়ম মেনে পুলিশ যোগাযোগ করে আয়ারল্যান্ডের দিল্লির দূতাবাসে৷ পুলিশ জানায়, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দু’বার গোপন জবানবন্দি দেন ওই তরুণী। তাঁর ‘মেডিক্যাল টেস্ট’-ও দু’বার হয়। পুলিশ এই মামলায় ২৮ জনকে সাক্ষী করেছিল। তার মধ্যে ২২ জন সাক্ষ্য দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jail rape Irish girl rape case Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE