Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিকাশি রক্ষায় মন্ত্রী না মেয়র, পরীক্ষা শোভনের

মেয়র নিজেই পরিবেশমন্ত্রী। আর তাঁর শহরে প্লাস্টিক বর্জ্যে নিকাশি বেহাল। বিষয়টি কবুল করছেন খোদ বিভাগীয় মেয়র পারিষদই।কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ মনে করেন, বৃষ্টিতে শহরে ‘ভিলেন’ প্লাস্টিকই। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন লাইনের মুখে প্লাস্টিক বর্জ্য জমে থাকার ফলে বেহাল হয় কলকাতার ৭৫ শতাংশ নিকাশি-ব্যবস্থা।

দেওয়া হবে এই ব্যাগই।

দেওয়া হবে এই ব্যাগই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

মেয়র নিজেই পরিবেশমন্ত্রী। আর তাঁর শহরে প্লাস্টিক বর্জ্যে নিকাশি বেহাল। বিষয়টি কবুল করছেন খোদ বিভাগীয় মেয়র পারিষদই।

কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ মনে করেন, বৃষ্টিতে শহরে ‘ভিলেন’ প্লাস্টিকই। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন লাইনের মুখে প্লাস্টিক বর্জ্য জমে থাকার ফলে বেহাল হয় কলকাতার ৭৫ শতাংশ নিকাশি-ব্যবস্থা।

পুরসভা সূত্রের খবর, ১০-১২ বছর বা তারও আগে বৃষ্টিতে জমা জলে ডুবে থাকত কলকাতার বহু এলাকা। সে ছবি বদলেছে বটে, তবুও ঘণ্টাখানেকের প্রবল বৃষ্টিতে শহরের কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে ওঠা এখনও ভোগান্তিতে ফেলে শহরবাসীকে। এ প্রসঙ্গেই তারকবাবুর বক্তব্য, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক আটকে দিচ্ছে নিকাশির প্রবাহ। সে জন্যই কলকাতার জলছবি একেবারে নির্মূল করা যাচ্ছে না। তা করতে হলে শহরে প্লাস্টিক ব্যবহারে আরও কঠোর হতে হবে।

এ ব্যাপারে কতটা আগ্রহী পুর-প্রশাসন? প্লাস্টিক বর্জনে ২০০০ সালেও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। তৎকালীন মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) মালা রায় পুরকর্মীদের নিয়ে একাধিক অভিযানও করেছিলেন। তবে লাভ হয়নি তেমন। ফের চেষ্টা হয় ২০১০ সালে, তৃণমূলের দ্বিতীয় দফায়। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আমলে মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) সঞ্চিতা মণ্ডল টাউন হলে শিল্পী-অভিনেতাদের দিয়ে প্লাস্টিক বর্জনে প্রচারও শুরু করেন। টাকা খরচ করে তাঁদের নিয়ে ভিডিও ক্যাসেটও বানানো হয়। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এর পরে সেই উদ্যোগও থেমে যায়। পুরসভার অন্দরমহলের ব্যাখ্যা, পরিবেশ দফতরের সঙ্গে পুরসভার সমন্বয় না থাকলে এই কাজ করা শক্ত। সে কারণেই বারবার শহর থেকে প্লাস্টিক বর্জনের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে।

এ বার রাজ্যের পরিবেশ দফতরও মেয়রের হাতেই। অনেকেই বলছেন, কলকাতা মেয়র তথা রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভনবাবু এ ব্যাপারে কতটা উদ্যোগী, তা যাচাই করার সময় এসেছে। মন্ত্রিত্বে শপথ নেওয়ার পরে প্রথম পরিবেশ দিবসে মেয়রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, শহর থেকে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক তুলে দিতে তিনি কী ব্যবস্থা নেবেন? শোভনবাবুর জবাব ছিল, ‘‘ধীরে ধীরে সবই হবে। দেখতে থাকুন।’’ কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও পেরিয়ে গিয়েছে দু’মাস। কিন্তু শহর থেকে প্লাস্টিক বর্জনে এখনও পুরসভা ও পরিবেশ দফতরের কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নজরে পড়েনি।

তবে শহরের নিকাশির হাল ফেরাতে প্লাস্টিক বর্জন করা যে খুব জরুরি, তা বিলক্ষণ জানেন মেয়রের সতীর্থ তারকবাবু। প্লাস্টিক নিয়ে কপালে ভাঁজ জঞ্জাল অপসারণ দফতরেরও। নিউ মার্কেটের রাস্তার ধারে গোটা কয়েক গালিপিটে (রাস্তার পাশে জল বেরনোর ঝাঁঝি) জমে থাকা প্লাস্টিক দেখিয়ে ওই দফতরের এক আধিকারিকের প্রশ্ন— এখান থেকে জল বেরোবে কী করে? শুধু নিউ মার্কেটই নয়, শহর জুড়ে কয়েক লক্ষ গালিপিট রয়েছে। যার অধিকাংশই বুজে থাকে প্লাস্টিকের প্যাকেটে। নিকাশি দফতরের এক আফিসারের কথায়, শুধু গালিপিট নয়, রাস্তার পাশে খোলা নর্দমা থেকে শুরু করে পাম্পিং স্টেশনের মুখ— সর্বত্রই হাজার হাজার প্লাস্টিক জমে থাকে। যার জেরে প্রতি বছরই বিকল হয়ে যায় একাধিক পাম্প। বর্ষা বা বৃষ্টির সময় যা ভোগায় পুরো নিকাশি ব্যবস্থাকে।

এই হাল ঘোচাতে অর্থাৎ শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে মেয়র তথা পরিবেশমন্ত্রীকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছেন একাধিক মেয়র পারিষদও। কারণ পুরসভার যা আর্থিক ক্ষমতা, তাতে একা তাদের পক্ষে সেই কাজ করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন পুর-আমলারা। ওই সূত্রের খবর, এ বার পরিবেশের জন্য বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগণ্য। শুধু প্লাস্টিক বর্জন নয়, এর সঙ্গেই রয়েছে পুকুর সংস্কারও।

যদিও স্বল্প আর্থিক ক্ষমতা নিয়েই প্লাস্টিক রোধে কাজ করতে চায় পুরসভা। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুরসভার বাজারগুলিতে প্লাস্টিক বর্জনে সচেতনতা-বৈঠক করা হয়েছে বলে জানান মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার। ব্যবসায়ীদের কাছে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধের অনুরোধ জানানো হবে। ৩০ অগস্ট, মঙ্গলবার থেকে উত্তর কলকাতার মুচিবাজারে প্লাস্টিক বর্জনের অভিযান শুরু করবেন পুরকর্মীরা। স্বপনবাবু জানান, পুরসভা কাগজের ব্যাগ তৈরি করেছে। বাজার করতে আসা মানুষকে প্লাস্টিকের প্যাকেটের বদলে কাগজের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হবে। প্রথমে আবেদন-নিবেদন, পরে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পথেও এগোতে চায় পুর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suvendu adhikari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE