Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মা জানতে পারেননি, পাড়ার দোকানে দগ্ধ মেয়ে

গোটা পাড়া লোকে লোকারণ্য। দাউ দাউ আগুনে পুড়তে থাকা বাড়িটার চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ আর দমকল। পাড়ার লোকজনও ব্যস্ত দমকলকে সাহায্য করতে। হইচইয়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল মায়ের কান্না। মা ছোটাছুটি করে খোঁজ করছিলেন তাঁর আঠারো ছুঁইছুঁই মেয়ের।

রমা তালুকদার

রমা তালুকদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০০:৫১
Share: Save:

গোটা পাড়া লোকে লোকারণ্য। দাউ দাউ আগুনে পুড়তে থাকা বাড়িটার চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ আর দমকল। পাড়ার লোকজনও ব্যস্ত দমকলকে সাহায্য করতে। হইচইয়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল মায়ের কান্না। মা ছোটাছুটি করে খোঁজ করছিলেন তাঁর আঠারো ছুঁইছুঁই মেয়ের। এ ভাবেই প্রায় ঘণ্টা তিনেক পার হওয়ার পরে সম্বিত ফিরল সকলের। জানা গেল, সেই মহিলারই ছোট মেয়ে পুড়ে মারা গিয়েছে ওই জ্বলন্ত বাড়িটির মধ্যে। পুড়ে যাওয়া বাড়িটির মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যেই থাকেন ওই মহিলা।

দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের কাছে নতুন বাজার এলাকার এক বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে আগুন লাগে। বাড়িটির সামনের অংশে ফাস্ট ফুডের দোকান। আগুনে পুড়ে রমা তালুকদার (১৮) নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রমা। ঘটনার আগে ওই দোকানে চাউমিন কিনতে গিয়েছিলেন রমা। এই ঘটনায় অগ্নিবিধি না মানার অভিযোগে দোকান-মালিকের ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

দমদম থানার পুলিশ জানিয়েছে, সাড়ে ৮টা নাগাদ রমা চাউমিন কিনতে যান। কিছু পরেই বাড়িটিতে আগুন লাগে। দোকানের পাশেই একটি খুপরি ঘরে খাটে শোয়া অবস্থায় রমার দেহ মেলে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ বলেন, ‘‘মেয়েটির দেহ কেন খাটে শোয়ানো ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাঁদের বাড়ি তাঁরা বেরিয়ে গেলেন, আর দোকানে গিয়ে কেন মেয়েটি আটকে পড়ল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

কার্যত চোখের উপরে ঘটা যাওয়া এই ঘটনা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না তালুকদার পরিবার। বিশেষত রমার মা তৃপ্তিদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির কয়েক হাতের মধ্যে মেয়েটা এ ভাবে পুড়ে মারা গেল। বলল চাউমিন কিনতে যাচ্ছে। খানিক পরেই শুনলাম ওই বাড়িটায় আগুন লেগেছে। তার পরেই ফোন করি। কিন্তু মেয়ের ফোন তখন বন্ধ।’’

তৃপ্তিদেবী বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কেউ আমার কথায় কান দিল না। পুলিশ বাড়িটার দিকে এগোতে দিল না। ভিড়ের মধ্যে কেউ বলল মেয়ে কারও সঙ্গে পালিয়েছে কি না খোঁজ করতে। আমি অনেককে বলতে চেয়েছিলাম মেয়ে ওই বাড়িতে গিয়েছিল। কেউ দেখেছে কি না।’’

তৃপ্তিদেবীর স্বামী গোবিন্দবাবু আন্দামানে চাকরি করেন। দুই মেয়েকে নিয়ে নতুন বাজার এলাকার চিলতে ঘরেই থাকেন তৃপ্তিদেবী। তিনি জানান, যে বাড়িটিতে ওই অগ্নিকাণ্ড হয়, সেটির মালিক অতুল রায়ের কাছেও তিনি মেয়ের খোঁজ করেন। তৃপ্তিদেবী বলেন, ‘‘অতুল আমায় বলল রমা নাকি গ্যাস লিক করছে বুঝতে পেরে ওকে ঘর থেকে বার করে দিয়েছে। রমাও বেরিয়ে গিয়েছে।’’

দমকল জানায়, দোকান লাগোয়া একটি খুপরি ঘরে চৌকির উপরে উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় রমার দেহ পাওয়া যায়। রান্না করতে গিয়েই আগুন লেগেছিল বলেই প্রাথমিক তদন্তের পরে দাবি দমকল বিভাগের। বুধবার ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায় যে ঘরে রমার দেহ পাওয়া গিয়েছে সেটির ভিতরে একটি ভস্মীভূত স্কুটারও রয়েছে। আগুনে পুড়ে সেটির তেলের ট্যাঙ্কটিও ফেটে গিয়েছে।

অতুলবাবুরা তাঁদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে জানান তৃপ্তিদেবী। তবে সেই আত্মীয়দের সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখছেন না রমার মা। তাই ঘটনায় রহস্য রয়েছে বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘ওই বাড়ির সকলে বেরিয়ে এল। অথচ আমার মেয়েকে কেউ দেখল না। ও তো চাউমিন কিনতে গিয়েছিল। ওর দেহ খাটের উপরে কী করে গেল। আমি তদন্ত চাই।’’

ভস্মীভূত বাড়িতে অতুলবাবুকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ভাগ্নে বলেন, ‘‘মামা অসুস্থ। এখানে নেই। রমা আমাদের আত্মীয়। ও এলে ঘরেই বসতে বলা হত। শুনেছি ও নাকি নিজের মোবাইলটি ঘর থেকে বের করতে গিয়ে বেরোতে পারেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE