Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

সংক্রমণের নাম শংসাপত্রে লেখা ‘নিষেধ’

রবিবার সকালে যাদবপুরের কেপিসি হাসপাতালে মারা যান শুভজিৎ মজুমদার (৩৬)। পরিবার জানায়, ২৭ অক্টোবর জ্বর হয় সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত শুভজিতের। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ২৮ তারিখ রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্টে দেখা যায়, প্লেটলেট নেমেছে ৮০ হাজারে।

(বাঁ দিকে)শুভজিৎ মজুমদার। ডেথ সার্টিফিকেটে এনএস-১ পজিটিভ থাকলেও উল্লেখ নেই ডেঙ্গির(ডান দিকে।

(বাঁ দিকে)শুভজিৎ মজুমদার। ডেথ সার্টিফিকেটে এনএস-১ পজিটিভ থাকলেও উল্লেখ নেই ডেঙ্গির(ডান দিকে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪৬
Share: Save:

সন্তানের মৃত্যু সংবাদ দিলেন চিকিৎসক। কিন্তু, শোক করার সময় দিল না হাসপাতাল। অভিযোগ, সদ্য পুত্রহারা পিতাকে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা নিয়ে লড়াই চালাতে হল। হাসপাতালের কর্মীরা জানালেন, যে সংক্রমণে ওই যুবক মারা গিয়েছেন, সেটা লেখা ‘নিষেধ’। শেষমেশ মৃতের পরিবার আদালতে যাওয়ার কথা বললে হাসপাতাল ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এনএস-১ পজিটিভ লেখে।

রবিবার সকালে যাদবপুরের কেপিসি হাসপাতালে মারা যান শুভজিৎ মজুমদার (৩৬)। পরিবার জানায়, ২৭ অক্টোবর জ্বর হয় সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত শুভজিতের। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ২৮ তারিখ রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্টে দেখা যায়, প্লেটলেট নেমেছে ৮০ হাজারে। পুণেতে থাকা চিকিৎসক-দিদি খবর পেয়ে চলে আসেন কলকাতায়। ফি-দিন প্লেটলেটে নজরদারি রাখলেও ৩০ অক্টোবর জ্বরের সঙ্গে দেখা দেয় বমির উপসর্গ। ৩১ অক্টোবর শুভজিৎকে ভর্তি করা হয় কেপিসি হাসপাতালে। প্লেটলেট ও ফ্লুইড দেওয়া শুরু হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, প্লেটলেট আর না কমলেও ওই যুবকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। শেষে রবিবার সকালে মারা যান তিনি।

সমস্যা শুরু হয় এর পরেই। শুভজিতের বাবা সুকুমার মজুমদারের দাবি, ডেথ সার্টিফিকেটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হওয়া লিখেছিলেন। সেখানে ডেঙ্গির উল্লেখ ছিল না। হাওড়া জেলা আদালতের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক সুকুমারবাবুর কথায়, ‘‘কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করি, ছেলে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে সুস্থও হয়ে ওঠেনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হয়েছে। তা হলে মৃত্যুর কারণের কলমে ডেঙ্গি শব্দটা লেখা নেই কেন?’’ সদুত্তর দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, হাসপাতালের এক কর্মী জানান, ডেঙ্গি লেখার দরকার নেই তেমনই নির্দেশ রয়েছে। শেষে শুভজিতের পরিজনেরা জানান, ডেথ সার্টিফিকেটে সঠিক কারণ না লিখলে তাঁরা আদালতে যাবেন। এর পরেই বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পান তাঁরা। সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘ছেলে মারা যাওয়ার পরে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট লেখা নিয়েও ল়ড়াই চালাতে হল। এমন যেন কোনও বাবাকে না করতে হয়।’’ এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে চিকিৎসক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে বিদ্যাসাগর কলোনিতে শুভজিতের বাড়ি। অভিযোগ, প্রভাবশালী মন্ত্রীর প্রতিবেশী হয়েও পুর পরিষেবা মেলে না ৯৯ এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।

কিন্তু পুরসভা তো প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের রাস্তায় নেমে ডেঙ্গি মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছে?

নরক: বাড়ির পিছনে জঞ্জাল জমে এমনই অবস্থা হয়ে রয়েছে । রবিবার বিদ্যাসাগর কলোনিতে।

ওই দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের ভূমিকা প্রসঙ্গে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ব্লিচিং ছড়ানো বা মশা নিধনের জন্য ধোঁয়া দিতে দেখিনি পুরকর্মীদের। কাউন্সিলরেরা রাস্তায় নামবেন, সে সম্পর্কে শুধু কাগজে পড়েছি। এলাকায় কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি।’’ অভিযোগ, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পরিদর্শন তো দূর অস্ত‌্‌। রাস্তার পাশে খোলা নর্দমা কিংবা জলাশয়ের পাশে ব্লিচিং , মশা মারার তেল দেওয়ার কাজও চোখে পড়ে না বলেই জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, প্রতি তিনটি বাড়ি অন্তর এক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। শুভজিতদের বাড়ির পিছনেই একটি জলাশয় আছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে এখন আবর্জনার স্তূপ। পুরসভাকে বিষয়টি বারবার জানালেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি জ্বর এবং ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরসভাকে জানিয়েও এলাকায়
কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যদিও এ ব্যাপারে ৯৯ এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েই দায় এড়িয়েছেন।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE