Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যুর আগের রাতেও মার বধূকে: পুলিশ

পণের জন্য বারবার মারধর করা হত তিলজলা রোডের বাসিন্দা নাজিয়া ফাইজাকে। স্বামীর বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ নিয়ে গত এক বছরে দু’বার পুলিশের দ্বারস্থও হয়েছিলেন নাজিয়া।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০০
Share: Save:

পণের জন্য বারবার মারধর করা হত তিলজলা রোডের বাসিন্দা নাজিয়া ফাইজাকে। স্বামীর বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ নিয়ে গত এক বছরে দু’বার পুলিশের দ্বারস্থও হয়েছিলেন নাজিয়া। কিন্তু অভিযোগ দায়ের করতে না চাওয়ায় পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে লালবাজারের দাবি। মৃত্যুর আগের রাতেও নাজিয়াকে ব্যাপক মারধর করেছিল তাঁর স্বামী। নাজিয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই তথ্য হাতে এসেছে বলে দাবি পুলিশের।

নাজিয়ার মৃত্যুর পরে এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। তাঁকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ঘটনার পরেই নাজিয়ার স্বামী আব্দুল ওরফে রিন্টুকে গ্রেফতার করা হলেও এখনও অধরা বাকি ছয় অভিযুক্ত। তাই নাজিয়ার পরিবারের তরফে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই নাজিয়ার মা মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে পরিবার সূত্রের খবর। নাজিয়ার পরিবারের আইনজীবী ফজলে আহমেদ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিষয়েও আদালতের দৃষ্টি আর্কষণ করা হবে।

লালবাজার সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুরে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিয়াকে। ওই দিন বিকেলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরেই নাজিয়ার মা শমিম বানু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। শুক্রবার রাতেই তিনি তিলজলা থানায় রিন্টু এবং তাঁর মা-বাবার বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সোমবার রিন্টুর দুই বোন-সহ চার জনের বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ আনেন শমিম বানু।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার ঘটনার আগের রাতে নাজিয়ার সঙ্গে রিন্টুর মোবাইল ফোন নিয়ে গোলমাল হয়। ওই সময়ে রিন্টু নাজিয়াকে ব্যপাক মারধর করে বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, বিয়ের পর থেকেই রিন্টু পণের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত নাজিয়ার উপরে। মোবাইলে কথা বলা নিয়ে গোলমাল সেটাই আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের অনুমান। ধৃতকে জেরা করার পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আগে দু’বার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নাজিয়া। কিন্তু কোনও বারই তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চাননি বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মোবাইল নিয়ে গোলামালের পরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরেই শুক্রবার দুপুরে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নাজিয়াকে।

পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক অনুমান, শৌচাগারের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন নাজিয়া। তবে আগুন লাগানো হয়েছে না ওই বধূ নিজেই গায়ে আগুন দিয়েছেন, তা নিয়ে কিছু বলেননি ওই বিশেষজ্ঞেরা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শৌচাগার থেকে বিভিন্ন নমুনার ফরেন্সিক রিপোর্ট আসার আগে বলা সম্ভব নয় ঘটনাটি খুন, না আত্মহত্যা। অন্য দিকে পুলিশ জানায়, রিন্টুর দাবি, ঘটনার সময়ে সে ছেলেকে নিয়ে অন্য ঘরে ছিল। কিছু পোড়ার গন্ধ পেয়ে সে নাজিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, ধৃত রিন্টু অনেক তথ্যই গোপন করছে। তাই পরিবারের বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সামনাসামনি বসিয়ে জেরা করলেই পুরো ঘটনা পরিষ্কার হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nazia faiza
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE