জুম্মানের দাদু। নিজস্ব চিত্র
শহরের বুকে ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য!
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবককে তাক করে খুব কাছ থেকে গুলি চালালেন অন্য দুই যুবক। কিন্তু গায়ে না লেগে বেরিয়ে গেল সেই গুলি। পরক্ষণেই ফের ছুটে এল দ্বিতীয় গুলি। এ বারও গায়ে লাগল না! ফের গুলি ছুড়লেন যুবকের দল। সেই গুলি গিয়ে লাগল অন্য যুবকের উরুতে। তিনি লুটিয়ে পড়তেই মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দিলেন অভিযুক্ত যুবকেরা। কাছ থেকে এমন দৃশ্য দেখে প্রথমে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন ওই আহত যুবকের বন্ধুরা। সম্বিৎ ফিরে পেতেই যুবককে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, আহত ওই যুবক মহম্মদ জুম্মান এনআরএসে ভর্তি। অস্ত্রোপচার করে তাঁর পা থেকে গুলি বার করা হয়েছে। জুম্মানের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, আয়ুব ও বাবলু নামে এন্টালির দুই যুবক এলাকায় মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা করেন। জুম্মান তার প্রতিবাদ করাতেই হামলা চালিয়েছেন দু’জন।
প্রশ্ন উঠেছে শহরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের নজরদারি নিয়েও। এ কোন শহর, যেখানে খোলা আকাশের নীচে নির্দ্বিধায় গুলি চালিয়ে পালিয়ে যেতে পারেন যুবকেরা! কত বেআইনি অস্ত্র মজুত করে রেখেছে এই যুবকের দল? পুলিশের কাছে কি আদৌ হিসেব আছে তার? ট্যাংরার ঘটনায় পুলিশ শুধু জানিয়েছে, রাত পর্যন্ত অভিযুক্তদের ধরা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বাবলুদের এই কারবারের কথা ট্যাংরা থানাকে বারবার জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাতেই বাবলুদের সাহস বেড়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ সূত্রের দাবি, জুম্মানের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসা-সহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। দিন কয়েক আগেই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পিছনে দুষ্কৃতীদের এলাকা দখলের রেষারেষি জড়িত বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু সেই রেষারেষিও কেন রোখা গেল না, সে প্রশ্নের সদুত্তর পুলিশের কাছে মেলেনি।
জুম্মানের দাদু মহম্মদ ইশাক খান বৃহস্পতিবার জানান, জুম্মান ওই এলাকায় ভ্যান চালান। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সুভাষগ্রামে থাকেন তিনি। মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসিয়ে তাঁকে জেলে পাঠায় পুলিশ। বুধবার বন্ধুদের সঙ্গে টালিগঞ্জে একটি ধর্মীয় উৎসবে গিয়েছিলেন জুম্মান। সেখান থেকে ফিরে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনই এসে গুলি চালান অভিযুক্ত যুবকের দল। জুম্মানের বন্ধুরাই ইশাককে খবর দেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জুম্মানকে গুলি করার ছক আগে থেকেই ছিল। টালিগঞ্জ থেকেই তাঁর পিছু নেন আয়ুবেরা। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার মোড়ে জটলা। রাস্তার এক পাশে রক্তের দাগ। জুম্মানের বন্ধুরা জানিয়েছেন, বাবলুরা ওই এলাকায় মাদক বিক্রি করতেন। প্রতিবাদ করায় একাধিক বার বন্দুক দেখিয়ে হুমকিও দিয়েছেন। জেল থেকে বেরোনোর পরে জুম্মানের সঙ্গেও বাবলুদের বচসা হয়েছিল। ‘‘বচসার জেরে যে এ ভাবে গুলি চালাবে, তা আমরা ভাবতে পারিনি। পুলিশ যদি এর পরেও কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে আমরাই যা করার করব,’’ হুঁশিয়ারি ওই এলাকার এক যুবকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy