Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দীপাবলিকে শব্দদূষণে হার মানাল বিসর্জন

শহরের বহু তল্লাটে কালীপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় দেদার শব্দবাজি ফাটার ফলে সেই সব এলাকার শব্দ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। এমনকী, কোনও তল্লাটে দীপাবলির রাতে শব্দমাত্রা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেড়েছে রবিবার রাতে বিসর্জনে।

এ ভাবেই অবাধে ফেটেছে বাজি। বেড়েছে দূষণ। ফাইল চিত্র

এ ভাবেই অবাধে ফেটেছে বাজি। বেড়েছে দূষণ। ফাইল চিত্র

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

শব্দবাজির প্রতিযোগিতায় দীপাবলিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলল বিসর্জনের রাত।

তথ্য-সহ এই সত্য জানাচ্ছে কলকাতার ১০টি জায়গায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বসানো শব্দ মাপার যন্ত্র বা মনিটরিং স্টেশন। শহরের বহু তল্লাটে কালীপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় দেদার শব্দবাজি ফাটার ফলে সেই সব এলাকার শব্দ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। এমনকী, কোনও তল্লাটে দীপাবলির রাতে শব্দমাত্রা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেড়েছে রবিবার রাতে বিসর্জনে।

সেই সময়ে ওই ১০টি এলাকার মধ্যে মাত্র দু’টির শব্দমাত্রা ছিল সেখানকার জন্য নির্ধারিত সীমার মধ্যে। কলকাতার আটটি তল্লাট বিসর্জনের রাতে নির্ধারিত শব্দসীমার মধ্যে থাকতে পারেনি। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘এটা সর্বগ্রাসী সাস্কৃতিক অবক্ষয়। প্রতিটি মানুষ সচেতন না হলে কিছুই হবে না।’’

রবিবার দিনভর কলকাতায় ৫৮৭০টি কালী প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিসর্জন ছিল ওই দিনই। বড় বড় বিসর্জনের মিছিলের অধিকাংশ বেরিয়েছে রাত ৯টার পর থেকে। বহু ক্ষেত্রেই সেই সব শোভাযাত্রার অঙ্গ ছিল শব্দবাজি।

মনিটরিং স্টেশনের রেকর্ড বলছে, পাটুলিতে রবিবার শেষ ১২ ঘণ্টায় অর্থাৎ, রাত ১০টার পর থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত শব্দের গড় মাত্রা ছিল ৭২.৫ ডেসিবেল। অথচ দীপাবলিতে এটাই ছিল ৬১ ডেসিবেল। ওই তল্লাটের কয়েক জন বাসিন্দা জানাচ্ছেন, দীপাবলির স্বস্তি খান খান করে দিয়েছে রবিবার রাতে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। পাটুলি মোড়ে বাইপাস লাগোয়া একটি ঝিল বিসর্জনের পুকুর হিসেবে সংরক্ষিত। ওখানে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে এক-একটি শোভাযাত্রা পৌঁছেছে আর এলাকা কেঁপেছে বাজির শব্দে। পাটুলির ওই পুকুরে ৪৬টি প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে।

রবিবার, ছুটির রাতে নিউ মার্কেট এলাকার গড় শব্দমাত্রা ছিল ৭৫ ডেসিবেল। এটাই ৭১ ডেসিবেল ছিল দীপাবলিতে। সে দিন কিন্তু ওই তল্লাটে জন সমাগম, গাড়ি চলাচল ছিল রবিবারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে রবিবার এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে গিয়েছে একের পর এক বিসর্জনের মিছিল। রাত ৮টার পরে বড় বড় শোভাযাত্রা, সবই শব্দবাজি ফাটিয়ে। ওই তল্লাটের শব্দ মাপার যন্ত্র বসানো কলকাতা পুরসভা লাগোয়া জায়গায়।

একই ভাবে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও লাগোয়া তল্লাটের গড় শব্দমাত্রা বেড়েছে দীপাবলির বেশি রাতের চেয়ে। দীপাবলিতে ৬১ ডেসিবেল আর রবিবার রাতে ৬১.৮ ডেসিবেল। অথচ ওই ‘সাইলেন্স জোন’-এর শব্দমাত্রার সীমা রাত ১০টার পরে ৪০ ডেসিবেল।

যে সব জায়গা দিয়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রা গিয়েছে, সেখানে বা তার কাছাকাছি বসানো যন্ত্রের তথ্যে উঠে এসেছে শব্দবাজি ফাটানোর বিষয়টি।

তবে রানিকুঠির কাছে রানিদিঘি নামে পুকুরে প্রায় ১০০টি প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলিরই শোভাযাত্রা গিয়েছিল এনএসসি বসু রোড ধরে। ডিজে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দেদার ফেটেছে শব্দবাজি। এলাকার মানুষের বক্তব্য, দীপাবলির চেয়ে তা অনেক গুণ বেশি। অথচ যন্ত্রে ধরা দীপাবলির বেশি রাত আর রবিবার বেশি রাতের গড় শব্দমাত্রা এক। ৬৪ ডেসিবেল। পর্ষদ জানাচ্ছে, টালিগঞ্জে তাদের যন্ত্র দেশপ্রাণ শাসমল রোডে বসানো। সেটা এনএসসি বসু রোডের শব্দ ততটা ধরতে পারেনি।

যারা শব্দবাজি ফাটিয়ে আইন ভেঙেছে, পুলিশও তেমন বেশি সংখ্যায় তাদের ধরতে পারেনি। লালবাজার সূত্রের খবর, রবিবার শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে ধৃতের সংখ্যা মাত্র ১৫। তা-ও তিনটি ডিভিশন থেকে। বাকি পাঁচটি ডিভিশন থেকে এক জনও ধরা পড়েনি।

পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক, বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, যা অবস্থা তাতে শুধু কালীপুজো ও তার পরের সন্ধ্যা থেকে সারা রাত যথেষ্ট নয়, বিসর্জন পর্যন্ত পুলিশ ও পর্ষদের নজরদারি জরুরি হয়ে উঠেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে বিসর্জনের মিছিল থেকে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করবে না, সেটা হতেই পারে। কিন্তু যে পুজোর বিসর্জনের মিছিলে শব্দবাজি ফেটেছে, তার সভাপতি, সচিবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অসুবিধে কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firecrackers Sound Pollution Immersion Ma Kali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE