উদ্যম: মশা নিধনে সঙ্গীদের নিয়ে শিবেদা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
পাড়ার মোড়েই চায়ের দোকান শিবেদার। ভালো নাম শিবশঙ্কর পাত্র। পুরো দোকানে নীল-সাদা রং। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের কারণে নয়। শিবেদা আর্জেন্টিনার অন্ধ সমর্থক। আর মেসির ভক্ত। ভক্ত বললেও কম বলা হয়। নিজের চায়ের দোকানের সামান্য আয়, সংসার টানতেই দম বেরোয়। কিন্তু ফি বছর ধুমধাম করে মেসির জন্মদিন পালন করেন। মাঝেমধ্যেই আয়োজন করেন পাড়া ফুটবলের। এ বার সেই ফুটবল টিম নিয়েই শিবেদা মশা মারতে ঢুকে পড়ছেন বাড়ি বাড়ি।
উত্তর ব্যারাকপুরের নবাবগঞ্জের বাসিন্দা শিবশঙ্কর ইন্টারনেট ঘেঁটে মেসির সমাজসেবার খোঁজ পাওয়ার পরেই নিজে তৎপর হয়েছেন ডেঙ্গি দমনে। এই মুহূর্তে রাজ্যে ডেঙ্গি-সমস্যা প্রবল। হাসপাতালে শয্যা নেই, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। শনিবারও খড়দহে মৃত্যু হয়েছে ভাস্কর ঘোষ নামে এক ফুটবলারের। তাঁর স্ত্রীও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা ছড়াতে শিবশঙ্কর পাশে পেয়েছেন আর্জেন্টিনার আরও কয়েক জন সমর্থক ও মেসি-ভক্তকে। সবাই মিলে তৈরি করেছেন ‘মেসি ফ্যান ক্লাব’। ডেঙ্গি দমনে এ বার নেমেছেন তাঁরা। নিজেরাই চাঁদা তুলে মশা মারার তেল কিনে বাড়ি বাড়ি ছড়াচ্ছেন। শিবশঙ্করের দুই ছেলে-মেয়েও স্কুল আর পড়ার ফাঁকে বাবার সঙ্গে হাত লাগিয়েছে।
পুরসভা ঠিক মতো কাজ করছে না বলেই কি এই অভিনব উদ্যোগ? চা ছাঁকতে ছাঁকতে একগাল হাসলেন শিবেদা। বললেন, ‘‘দোকান সামলে বেরিয়ে পড়ছি পাড়া-পড়শিদের বাড়ি। পুরসভার সাফাইকর্মীরা তো সব বাড়িতে ঢুকে কোথায় মশার লার্ভা রয়েছে, তা দেখার সময় পান না। আমি পাই। এই বৃষ্টির পর রোদ উঠতেই মশা বাড়ল হু হু করে। ঘরে ঘরে জ্বর। আমরা ফুটবল ভালোবাসি। কিন্তু এটা সামাজিক দায়।’’
তেল কিনে তা স্প্রে করার ব্যাপারে বিভিন্ন পরিচিতের সূত্র ধরে পতঙ্গবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন শিবশঙ্করেরা। তাঁদের পরামর্শেই চলছে মশা মারার কাজ। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান মলয় ঘোষ বলছেন, ‘‘এ ভাবে যদি কিছু সচেতন মানুষ হাত বাড়িয়ে দেন, তা হলেই আমরা ডেঙ্গির প্রকোপ থেকে পরিবারগুলোকে বাঁচাতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy