আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চত্বরে জমা জঞ্জাল
হাসপাতাল চত্বরেই চলছে মশার কারখানা!
ডেঙ্গির প্রকোপ রুখতে সচেতনতার যাবতীয় প্রচার যেন রয়ে গিয়েছে স্রেফ কথাতেই। খাস সরকারি হাসপাতাল চত্বরেই জমে আছে জল। বংশবিস্তার করছে মশা। বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল এমনই নানা চিত্র।
কোথাও ট্যাঙ্কের জল উপচে পড়ে জমা হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যাগে। মশার উৎপাতে রক্ত পরীক্ষার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাও দায়। কামড় খাচ্ছেন রোগী থেকে নিরাপত্তাকর্মী— সকলেই। কোথাও আবার নৈশাবাসের পাশেই নির্মীয়মাণ অংশে জমা জল দেখে ডেঙ্গির ভয়ে হাসপাতালের প্রতীক্ষালয়ে রাত কাটাচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা। এক জায়গায় আবার অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মীরাই ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ কিংবা ওষুধের প্লাস্টিক উপর থেকে ছুড়ে ফেলছেন নীচে। বৃষ্টির পরে সেই আবর্জনাতেই জল জমছে। ঝকঝকে নীল-সাদা ভবনের পাশে তৈরি হচ্ছে আবর্জনার স্তূপ।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ চলছে। তাই হাসপাতাল চত্বরেই পড়ে রয়েছে ওই কাজে ব্যবহৃত ড্রাম, থার্মোকল প্রভৃতি। মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির পরে সেগুলির ভিতরে জল জমেছে। পরিচ্ছন্নতার অভাব রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগেও। ওই ভবনের পিছন দিকে নিকাশির বেহাল দশা। নর্দমার পথ আটকে পড়ে রয়েছে বাঁশের স্তূপ। পড়ে আছে পরিত্যক্ত কমোড, যাতে জমছে জল। মুর্শিদাবাদ থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা এক রোগীর আত্মীয়ের কথায়, ‘‘হাসপাতাল চত্বর যা নোংরা, এখানে থাকতেই তো ভয় করছে। রোগী
এক রোগ নিয়ে ভর্তি হয়ে আবার
অন্য রোগ না বাধিয়ে বসে।’’ হাসপাতালের সেন্ট্রাল প্যাথোলজি সেন্টার থেকে কয়েক হাত দূরেই জলের ট্যাঙ্ক ফুটো হয়ে নীচে পড়ে থাকা আবর্জনায় জল জমছে। এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘ডিউটি করতে আসতেই ভয় পাই। মশার খুব দাপট। ঠিকমতো সাফাই হয় না।’’
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবার রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, সেখানকার কর্মীদের একাংশই নোংরা জমিয়ে রাখছেন। এ দিন সেখানে দেখা যায়, যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ওষুধের প্যাকেট। হাসপাতালের ভিতরে জমেছে আবর্জনার স্তূপ। টানা বৃষ্টির পরে ওই আবর্জনায় জল জমেছে। জল জমেছে কয়েকটি
ভবনের ছাদেও।
টানা বৃষ্টিতে নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। প্লাস্টিকের ব্যাগ, থার্মোকলের টুকরো জমে আউটডোরের পাশের নর্দমার মুখ বুজে গিয়েছে। হাসপাতালের পিছনের অংশ কার্যত আবর্জনা ফেলারই জায়গা হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির পরে জল জমেছে সেখানেও। রোগ সারাতে গিয়ে মশার কামড়ে নাজেহাল সবাই।
নির্মাণকাজের জেরে মশার অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। রোগীর পরিজনদের জন্য তৈরি নৈশাবাসের পাশেই চলছে নির্মাণকাজ। সেখানে বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। অনেকেই অন্যত্র চলে গিয়েছে। যাঁরা রয়েছেন, আতঙ্কে ভুগছেন। এমনই এক জন বসিরহাটের গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘যা মশা কামড়ায়, ভয় লাগছে আবার ডেঙ্গি না হয়!’’
রাজ্য জুড়ে যখন ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালানো হচ্ছে, তখন সরকারি হাসপাতালের এই বেহাল দশা কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। স্বাস্থ্য ভবন থেকে সেটা দেখা সম্ভব নয়। তবে, রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে যদি নির্দিষ্ট অভিযোগ স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়ে, তা হলে সেটা নিশ্চয়ই গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা হবে। দরকার হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy