রবি দাস ও অঞ্জলি দাস
বছর সতেরোর ছিপছিপে কিশোরীর মুখে সব সময়ে এক চিলতে হাসি। সদ্য মাধ্যমিক পাশ করা অঞ্জলি দাসের তপসিয়া-তিলজলা এলাকায় ‘ঝাঁসির রানি’ নামে পরিচিত।
২০১৪-’১৫ সাল থেকে অঞ্চলি এলাকায় একাধিক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা থেকে শুরু করে শ্রমিক হিসাবে কাজ করা শিশুদের উদ্ধার করে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। অঞ্জলিই কিন্তু নিজেই এক সময়ে শিশু শ্রমিক ছিল।
অভাবের সংসারে দুই মেয়েকে নিয়ে হিমশিম খেতেন ট্যাক্সিচালক বাবা। তাই বড় মেয়েকে জুতো কারখানায় কাজ করতে পাঠাতে বাধ্য হন। কিন্তু অঞ্জলি কলকাতা চাইল্ড লাইনের নজরে পড়ে যায়। তাকে কাজে না পাঠিয়ে স্কুলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতে শুরু করে চাইল্ড লাইন। বার বার বোঝানোর পরে অঞ্জলির বাবা-মা তাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে তিলজলার বাণীতীর্থ স্কুলে ভর্তি করান। সেখানেই এখন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সে।
আরও পড়ুন:পাঁচ শিশুকে বিক্রি করেন দাস দম্পতি
শুধু নিজে পড়াশোনা করা নয়, সরকারি প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা ‘চিলড্রেন্স গ্রুপ’-র নেত্রীও অঞ্জলি। বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবসে তার দাবি, ‘‘আমার এলাকায় স্থানীয় শিশু শ্রমিক প্রায় আর নেই বললেই চলে। কিন্তু ‘মাইগ্রেট’ হয়ে আসা শিশু শ্রমিকদের চিহ্নিত করে বাড়ি পাঠানোই আমার কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’’
শুধু অঞ্জলি একা নয়। রয়েছেন রবি দাস। তিনি এক সময়ে জুতো সেলাই করতেন। রবিকেও শিশু শ্রমিক হিসাবে চিহ্নিত করার পরে তাঁকেও স্কুলে পাঠানো হয়। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ পাশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন রবি। এখন তিনি বঙ্গবাসী কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। এর পাশাপাশি নিজের এলাকার ‘চিলড্রেন্স গ্রুপ’-এর হয়ে এলাকার শিশু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও তা নথিভূক্ত করার কাজ করছেন।
কিন্তু অঞ্জলি এবং রবি দু’জনেই চায় নিজের এলাকাকে পুরোপুরি শিশু শ্রমিক মুক্ত করে কলকাতাকে শিশু শ্রমিক মুক্ত শহর হিসেবে তুলে ধরতে। চাইল্ড লাইনের কলকাতা সেক্টরের কোঅর্ডিনেটর দিলীপ বসুর কথায়, ‘‘আমরা শিশু শ্রমিকদের চিহ্নিত করে স্কুলে পাঠাচ্ছি। তারা পড়াশোনাও করছে। কিন্তু সমস্যা হয় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। অর্থের অভাবে একটা পর্যায়ের পরে এদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy