—প্রতীকী চিত্র।
গত মার্চ মাসে পাটুলির বাসিন্দা সুনীল পাণ্ডে (৪২) বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ইএম বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি-সহ বিভিন্ন চিকিৎসার পরে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। সুনীলবাবুর পরিবারের তরফে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক এবং তাঁর দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্ত শুরু করে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।
গত এপ্রিল মাসে গরফার বাসিন্দা রাহুল সরকার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর বাবাকে হৃদ্রোগের চিকিৎসার জন্য বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে তাঁর বাবা রবি সরকারের মৃত্যু হয়েছে।
উপরের দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই অভিযোগ দায়ের করার পরে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় অর্ধেক বছর। কিন্তু অভিযোগ, প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলেও এখনও পুলিশ ওই দুই ঘটনার তদন্ত পুরো শেষ করে উঠতে পারেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি বছরে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা চিকিৎসায় গাফিলতি সংক্রান্ত অধিকাংশ মামলারই এক অবস্থা। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি পাঠানো হয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে। কিন্তু পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, তাদের কাছ থেকে চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসায় কোনও তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।
লালবাজার জানাচ্ছে, শুধু বাইপাসের ধারের থানাগুলিতেই চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর মামলার সংখ্যা প্রায় এক ডজন। সেই সব মামলায় অভিযুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু আদৌ চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছিল কি না, মেডিক্যাল কাউন্সিলের থেকে সেই রিপোর্ট না আসায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও হাসপাতাল অথবা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের হলে তার তদন্তে দু’টি ভাগ থাকে। প্রথম ভাগে পুলিশ সব নথি বাজেয়াপ্ত করে ও চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সব কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেই নথি এবং চিকিৎসকের বয়ান পাঠানো হয় মেডিক্যাল কাউন্সিলে। গাফিলতি হয়েছে কি না, কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞেরা তা দেখে পুলিশকে জানান। মূলত তাঁদের রিপোর্টের উপরেই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে।
কেন দেরি হচ্ছে রিপোর্ট আসতে?
মেডিক্যাল কাউন্সিল সূত্রের খবর, চিকিৎসায় গাফিলতি সংক্রান্ত অভিযোগ এলে প্রথমে পেনাল কমিটির সদস্যেরা একসঙ্গে বসে সব নথি খতিয়ে দেখেন। তা পাঠানো হয় কাউন্সিলের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে। বিশেষজ্ঞরা এর পরে অভিযুক্ত চিকিৎসক এবং রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। সব শেষে উভয় পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে বক্তব্য শোনা হয়। কাউন্সিল সূত্রের খবর, সব অভিযোগ নিয়ে কয়েক দফায় বিচার করেন তাঁরা। সে জন্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে। এক তদন্তকারী অফিসার অবশ্য জানান, রিপোর্ট পেতে তাঁরা নিয়মিত মেডিক্যাল কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন।
পাটুলির বাসিন্দা সুনীল পাণ্ডের পরিবারের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে হলে তাঁরা জানান, পুলিশের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল কাউন্সিলের রিপোর্ট না আসায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে নির্মল মাজি বলেন, ‘‘কোনও ভুল বিচার যাতে না হয়, সে জন্য আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলি। সব কিছু একাধিক বার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy