হাসপাতালের ফার্মাসিতে পৌঁছে গিয়েছে উত্তেজিত জনতা। রবিবার, দমদম ক্যান্টনমেন্টের পুর হাসপাতালে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দমদম ক্যান্টনমেন্টে পুর হাসপাতাল। ভাঙচুর করা হল গোটা চত্বরে, প্রহৃত হলেন হাসপাতালের কর্মীরা। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে। হাসপাতালে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে ওই রাতেই ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে দমদম থানার পুলিশ। তিনটি মোটরবাইক এবং একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে উত্তর দমদম পুর এলাকার দুর্গানগরের মাঝেরহাটির বাসিন্দা রবিন পালকে (৩০) ওই হাসপাতালে মোটরবাইকে চড়িয়ে নিয়ে যান তাঁর দাদা প্রদীপ দাস। রবিনবাবুর বুকে ব্যথা হচ্ছিল। অভিযোগ, হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দেখার পরে ওষুধ দিয়ে জানান, তেমন কিছু হয়নি। সম্ভবত গ্যাস-অম্বল থেকেই শরীর খারাপ লাগছে। শুধু এক বার ইসিজি করে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এর পরে পরিবারের সদস্যেরা হাসপাতালের বাইরে থেকে রবিনের ইসিজি করান। সেই রিপোর্ট নিয়ে দেখানোর পরেও আমল দিতে চাননি চিকিৎসক। ইতিমধ্যে রবিনের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। ক্রমশ নেতিয়ে পড়তে থাকেন তিনি। তখন আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই যুবকের মৃত্যুর পরেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন রবিনবাবুর পরিবারের সদস্যেরা। কেন চিকিৎসক রবিনের সমস্যা ধরতে পারলেন না এবং কেন গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হল না, সেই প্রশ্ন তুলে হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে শুরু হয় মৃতের পরিজনেদের বচসা। সেই বচসাই বড় আকার নেয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাঝেরহাটির বাসিন্দা রবিন এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে কিছুক্ষণেই তাঁর পাড়া থেকে প্রায় শ’খানক লোক জড়ো হন হাসপাতালে। বাড়তে থাকে গোলমাল। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের দাবি, রাত সাড়ে দশটা-এগারোটা পর্যন্ত বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বদলে গোলমাল আরও বাড়তে থাকে। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ হাসপাতালে এলোপাথাড়ি ঢিল-পাথরও ছোড়া শুরু হয়। অভিযোগ, হাসপাতালের ফার্মাসির দরজাও ভেঙে দেওয়া হয়। কর্মীদের বেধড়ক মারধর করতে থাকেন এক দল যুবক। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। রোগীদের চিকিৎসার কাজ চালাতেও হিমসিম খেতে হয় হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের। কোনও মতে তাঁরা পালিয়ে বাঁচেন বলে অভিযোগ।
এলাকাবাসীদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালে বেলাগাম ভাবে ইটবৃষ্টি ও মারধর শুরু হলে আশপাশেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকাবাসীদের একটি অংশও রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েছিলেন। এর পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী পাল্টা লাঠিচার্জ করতে শুরু করে। হামলকারীদের একাংশ পালিয়ে গেলেও কয়েক জনকে ধরে ফেলে পুলিশ। রাতে দেড়টা নাগাদ পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
কিন্তু রবিবারেও আতঙ্ক কাটেনি ওই পুর হাসপাতালের কর্মীদের। একাংশের মতে, তাঁরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দাবি, রবিনকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখনই তাঁর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। তা জানানোও হয়েছিল পরিজনেদের। সেই অবস্থায় জরুরি বিভাগে তাঁকে দেখভাল করেন এক চিকিৎসক। কিন্তু ভর্তির প্রক্রিয়া চলাকালীন রবিনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট। তাঁর পাল্টা দাবি, চিকিৎসকেরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু গাফিলতির প্রশ্নই ওঠে না। উত্তেজনার বশে যে ভাবে ভাঙচুর এবং মারধর করা হল, সেটা কাম্য নয়। পুলিশ আইন মোতাবেক পদক্ষেপ করছে।’’ তবে অভিযোগ উঠেছে, এই হামলা ঘটেছে উত্তর দমদম পুর এলাকার এক পুর প্রতিনিধির নিকট আত্মীয় নেতৃত্বে। সেই আত্মীয়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy